জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার নিন্দা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
Published: 18th, October 2025 GMT
জুলাই সনদের আইনি বৈধতাসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটি বলেছে, জুলাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের উপেক্ষা করে কিছু রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সনদে স্বাক্ষর করা জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার সঙ্গে চরম প্রতারণা।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এসব কথা বলেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজনে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই দিনের প্রথমার্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে জুলাই সনদের আইনি বৈধতাসহ কয়েকটি যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে চব্বিশের জুলাই যোদ্ধা আতিকুল গাজীসহ ২৭ জন গুরুতর আহত হন। একই সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য কর্তৃক জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগও উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, ‘২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে সহস্রাধিক শহীদ ও আহত যোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সেই সহস্রাধিক শহীদ ও আহত যোদ্ধার রক্তের বিনিময়েই আজকের বহুল আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দলিল “জুলাই সনদ”। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পূর্বে অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের ওপর হামলা কেবল নিন্দনীয়ই নয়; বরং এটি জুলাইয়ের রক্তের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত যোদ্ধা এবং ছাত্রপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, কেবল ‘জাতীয় ঐক্য’র নামে জুলাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের উপেক্ষা করে কিছু তথাকথিত রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সনদে স্বাক্ষর কার্যক্রম সম্পন্ন করা জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার সঙ্গে চরম প্রতারণা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা, ছাত্রপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজনদের) সঙ্গে বসেই যেন জুলাই সনদের আইনি বৈধতা এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট (দ্বিমত)’ সংক্রান্ত সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান অবিলম্বে নিশ্চিত করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ আহত য দ ধ ই সনদ র রক ত র র রক ত ত র জন
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে ১২ অক্টোবর আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ইউনেসকোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ কখনোই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষা বরাদ্দ দেয়নি। চব্বিশের গণ–আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ আগের চেয়েও কমিয়েছে। সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও সেখানে শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন নেই।
শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো (শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়) ইতিবাচক মনোভাব পোষণ না করলে তা নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে সতর্ক করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, শিক্ষক–কর্মচারীদের উত্থাপিত তিনটি দাবি ন্যায্য। অবিলম্বে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানায় শিক্ষকদের সংগঠনটি।
শিক্ষকদের তিনটি দাবি হলো মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানো।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবিদাওয়া বর্তমান সময়ের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনের জন্য অতি সামান্য বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আন্দোলনরত শিক্ষক–কর্মচারীদের প্রতি বৈষম্য চলছে উল্লেখ করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেখানে মূল বেতনের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পান, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকেরা হাজার টাকা বরাদ্দ পান।
এই ব্যবস্থাকে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি অবমাননা বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই ব্যবস্থা পুরো জাতির জন্য লজ্জাজনক। যার কারণে শিক্ষকেরা শিক্ষকতায় পূর্ণ মনোযোগী থাকতে পারেন না। প্রাইভেট পড়ানো-কোচিং থেকে শুরু করে দলীয় রাজনীতিসহ অন্যান্য অশিক্ষকসুলভ কাজে জড়াচ্ছেন।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চলতি অর্থবছরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০ শতাংশ বাড়ানোর নিশ্চয়তা প্রদান, চিকিৎসা ভাতা ন্যূনতম দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং তা পর্যায়ক্রমে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।