৯ বছর আগে যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার আলোকে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ সেটি এক গভীর হতাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ৪৩৬ একর জমি, বিপুল সরকারি বিনিয়োগ ও ২২টি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ—সবকিছু থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলটি এখনো কার্যত নিষ্ক্রিয়। ফারভেন্ট মাল্টিবোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান আংশিক উৎপাদনে গেলেও তার অবস্থাও করুণ। বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন নিয়মিত ব্যাহত হচ্ছে, যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। 

অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস করা। কিন্তু জামালপুরের বাস্তব চিত্র তার উল্টো। সরকারি ঘোষণা ও প্রচারের পর স্থানীয় মানুষ যেমন আশাবাদী হয়েছিলেন, এখন তেমনি তাঁরা নিদারুণ হতাশ। একসময় যে এলাকা শিল্পপ্রবাহে মুখর হওয়ার কথা ছিল, আজ সেটি নিস্তব্ধ ও জনশূন্য। 

প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবই তাদের মূল অন্তরায়। একদিকে বারবার লোডশেডিং, অন্যদিকে অঘোষিত বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্নতা—সব মিলিয়ে উৎপাদন পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ এই অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সময় বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার। সেই প্রতিশ্রুতি এখন কোথায়?

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবই এ স্থবিরতার মূল কারণ। প্রকল্প বাস্তবায়নের ৯ বছর পরও যদি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু না হয়, তবে তা নিছক প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—এটি পরিকল্পনার দূরদর্শিতার ঘাটতি ও বাস্তবায়নের অক্ষমতার প্রতিফলন।

এখন প্রয়োজন দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ। প্রথমত, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, বেজাকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা, সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। তৃতীয়ত, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সুস্পষ্ট সময়সূচি ও বাস্তবায়ন-রূপরেখা দিতে হবে।

জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু একটি স্থবির প্রকল্প নয়; এটি দেশের শিল্পনীতি ও আঞ্চলিক উন্নয়ন-কৌশলের একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। যদি এখানকার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া না হয়, তবে অন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও একই স্থবিরতা ছড়িয়ে পড়বে।

রাষ্ট্র যদি শিল্পায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চায়, তবে তাকে প্রথমেই নিজের অঙ্গীকারের প্রতি সৎ হতে হবে। উন্নয়নের স্লোগান নয়, এখন প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ, যাতে জামালপুরের শিল্পাঞ্চল সত্যিই ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ হয়ে উঠতে পারে; কেবল নামেই নয়, বাস্তব অর্থেই।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ১টি সেল কাউন্টার ও ২টি পোর্টেবল ইসিজি মেশিন দিলেন ডিসি

১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) নারায়ণগঞ্জে আগত ডেঙ্গু রোগীদের নির্ভুলভাবে প্লাটিলেট কাউন্টসহ অন্যান্য ব্লাড টেস্ট করতে জন্য ১টি সেল কাউন্টার ও ২টি পোর্টেবল ইসিজি মেশিন সরবরাহ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) “গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ” কর্মসূচির আওতায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে  এই দুটি আধুনিক যন্ত্র হস্তান্তর করেন তিনি।

পরে জেলা প্রশাসক হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপন করেন এবং হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ও মেঝেতে থাকা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রায় কোটি লোকের বসবাস। জেলার স্বাস্থ্যসেবায় অত্র হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মাসে লক্ষাধিক রোগী এই হাসপাতাল থেকো সেবা নিচ্ছে। তবে চিকিৎসক ও জনবল অপ্রতুল হওয়ায় কাঙ্খিত সেবা দেয়া যাচ্ছে না। আজকে এই হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ১টি সেল কাউন্টার ও ২টি পোর্টেবল ইসিজি মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।

এ সময় তিনি ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, রোগীরা যেন পূর্ণ মনোযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা পান, সেটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। 

ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “আগে আমাদের এখানে অটোমেটিক সিবিসি মেশিন ছিল না।

এখন আমরা আরও নির্ভুলভাবে প্লাটিলেট কাউন্টসহ অন্যান্য ব্লাড টেস্ট করতে পারব। এতে ডেংগু রোগীদের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে। পোর্টেবল ইসিজি মেশিনের মাধ্যমে সরাসরি রোগীর কাছে গিয়ে পরীক্ষা করা যাবে।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, “আমাদের হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও আমরা কাউকে ফেরত দিই না।

এই নতুন মেশিনগুলো আমাদের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। জেলা প্রশাসক শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই নয়, জেলার প্রতিটি বিভাগের বিষয়েও খুবই মনোযোগী এটাই একজন প্রকৃত জেলা প্রশাসকের বৈশিষ্ট্য।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাঈমা ইসলাম, সহকারী কমিশনার মো. তারিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হোয়াইট হাউজ থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • করপোরেটের ধাক্কায় নিতাইগঞ্জের ব্যবসায় মন্দা
  • সবজি-মাছের চড়া দাম, বাজারে নাভিশ্বাস অবস্থা
  • ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ১টি সেল কাউন্টার ও ২টি পোর্টেবল ইসিজি মেশিন দিলেন ডিসি
  • ভারতের কিছু শোধনাগার রাশিয়ার তেল কেনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে
  • ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খান
  • রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
  • যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
  • এক ছাতার নিচে ৪৮ ব্র্যান্ডের ফার্নিচার, ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়