Prothomalo:
2025-12-03@07:54:18 GMT

সবর বা ধৈর্য জীবনের আশ্রয়স্থল

Published: 17th, October 2025 GMT

মানুষের জীবন দুঃখ ও আনন্দের বৃত্তে আবর্তমান। দুঃসময়ে ‘সবর’ হয়ে ওঠে জীবনের আশ্রয়স্থল। সবরের সাধারণ বাংলা ধৈর্য বা সহনশীলতা। বাংলা প্রবাদে আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য কেবল দুঃসময়ে নয়, বরং মানুষের জীবনের অগ্রগতির জন্যও অপরিহার্য।

এটি এমন একটি গুণ, যা ছাড়া মানুষের আত্মিক ও জাগতিক উন্নতি সম্ভব নয়। ধৈর্য ছাড়া মানুষ ব্যক্তিজীবনে সুখ লাভ করতে পারে না, সমাজও সমৃদ্ধ হতে পারে না।

ধৈর্য: কোরআনে বর্ণিত মহৎ গুণ

কোরআনে ধৈর্যকে একটি মহৎ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.

) তাঁর ইহইয়া উলুমুদ্দিন গ্রন্থে বলেছেন, মহান আল্লাহ কোরআনে প্রায় সত্তরেরও অধিকবার ধৈর্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) তাঁর মাদারিজুস সালিকিন গ্রন্থে ইমাম আহমদের একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন, যেখানে ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘কোরআনে ধৈর্যের উল্লেখ প্রায় নব্বই স্থানে এসেছে। ধৈর্য ছাড়া আমরা এমন কোনো বিষয় জানি না, যেটিকে মহান আল্লাহ এতবার উল্লেখ করেছেন।’

কোরআনে ধৈর্যের এতবার উল্লেখ মানবজীবনে এর গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা প্রকাশ করে। মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গী বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬)

রাসুল (সা.)-এর জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই ধৈর্যের পরীক্ষায় পূর্ণ। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে লোকদেরকে হেদায়াতের পথে ডেকেছেন, কাফেরদের জুলুমের ওপর ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং দাওয়াতের পথে অবিচল থেকেছেন।

রাসুল (সা.) ধৈর্য ধারণের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য দান করেন। আর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও বিস্তৃত কোনো দান কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৮৪)

আরও পড়ুনধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা১৩ জুলাই ২০২৫তাকদিরের ওপর ধৈর্য ধারণ

ধৈর্য বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। এটি যেমন বিপদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি, আল্লাহর আনুগত্য ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে।

বিপদে ধৈর্য ধারণ করা ধৈর্যের অন্যতম রূপ। একজন মুসলিমের ইচ্ছার বাইরে যা ঘটে, তিনি তাতে ধৈর্য ধারণ করেন, কারণ এটি দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মহান আল্লাহ এ ধরণের ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

কোরআনে ধৈর্যের উল্লেখ প্রায় নব্বই স্থানে এসেছে। ধৈর্য ছাড়া আমরা এমন কোনো বিষয় জানি না, যেটিকে মহান আল্লাহ এতবার উল্লেখ করেছেন।ইমাম আহমদ (রহ.)

পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ এমন নির্দেশও দিয়েছেন, যা বান্দাকে বিপদের সময়ে ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে—নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

আল্লাহর ওপর নির্ভর করা ও তাঁর প্রতিদানের আশা রাখাও ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত। একজন মুমিন আল্লাহর বিধানে সন্তুষ্ট থাকে; তার মধ্যে কোনো অসন্তোষ বা অভিযোগ প্রকাশ পায় না। সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সবার তাকদির জানেন এবং তাতে নিহিত আছে অগাধ প্রজ্ঞা।

আরও পড়ুনকঠিন সময়ে রবের আশ্বাস১৫ অক্টোবর ২০২৫আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ

আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ ধৈর্যের সর্বোচ্চ স্তরগুলোর একটি। এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং নিজের সঙ্গে সততার পরিচয় বহন করে। আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধরতে হলে নিজের নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয় এবং তাকে ইবাদতে বাধ্য করতে হয়। আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যের ধাপ তিনটি:

১️. ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া।

২️. বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে ইবাদত পালন করা।

৩️. লোকদেখানো বা খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত থেকে ইবাদত সম্পন্ন করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছ থেকে কোনো রিজিক চাই না; আমি-ই আপনাকে রিজিক দিই। আর পরিণাম হবে তাকওয়াবানদের জন্যই।’ (সুরা ত্ব-হা, আয়াত ১৩২)

পাপাচার থেকে বিরত থাকার ধৈর্য

একজন মুসলিম তখনই প্রকৃত ধৈর্যশীল হয়, যখন সে নিজেকে পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। সে হারাম কামনা-বাসনা থেকে দূরে থাকে। সর্বদা তাকওয়া ও আখিরাতের ভয় মনে জাগিয়ে রাখে এবং নিজের নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করে যেন পাপের প্রতি আকৃষ্ট না হয়।

তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬

পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্যের ধাপও তিনটি:

১. হৃদয় থেকে পাপের প্রতি আকর্ষণ দূর করা এবং পাপীদের সঙ্গ ত্যাগ করা।

২. পাপ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সংযত রাখা, পাপের নিকটবর্তী না হওয়া।

৩️. কোনোভাবে পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে দ্রুত অনুতপ্ত হওয়া ও তাৎক্ষণিক তওবা করা।

ধৈর্যের মর্যাদা

কোরআনে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন— ‘তাদেরই জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দোয়া, রহমত এবং তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৭)

আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান অগণিতভাবে পূর্ণরূপে দেওয়া হবে।’ (সুরা যুমার, আয়াত: ১০)

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ধৈর্যশীলগণ আল্লাহর ভালোবাসার যোগ্য, ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৬)

কেবল দুনিয়ার জীবনে নয়, বরং আখেরাতের সফলতার জন্যও ধৈর্য অন্যতম শর্ত। মুমিন ব্যক্তি তার মাধ্যমে জীবনকে সহজ করে নেন এবং আল্লাহর নিকট মর্যাদা লাভ করেন।

আরও পড়ুনতথাকথিত পৌরুষের বদলে ইসলাম থেকে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ১০ উপায়২৭ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উল ল খ ন শ চয়ই জ বন র র জ বন পর ক ষ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

একঝলক (৩ ডিসেম্বর ২০২৫)

ছবি: মং হাই সিং মারমা

সম্পর্কিত নিবন্ধ