ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ঘিরেই কি প্যাসিফিকে ‘উত্তেজনা’
Published: 18th, October 2025 GMT
দেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সাতটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের খেপানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের সই করা আটটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ভেতরে মারামারি, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এতে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং কারখানায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কিছু শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ বন্ধ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। এতে কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আহত হন এবং প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
শিল্প পুলিশ জানায়, আইন অনুযায়ী অবৈধ ধর্মঘটের কারণে কোনো মালিক চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারেন। যত দিন বন্ধ থাকবে, তত দিন শ্রমিকেরা বেতন পাবেন না। সংঘর্ষের পরই কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাত কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি।
‘গুজবে’ সংঘর্ষের সূত্রপাতচট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের সাতটি কারখানা রয়েছে—প্যাসিফিক জিন্স, জিন্স ২০০০, ইউনিভার্সেল জিন্স, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক অ্যাক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর ‘সংঘর্ষে দুই শ্রমিক নিহত’ দাবি করে একটি ভিডিও শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য কারখানার শ্রমিকেরা হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ভিডিওটি ভুয়া। দুজন আহত শ্রমিকের মুখে কাপড় ঢেকে এমনভাবে ভিডিও বানানো হয়েছিল যে মনে হয়েছে তাঁরা মারা গেছেন। পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, আহত শ্রমিকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের দাবি করা ভিডিওটি ভুয়া। এটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে শ্রমিকদের কেউ ইন্ধন দিয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।’
ঝুট ব্যবসা দখল নিয়ে ‘ইন্ধনের’ অভিযোগপ্যাসিফিক গ্রুপের অন্তত সাতজন শ্রমিক ও আশপাশের কয়েক কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝুট (অবশিষ্ট কাপড়) ব্যবসা নিয়ে ইপিজেড এলাকায় কয়েকটি পক্ষ সক্রিয়।
আগে প্যাসিফিকের ঝুট বাইরে বিক্রি হতো, এখন প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব রিসাইক্লিং ইউনিটে তা ব্যবহার করা হয়। এই ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রভাবশালী একটি মহল শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে।
শ্রমিকদের দাবি, এ ব্যবসা দখলে নিতে যুবদল ও বিএনপির কিছু নেতা–কর্মী সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আরিফুর রহমান, যিনি বন্দর থানা যুবদলের আহ্বায়ক পদপ্রার্থী। শ্রমিকদের ভাষ্য, সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আরিফুরের অনুসারী।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইপিজেডকেন্দ্রিক কোনো ব্যবসা নেই, আমি মাছের ব্যবসা করি। কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে থাকে, তার দায় আমার নয়। আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’
চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সর্বশেষ কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যদি সংগঠনের কেউ এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, সংগঠন থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ঘিরেই কি প্যাসিফিকে ‘উত্তেজনা’
দেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সাতটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের খেপানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের সই করা আটটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ভেতরে মারামারি, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এতে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং কারখানায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কিছু শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ বন্ধ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। এতে কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আহত হন এবং প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
শিল্প পুলিশ জানায়, আইন অনুযায়ী অবৈধ ধর্মঘটের কারণে কোনো মালিক চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারেন। যত দিন বন্ধ থাকবে, তত দিন শ্রমিকেরা বেতন পাবেন না। সংঘর্ষের পরই কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাত কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি।
‘গুজবে’ সংঘর্ষের সূত্রপাতচট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের সাতটি কারখানা রয়েছে—প্যাসিফিক জিন্স, জিন্স ২০০০, ইউনিভার্সেল জিন্স, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক অ্যাক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর ‘সংঘর্ষে দুই শ্রমিক নিহত’ দাবি করে একটি ভিডিও শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য কারখানার শ্রমিকেরা হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ভিডিওটি ভুয়া। দুজন আহত শ্রমিকের মুখে কাপড় ঢেকে এমনভাবে ভিডিও বানানো হয়েছিল যে মনে হয়েছে তাঁরা মারা গেছেন। পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, আহত শ্রমিকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের দাবি করা ভিডিওটি ভুয়া। এটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে শ্রমিকদের কেউ ইন্ধন দিয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।’
ঝুট ব্যবসা দখল নিয়ে ‘ইন্ধনের’ অভিযোগপ্যাসিফিক গ্রুপের অন্তত সাতজন শ্রমিক ও আশপাশের কয়েক কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝুট (অবশিষ্ট কাপড়) ব্যবসা নিয়ে ইপিজেড এলাকায় কয়েকটি পক্ষ সক্রিয়।
আগে প্যাসিফিকের ঝুট বাইরে বিক্রি হতো, এখন প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব রিসাইক্লিং ইউনিটে তা ব্যবহার করা হয়। এই ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রভাবশালী একটি মহল শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে।
শ্রমিকদের দাবি, এ ব্যবসা দখলে নিতে যুবদল ও বিএনপির কিছু নেতা–কর্মী সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আরিফুর রহমান, যিনি বন্দর থানা যুবদলের আহ্বায়ক পদপ্রার্থী। শ্রমিকদের ভাষ্য, সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আরিফুরের অনুসারী।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইপিজেডকেন্দ্রিক কোনো ব্যবসা নেই, আমি মাছের ব্যবসা করি। কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে থাকে, তার দায় আমার নয়। আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’
চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সর্বশেষ কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যদি সংগঠনের কেউ এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, সংগঠন থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।