Prothomalo:
2025-10-17@11:24:32 GMT

সবর বা ধৈর্য জীবনের আশ্রয়স্থল

Published: 17th, October 2025 GMT

মানুষের জীবন দুঃখ ও আনন্দের বৃত্তে আবর্তমান। দুঃসময়ে ‘সবর’ হয়ে ওঠে জীবনের আশ্রয়স্থল। সবরের সাধারণ বাংলা ধৈর্য বা সহনশীলতা। বাংলা প্রবাদে আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য কেবল দুঃসময়ে নয়, বরং মানুষের জীবনের অগ্রগতির জন্যও অপরিহার্য।

এটি এমন একটি গুণ, যা ছাড়া মানুষের আত্মিক ও জাগতিক উন্নতি সম্ভব নয়। ধৈর্য ছাড়া মানুষ ব্যক্তিজীবনে সুখ লাভ করতে পারে না, সমাজও সমৃদ্ধ হতে পারে না।

ধৈর্য: কোরআনে বর্ণিত মহৎ গুণ

কোরআনে ধৈর্যকে একটি মহৎ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.

) তাঁর ইহইয়া উলুমুদ্দিন গ্রন্থে বলেছেন, মহান আল্লাহ কোরআনে প্রায় সত্তরেরও অধিকবার ধৈর্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) তাঁর মাদারিজুস সালিকিন গ্রন্থে ইমাম আহমদের একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন, যেখানে ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘কোরআনে ধৈর্যের উল্লেখ প্রায় নব্বই স্থানে এসেছে। ধৈর্য ছাড়া আমরা এমন কোনো বিষয় জানি না, যেটিকে মহান আল্লাহ এতবার উল্লেখ করেছেন।’

কোরআনে ধৈর্যের এতবার উল্লেখ মানবজীবনে এর গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা প্রকাশ করে। মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গী বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬)

রাসুল (সা.)-এর জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই ধৈর্যের পরীক্ষায় পূর্ণ। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে লোকদেরকে হেদায়াতের পথে ডেকেছেন, কাফেরদের জুলুমের ওপর ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং দাওয়াতের পথে অবিচল থেকেছেন।

রাসুল (সা.) ধৈর্য ধারণের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য দান করেন। আর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও বিস্তৃত কোনো দান কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৮৪)

আরও পড়ুনধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা১৩ জুলাই ২০২৫তাকদিরের ওপর ধৈর্য ধারণ

ধৈর্য বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। এটি যেমন বিপদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি, আল্লাহর আনুগত্য ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে।

বিপদে ধৈর্য ধারণ করা ধৈর্যের অন্যতম রূপ। একজন মুসলিমের ইচ্ছার বাইরে যা ঘটে, তিনি তাতে ধৈর্য ধারণ করেন, কারণ এটি দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মহান আল্লাহ এ ধরণের ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

কোরআনে ধৈর্যের উল্লেখ প্রায় নব্বই স্থানে এসেছে। ধৈর্য ছাড়া আমরা এমন কোনো বিষয় জানি না, যেটিকে মহান আল্লাহ এতবার উল্লেখ করেছেন।ইমাম আহমদ (রহ.)

পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ এমন নির্দেশও দিয়েছেন, যা বান্দাকে বিপদের সময়ে ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে—নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

আল্লাহর ওপর নির্ভর করা ও তাঁর প্রতিদানের আশা রাখাও ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত। একজন মুমিন আল্লাহর বিধানে সন্তুষ্ট থাকে; তার মধ্যে কোনো অসন্তোষ বা অভিযোগ প্রকাশ পায় না। সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সবার তাকদির জানেন এবং তাতে নিহিত আছে অগাধ প্রজ্ঞা।

আরও পড়ুনকঠিন সময়ে রবের আশ্বাস১৫ অক্টোবর ২০২৫আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ

আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ ধৈর্যের সর্বোচ্চ স্তরগুলোর একটি। এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং নিজের সঙ্গে সততার পরিচয় বহন করে। আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধরতে হলে নিজের নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয় এবং তাকে ইবাদতে বাধ্য করতে হয়। আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যের ধাপ তিনটি:

১️. ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া।

২️. বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে ইবাদত পালন করা।

৩️. লোকদেখানো বা খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত থেকে ইবাদত সম্পন্ন করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছ থেকে কোনো রিজিক চাই না; আমি-ই আপনাকে রিজিক দিই। আর পরিণাম হবে তাকওয়াবানদের জন্যই।’ (সুরা ত্ব-হা, আয়াত ১৩২)

পাপাচার থেকে বিরত থাকার ধৈর্য

একজন মুসলিম তখনই প্রকৃত ধৈর্যশীল হয়, যখন সে নিজেকে পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। সে হারাম কামনা-বাসনা থেকে দূরে থাকে। সর্বদা তাকওয়া ও আখিরাতের ভয় মনে জাগিয়ে রাখে এবং নিজের নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করে যেন পাপের প্রতি আকৃষ্ট না হয়।

তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬

পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্যের ধাপও তিনটি:

১. হৃদয় থেকে পাপের প্রতি আকর্ষণ দূর করা এবং পাপীদের সঙ্গ ত্যাগ করা।

২. পাপ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সংযত রাখা, পাপের নিকটবর্তী না হওয়া।

৩️. কোনোভাবে পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে দ্রুত অনুতপ্ত হওয়া ও তাৎক্ষণিক তওবা করা।

ধৈর্যের মর্যাদা

কোরআনে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন— ‘তাদেরই জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দোয়া, রহমত এবং তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৭)

আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান অগণিতভাবে পূর্ণরূপে দেওয়া হবে।’ (সুরা যুমার, আয়াত: ১০)

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ধৈর্যশীলগণ আল্লাহর ভালোবাসার যোগ্য, ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৬)

কেবল দুনিয়ার জীবনে নয়, বরং আখেরাতের সফলতার জন্যও ধৈর্য অন্যতম শর্ত। মুমিন ব্যক্তি তার মাধ্যমে জীবনকে সহজ করে নেন এবং আল্লাহর নিকট মর্যাদা লাভ করেন।

আরও পড়ুনতথাকথিত পৌরুষের বদলে ইসলাম থেকে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ১০ উপায়২৭ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উল ল খ ন শ চয়ই জ বন র র জ বন পর ক ষ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড কি ব্যর্থ, কী বললেন স্যামি

প্রশ্নটা বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলেন ড্যারেন স্যামি। তবু শুরুতে বললেন, ‘আপনার প্রশ্নটা বোঝার চেষ্টা করছি…।’

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে স্যামি যে প্রশ্নটা ‘বোঝার চেষ্টা’ করছিলেন, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে। এটি আইসিসির একমাত্র পূর্ণ সদস্য, যা একক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ নিয়ে গড়ে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠে ও মাঠের বাইরের বিষয়ে যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণা’টা ব্যর্থ কি না—এমন প্রশ্নই ছিল স্যামির কাছে।

৪১ বছর বয়সী স্যামি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন এক দশক, অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এখন একই দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। এই সময়ে এসে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের’ ধারণাটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আবেগাপ্লুত স্যামি উত্তর দিলেন এভাবে—‘আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধারণাটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এটারই (সাফল্যের) প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আগেও বলেছি, যখন আমরা আধিপত্য দেখিয়েছি, সবাই চেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলুক। সব দলই একটা (ভালো ও খারাপ) সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, আমরা এখন যাচ্ছি (খারাপটা)।’

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ১০টি দেশ ও ৫টি অঞ্চলের ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নামে খেলেন। এখন দেশগুলোকে ভাগ করে দিয়ে আইসিসির সদস্য করার কথা উঠছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে যাওয়া ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা নাকি ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ নামের প্রতি ‘টান’ অনুভব করেন না।

আরও পড়ুনছবির গল্পে লালবাগ কেল্লায় ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন৫ ঘণ্টা আগে

এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই ওয়ানডে সংস্করণের প্রথম দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, দুবার জিতেছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ’৭০ থেকে ’৯০ এর দশকে এই দলটি ছিল টেস্ট ও ওয়ানডের প্রতাপশালী দল।

আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্যামির কথায় উঠে এল ক্যারিবীয় দলের ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণাটা কখনো ব্যর্থ হবে না। আমি জানি, খেলাটাতে আমরা কত ইতিহাস গড়েছি। একটা সফল ব্র্যান্ড হতে গেলে কী লাগে তা আমি বুঝি। সেটাই এই প্রজন্ম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ফেরানোর চেষ্টা করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি ও অধিনায়ক শাই হোপ

সম্পর্কিত নিবন্ধ