প্যাসিফিক জিনসের সাত কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
Published: 17th, October 2025 GMT
অনির্দিষ্টকালের জন্য নিজেদের সাতটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশে পোশাক রপ্তানি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ। শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশ না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নানা বিষয়কে কেন্দ্র গত এক বছরে অন্তত তিনবার প্যাসিফিক জিনসের কারখানায় শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের সই করা পৃথক আটটি বিজ্ঞপ্তিতে কারখানা বন্ধের তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কারখানার মধ্যে কিছু শ্রমিক কাজে যোগদান না করে কারখানা ভেতরে মারামারি, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এতে কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।’
বন্ধের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘কিছু শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ বন্ধ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। মারামারি ও ভাঙচুরে কারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা আহত হন এবং প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এটি অবৈধ ধর্মঘটের শামিল। এ অবস্থায় শ্রম আইন অনুযায়ী, কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা রয়েছে। সেগুলো হলো প্যাসিফিক জিনস, জিনস ২০০০, ইউনিভার্সেল জিনস, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক এক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স। এর মধ্যে প্যাসিফিক জিনসের ইউনিট দুটি ও ইউনিভার্সেল জিনসের ইউনিট চারটি।
পুলিশ জানায়, শ্রম আইনের ১৩(ক) ধারা অনুযায়ী, কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, বেআইনি ধর্মঘটের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক চাইলে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারবেন। যত দিন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকেরা তত দিন কোনো বেতন পাবেন না। শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘিরেই কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। সাত কারখানায় মোট শ্রমিক ৩৫ হাজারের বেশি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কারখানা বন্ধের চিঠি পেয়েছি। কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ ঝামেলা আছে। বাইরে থেকে শ্রমিকদের কোনো ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১ লাখ কোটি টাকার পারিবারিক ব্যবসাও সামলান এই তারকা-পত্নী
দক্ষিণী সিনেমার মেগাস্টার রাম চরণ। ২০১২ সালে ১৪ জুন উপাসনার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি। বিয়ের ১০ বছর পর প্রথম সন্তানের বাবা-মা হন এই দম্পতি। আবারো জমজ সন্তানের বাবা-মা হতে যাচ্ছেন তারা। কয়েক দিন আগে আইআইটি হায়দরাবাদে ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিয়ে মন্তব্য করার পর কটাক্ষের শিকার হন উপাসনা, তৈরি হয় বিতর্ক। সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন উপাসনা। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই তারকা-পত্নী।
রাম চরণের স্ত্রী উপাসনার আরেক পরিচয় তেলুগু চলচ্চিত্রের মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর পুত্রবধূ। রাম চরণ রুপালি পর্দার ‘রাজা’ হলে ব্যবসার ‘রানি’ উপাসনা। তারকা-পত্নী হওয়ার পাশাপাশি তার নিজস্ব একটি পরিচয়ও রয়েছে। বেসরকারি অ্যাপোলো হাসপাতালের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ভাইস চেয়ারপার্সন উপাসনা। পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত। নারী ও শিশুদের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা
ধানুশ-কৃতির সিনেমার আয় ১৩৬ কোটি টাকা
পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উপাসনার যোগসূত্র। ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রতাপচন্দ্র রেড্ডির নাতনি। ৭৭ হাজার কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার বেশি) ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী উপাসনা। তার মা শোবনা কামিনেনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারপার্সন। প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা হলেন উপাসনা।
হায়দরাবাদে স্কুল জীবনের পাঠ শেষ করেন উপাসনা। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন এই মেধাবী ছাত্রী। তারপর দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন উপাসনা। পারিবারিক ব্যবসার বৃত্ত ছেড়ে উপাসনার প্রভাব গণমাধ্যমে বিস্তৃত। একটি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক উপাসনা। নারীদের স্বাস্থ্য-সুস্থতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন।
উপাসনার কর্মযজ্ঞ এখানেই শেষ নয়। একটি বীমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। উপাসনার বাবা অনিল কামিনেনির সংস্থারও দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে। এমনকি, তার শাশুড়ি, রাম চরণের মা সুরেখা কোনিদেলার খাবারের ব্যবসার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন উপাসনা। অর্থাৎ হেঁশেল থেকে স্বাস্থ্য, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ উপাসনার।
একটি বিশেষ উদ্যোগের সঙ্গে উপাসনার নাম জড়িয়ে আছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারতজুড়ে ১৫০টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম দত্তক নিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিবারের এই কন্যা। শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, এসব বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যরা যাতে সঠিক আদর-যত্ন পান সেদিকেও খেয়াল রাখেন উপাসনা। জীবন সায়াহ্নের এই মানুষগুলো যাতে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেটাই টার্গেট বলে জানিয়েছেন উপাসনা।
উপাসনার নানু ডা. প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি একজন ধনকুবের। ১৯৮৩ সালে অ্যাপোলো হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ৫০ বছর বয়েসি প্রতাপচন্দ্রের হাত ধরে। ভারতের প্রথম ৫০ জন শিল্পপতির তালিকায় নাম লেখান প্রতাপচন্দ্র। হাসপাতাল ছাড়াও ২১টি ভিন্ন সংস্থা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের ছাতার নিচে। পাঁচ হাজার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ২৯১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, ডিজিটাল হেলথ পোর্টালও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।
বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে প্রতাপচন্দ্র পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের কন্যাদেরও ব্যবসার কাজ বুঝিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র। তা চার কন্যাই প্রতিষ্ঠানটির উঁচু পদে রয়েছেন। প্রতাপচন্দ্রের এক কন্যা শোবনার মেয়ে উপাসনা এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
কলেজ জীবন থেকেই একে অপরকে চিনতেন রাম চরণ ও উপাসনা। বন্ধু মহলে তারা ছিলেন আলোচিত। অম্ল-মধুর সম্পর্কে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এরপর এক সময় রাম চরণ দেশের বাইরে যান। তখন পরস্পরের সঙ্গ মিস করতেন তারা। সবাই ধরেই নিয়েছিল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন দু’জন। কিন্তু তখনও পরস্পরকে বন্ধুই ভাবতেন তারা। রাম চরণের ‘মাগাধীরা’ সিনেমাটি মুক্তির পরই মূলত উপাসনার সঙ্গে এই অভিনেতার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। দু’জনের পরিবারের মধ্যে বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল, এজন্য বিয়ে নিয়েও কোনো ঝামেলা হয়নি।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের টেম্পল ট্রি ফার্মসে রাম চরণ ও উপাসনার বাগদান হয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনে ছিলেন দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের বাগদান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে বেশ উন্মাদনা ছিল। তাকে নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতিতে বেশ বিব্রত ছিলেন উপাসনা। তবে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন রাম চরণ। ২০১২ সালের ১৪ জুন পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতিতে এই জুটির বিয়ে ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের পর যৌথ সিদ্ধান্তে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেন রাম চরণ-উপাসনা। এই ডিম্বাণু থেকেই তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন উপাসনা।
উপাসনার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৩০ কোটি রুপি। রাম চরণের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭০ কোটি রুপি। রাম চরণ-উপাসনার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। এই দম্পতির হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে, যার দাম ৩০ কোটি রুপি। বিলাসবহুল বাংলোতে রয়েছে—সুইমিং পুল, একটি টেনিস কোর্ট, একটি বিশাল মন্দির, একটি জিমনেশিয়াম। তাছাড়া মুম্বাইয়ের একটি পেন্টহাউজের মালিকানাও রয়েছে রাম চরণ-উপাসনার।
ঢাকা/শান্ত