জান্নাতে সবচেয়ে বড় নিয়ামত কী
Published: 18th, November 2025 GMT
জান্নাত—যেখানে নেই কষ্ট, নেই মৃত্যু, নেই দুঃখ বা হতাশা। মানুষ সেখানে পাবে সীমাহীন আনন্দ, অপার শান্তি ও চিরন্তন সুখ। কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের অসংখ্য নিয়ামতের বর্ণনা এসেছে, বাগান, নদী, অমর যৌবন, সুন্দর পোশাক, মনোরম খাবার ও অনন্ত প্রশান্তি।
কিন্তু এসবের চেয়েও মহান, শ্রেষ্ঠ ও অনন্য এক নিয়ামত আছে, তা হলো আল্লাহর দর্শন।
জান্নাতের সাধারণ নিয়ামতসমূহকোরআনে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের সৌন্দর্য এভাবে বর্ণনা করেছেন, “যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জান্নাতের বাগানে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে সোনার কঙ্কন ও মুক্তার অলঙ্কার, আর তাদের পোশাক হবে রেশম।” (সুরা হাজ্জ, আয়াত: ২৩)
অন্যত্র বলেন, “তাদের জন্য থাকবে যা তাদের প্রাণ চায় এবং যা তারা চায় তা-ই সেখানে থাকবে।” (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩১)
অর্থাৎ জান্নাতে মানুষ পাবে প্রতিটি প্রিয় জিনিস, কিন্তু সেই আনন্দও চোখে দেখা আর হৃদয়ে অনুভূত আল্লাহর দর্শনের আনন্দের সামনে তুচ্ছ।
আরও পড়ুনজান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পথ২৫ জুলাই ২০২৫জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ামত: আল্লাহর দর্শনরাসুলুল্লাহ (স.
তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন—এ ছাড়া আর কী চাইব?’
তখন আল্লাহ তায়ালা পর্দা উঠিয়ে দেবেন, আর জান্নাতবাসীরা তাদের প্রভুকে দর্শন করবে। আল্লাহর দর্শনের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো নিয়ামত তাদের কাছে থাকবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮১)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সেই দিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২–২৩)
এখান থেকেই স্পষ্ট হয়, জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে আল্লাহর দর্শন।
আল্লাহর দর্শনের মাহাত্ম্য১. এই দর্শন সব নিয়ামতের চূড়ান্ত রূপ: ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, “জান্নাতের সকল সুখ ও নিয়ামত মিলেও আল্লাহর দর্শনের এক মুহূর্তের আনন্দের সমান নয়।” (হাদিউল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা ৪৮৯, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি.)
কারণ, জান্নাতের প্রতিটি সুখই দেহের জন্য, কিন্তু আল্লাহর দর্শন হলো আত্মার পরিপূর্ণ শান্তি ও ঈমানের পরম পরিণতি।
২. এটি কেবল মুমিনদের জন্য বরাদ্দ: কোরআনে আল্লাহ বলেন, “না, নিশ্চয়ই তারা (কাফেররা) সেদিন তাদের প্রতিপালক থেকে আড়াল করা হবে।” (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৫)
এর মানে, যারা আল্লাহর অবাধ্য, তারা তাঁর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে মুমিনদের জন্য থাকবে সেই পরম সৌভাগ্য।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবহার হৃদয়ের জান্নাত১৮ এপ্রিল ২০২৫৩. এই দর্শন হবে চিরস্থায়ী ও নির্ভেজাল
ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, “আল্লাহর দর্শন জান্নাতবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার, যার তুলনায় জান্নাতের অন্য সব নিয়ামত ক্ষীণ হয়ে যাবে।” (তাফসিরে ইবন কাসির, সুরা ইউনুস, আয়াত: ২৬)
কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার এবং আরও অধিক কিছু।” (সুরা ইউনুস, আয়াত: ২৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) এই আয়াত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “‘আরও অধিক কিছু’ মানে হচ্ছে আল্লাহর দর্শন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮১)
জ্ঞানীগুণীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর দর্শনইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, “আল্লাহর দর্শনই জান্নাতের সর্বোচ্চ তৃপ্তি; এটি দেহের নয়, আত্মার আনন্দ।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ৪/৪৯১, কায়রো, ১৯৯৮ খ্রি.)
ইমাম ইবন তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, “আল্লাহর দর্শন ছাড়া জান্নাত জান্নাত নয়; এটি মুমিনদের চোখের জন্য নয়, বরং অন্তরের জন্য শিফা।” (মাজমুউল ফাতাওয়া, ৫/৭১৮, রিয়াদ, ১৯৯৫ খ্রি.)
জান্নাতের নিয়ামত অগণিত, তবু সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো আল্লাহ তায়ালার দর্শন। যা শুধু ইমানদারদের জন্য বরাদ্দ, এবং সেটিই চিরন্তন সুখের পরিণতি। জান্নাতবাসীদের সেই মুহূর্তের অনুভূতি বোঝাতে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যখন জান্নাতবাসীরা আল্লাহর মুখমণ্ডল দর্শন করবে, তারা এমন আনন্দ অনুভব করবে যা আগে কখনো করেনি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫৮৭)
এই দর্শনই হবে মুমিনের ইমানের পরিপূর্ণতা এবং জান্নাতের সব সুখের উৎস।
অতএব, জান্নাতের জন্য পরিশ্রম মানে কেবল বাগান ও নদীর জন্য নয়, বরং সেই আল্লাহর দর্শনের জন্য, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসার জন্য।
আরও পড়ুনরোগীর সেবায় জান্নাত মেলে০৪ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত য দ র জন য আম দ র কর ছ ন ম নদ র আনন দ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
জান্নাতে সবচেয়ে বড় নিয়ামত কী
জান্নাত—যেখানে নেই কষ্ট, নেই মৃত্যু, নেই দুঃখ বা হতাশা। মানুষ সেখানে পাবে সীমাহীন আনন্দ, অপার শান্তি ও চিরন্তন সুখ। কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের অসংখ্য নিয়ামতের বর্ণনা এসেছে, বাগান, নদী, অমর যৌবন, সুন্দর পোশাক, মনোরম খাবার ও অনন্ত প্রশান্তি।
কিন্তু এসবের চেয়েও মহান, শ্রেষ্ঠ ও অনন্য এক নিয়ামত আছে, তা হলো আল্লাহর দর্শন।
জান্নাতের সাধারণ নিয়ামতসমূহকোরআনে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের সৌন্দর্য এভাবে বর্ণনা করেছেন, “যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জান্নাতের বাগানে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে সোনার কঙ্কন ও মুক্তার অলঙ্কার, আর তাদের পোশাক হবে রেশম।” (সুরা হাজ্জ, আয়াত: ২৩)
অন্যত্র বলেন, “তাদের জন্য থাকবে যা তাদের প্রাণ চায় এবং যা তারা চায় তা-ই সেখানে থাকবে।” (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩১)
অর্থাৎ জান্নাতে মানুষ পাবে প্রতিটি প্রিয় জিনিস, কিন্তু সেই আনন্দও চোখে দেখা আর হৃদয়ে অনুভূত আল্লাহর দর্শনের আনন্দের সামনে তুচ্ছ।
আরও পড়ুনজান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পথ২৫ জুলাই ২০২৫জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ামত: আল্লাহর দর্শনরাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “যখন জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে বলবেন, ‘তোমরা কি কিছু চাও?’
তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন—এ ছাড়া আর কী চাইব?’
তখন আল্লাহ তায়ালা পর্দা উঠিয়ে দেবেন, আর জান্নাতবাসীরা তাদের প্রভুকে দর্শন করবে। আল্লাহর দর্শনের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো নিয়ামত তাদের কাছে থাকবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮১)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সেই দিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২–২৩)
এখান থেকেই স্পষ্ট হয়, জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে আল্লাহর দর্শন।
আল্লাহর দর্শনের মাহাত্ম্য১. এই দর্শন সব নিয়ামতের চূড়ান্ত রূপ: ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, “জান্নাতের সকল সুখ ও নিয়ামত মিলেও আল্লাহর দর্শনের এক মুহূর্তের আনন্দের সমান নয়।” (হাদিউল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা ৪৮৯, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি.)
কারণ, জান্নাতের প্রতিটি সুখই দেহের জন্য, কিন্তু আল্লাহর দর্শন হলো আত্মার পরিপূর্ণ শান্তি ও ঈমানের পরম পরিণতি।
২. এটি কেবল মুমিনদের জন্য বরাদ্দ: কোরআনে আল্লাহ বলেন, “না, নিশ্চয়ই তারা (কাফেররা) সেদিন তাদের প্রতিপালক থেকে আড়াল করা হবে।” (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৫)
এর মানে, যারা আল্লাহর অবাধ্য, তারা তাঁর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে মুমিনদের জন্য থাকবে সেই পরম সৌভাগ্য।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবহার হৃদয়ের জান্নাত১৮ এপ্রিল ২০২৫৩. এই দর্শন হবে চিরস্থায়ী ও নির্ভেজাল
ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, “আল্লাহর দর্শন জান্নাতবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার, যার তুলনায় জান্নাতের অন্য সব নিয়ামত ক্ষীণ হয়ে যাবে।” (তাফসিরে ইবন কাসির, সুরা ইউনুস, আয়াত: ২৬)
কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার এবং আরও অধিক কিছু।” (সুরা ইউনুস, আয়াত: ২৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) এই আয়াত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “‘আরও অধিক কিছু’ মানে হচ্ছে আল্লাহর দর্শন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮১)
জ্ঞানীগুণীদের দৃষ্টিতে আল্লাহর দর্শনইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, “আল্লাহর দর্শনই জান্নাতের সর্বোচ্চ তৃপ্তি; এটি দেহের নয়, আত্মার আনন্দ।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ৪/৪৯১, কায়রো, ১৯৯৮ খ্রি.)
ইমাম ইবন তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, “আল্লাহর দর্শন ছাড়া জান্নাত জান্নাত নয়; এটি মুমিনদের চোখের জন্য নয়, বরং অন্তরের জন্য শিফা।” (মাজমুউল ফাতাওয়া, ৫/৭১৮, রিয়াদ, ১৯৯৫ খ্রি.)
জান্নাতের নিয়ামত অগণিত, তবু সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো আল্লাহ তায়ালার দর্শন। যা শুধু ইমানদারদের জন্য বরাদ্দ, এবং সেটিই চিরন্তন সুখের পরিণতি। জান্নাতবাসীদের সেই মুহূর্তের অনুভূতি বোঝাতে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যখন জান্নাতবাসীরা আল্লাহর মুখমণ্ডল দর্শন করবে, তারা এমন আনন্দ অনুভব করবে যা আগে কখনো করেনি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫৮৭)
এই দর্শনই হবে মুমিনের ইমানের পরিপূর্ণতা এবং জান্নাতের সব সুখের উৎস।
অতএব, জান্নাতের জন্য পরিশ্রম মানে কেবল বাগান ও নদীর জন্য নয়, বরং সেই আল্লাহর দর্শনের জন্য, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসার জন্য।
আরও পড়ুনরোগীর সেবায় জান্নাত মেলে০৪ জানুয়ারি ২০২৫