‘ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ভালো করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মূল্যবোধ। মূল্যবোধ না থাকলে বেশি দূর এগোনো কঠিন।’

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে এই পরামর্শ দেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। পর্বটি প্রচার হয় শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

সঞ্চালক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হক অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানতে চান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে।

উত্তরে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার এক বড় ভাই ছিলেন, যিনি জিওলজি (ভূ-তত্ত্ব) নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তাঁকে দেখতাম খনিজ, পেট্রোলিয়ামসহ নানা কিছু নিয়ে কাজ করতে। তাঁকে দেখে আমারও এই বিষয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ তৈরি হয়। ফলে কলেজে আমি চতুর্থ বিষয় হিসেবে জীববিজ্ঞানের পরিবর্তে জিওলজি নিয়েছিলাম। অবশ্য এর পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে, আমি আসলে মেডিকেলের দিকে এগোতে চাইনি। তাই আমার বাবা-মা যেন পরবর্তীতে আমাকে সেদিকে না যেতে বলেন, সে জন্যই এই কাজটি করেছিলাম।’

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘কলেজের পড়াশোনা শেষ করে বুঝতে পারি, আমাদের দেশে আসলে জিওলজি নিয়ে কাজ করার সুযোগ বেশ কম। আমরা কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে বসি। যেহেতু আমরা মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো দিকেই যাব না, তাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প ছিল আইবিএ। পরবর্তীতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আইবিএতে ভর্তি হই।’

কর্মজীবন শুরুর প্রসঙ্গে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে পারটেক্স গ্রুপের এম এ হাশেম আমাকে ভালো কোনো চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কাজ করতে বলেন। আমিও রাজি হয়ে যাই। কারণ আমার মনে হয় বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে কাজ করা ভালো। আর এখানে কাজ করে আমি অনেক জানার ও শেখার সুযোগ পাই।’

ক্যারিয়ারে মূল্যবোধ, নীতি আর সততা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি ধাপেই এই নীতিগত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি সাময়িক চিন্তাভাবনা করেন তবে সেটি ভিন্ন কথা। তবে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে চাইলে অবশ্যই মূল্যবোধ, নীতি আর সততা থাকতেই হবে। আমাদের সমাজে যে সমস্যাগুলো এখন দেখা দিচ্ছে সেগুলো মূলত এই মূল্যবোধের ঘাটতির কারণেই।’

মূল্যবোধের যে অবক্ষয়, এটি ব্যাংকিং খাতে কেমন প্রভাব ফেলেছে? জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক তো আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। সমাজে যখন অবক্ষয় ছড়িয়ে যায়, তখন এটি সব জায়গায় প্রভাব ফেলে। যেসব ব্যাংকে গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে কোনো সুশাসন ছিল না, সেই ব্যাংকগুলোকে এখন ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু যে ব্যাংকগুলোতে মূল্যবোধ আর সুশাসন বজায় ছিল, সেগুলো কিন্তু এখনো ঠিকভাবেই চলছে।

আরও পড়ুন শূন্য থেকে ড্যাফোডিল গ্রুপ গড়ে তোলার গল্প শোনালেন সবুর খান১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্যাংকে গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে করণীয় সম্পর্কে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক মূলত গ্রাহকের জমা অর্থ ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন করে এবং পরে সেই অর্থ আবার গ্রাহককে ফেরত দেয়। কিন্তু যখন গ্রাহক নিজের জমা টাকা চাইলে উত্তোলন করতে পারেন না, তখনই ব্যাংকের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়। এগুলো এড়িয়ে চললেই গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব।

এরপর সঞ্চালক জানতে চান, ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আপনি বোর্ডকে কীভাবে মোকাবিলা করেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রধান দায়িত্ব হলো বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা। আমি সেটিই করে থাকি। বোর্ড মূলত নীতিমালা প্রণয়ন করে, আর আমরা তাঁদের কাছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করি। কোথায় কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে—এসব বিষয়ে প্রতিটি বৈঠকে তাঁদের অবহিত রাখি। তবে নির্বাহী পর্যায়ে যা ঘটে, সেসব থেকে বোর্ড দূরেই থাকে।’

ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে সংকটগুলো চলছে, এরপরও তরুণেরা কেন এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে আসবে? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আশা রাখতে হবে। কারণ প্রতিটি সংকটের মধ্যেই নতুন সুযোগ লুকিয়ে থাকে। এসব সংকটের কারণে অনেকে মনে করতে পারেন ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ারের সুযোগ সীমিত। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি একেবারেই তা নয়। বরং ব্যাংকিং সেক্টর তরুণদের জন্য একটি সুগঠিত ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্র। এখানে ক্যারিয়ারে খুব দ্রুত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।’

আলোচনার শেষ পর্যায়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে টিকে থাকতে হলে সর্বপ্রথম স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে, যেহেতু আমরা একটি গ্লোবাল ভিলেজের অংশ, তাই নতুন যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। এ ছাড়া এই খাতে সফল হতে হলে দরকার সাহস, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস। আর কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প কোনো নেই। মেধার চেয়ে এখানে কঠোর পরিশ্রম বেশি জরুরি।’

আরও পড়ুনপারিবারিক ব্যবসাকে শীর্ষ কনগ্লোমারেটে পরিণত করার গল্প শোনালেন নিয়াজ রহিম১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ক জ কর গ র হক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাহবুবুর রহমান ওরফে মাসুম (৩৯) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে ‘চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেল’ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মাহবুবুর রহমান শহরের পলাশপাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকার অদূরে সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ পান করে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি মারা যান বলে পুলিশের ভাষ্য।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মাহবুবুর রহমান তিন দিন ধরে হোটেলে অবস্থান করছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মদপান করে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি মারা যান। তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) খবর দেওয়া হয়েছে।

নিহতের চাচা লাবলু রহমান বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে মাহবুবুর বিবাহিত। তাঁর আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। ঢাকার সাভারে একটি কারখানায় চাকরির সুবাদে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের পলাশপাড়ায় নিজস্ব বাড়িটি তালাবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় এলেও আমাদের জানা ছিল না। সকালে খবর পেয়ে হোটেলে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
  • শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব
  • চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার