বেআইনিভাবে বসতভিটা দখলের চেষ্টা, প্রাণনাশের হুমকি
Published: 18th, October 2025 GMT
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় বসতভিটা দখলের চেষ্টা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী এক পরিবার। আজ শনিবার দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সাবরিন তাহছিনা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সাবরিন তাহছিনা জানান, ৪ থেকে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে রেদোয়ানুল হক ও আজম খান নামের দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে ৮-১০ জন লোক তাঁর স্বামীর পৈতৃক বসতভিটায় জোরপূর্বক ঢুকে জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণের খুঁটি ও টিনের বেড়া স্থাপন করেন। ঘটনাটি জানার পর তিনি প্রতিবাদ করলে জায়গা দখল করতে আসা ব্যক্তিরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
সাবরিন তাহছিনা আরও অভিযোগ করেন, বিবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্বামীর পারিবারিক জমি দখলের ষড়যন্ত্র করছেন এবং আইনের তোয়াক্কা না করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করছেন। তিনি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন আজম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেনা জায়গা পরিমাপ করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কাউকে গালিগালাজ বা হুমকির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সমাধান করতে থানায় তাঁদের ডাকা হলেও সেখানে উপস্থিত হননি অভিযোগকারীরা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক দিদার হাওলাদার বলেন, ‘আজ বেলা ১১টায় অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি আমি। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব আমরা।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীর সেই রাজবাড়ি ভাঙার কাজ স্থগিত, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে চিঠি
রাজশাহীতে দিঘাপাতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়িটি আর না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থাপনাটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাইয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে স্থাপনাটি যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় রাখার জন্য জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বাড়িটির ইতিহাস ঘেঁটে দেখছেন। বাড়িটির কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য আছে কি না, যাচাই করার জন্য তাঁরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে চিঠি দিচ্ছেন। তাঁরা এসে বিষয়টি যাচাই করে দেখবেন। প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য থাকলে তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িটি সংরক্ষণ করা হবে।
আজ বুধবার দুপুরে নগরের দরগাপাড়া মৌজায় ওই বাড়িতে গিয়ে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেন বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। অবশ্য পাশাপাশি দোতলা দুটি বাড়ির প্রায় সবই ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুধু মেঝের নিচে থাকা সুড়ঙ্গের ইটগুলো তোলা বাকি।
দুপুরে বাড়িটি পরিদর্শনে গিয়ে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এ বাড়ির বয়স আনুমানিক ১২০ বছর, এখন যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। এখানে থাকা নাগলিঙ্গমের গাছটি যেন না কাটা হয়। এটি খুবই বিরল। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা হয়তো এখানে আসেননি। তাঁরা না দেখেই এটা নিলাম দিয়েছেন। তাঁরা এখানে এলে হয়তো এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বুঝতে পারতেন।
বিভিন্ন সংগঠনের স্মারকলিপিএদিকে সন্দীপ কুমার রায়ের রাজবাড়িসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনা সংরক্ষণসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন রাজশাহীর নাগরিক সমাজ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ও রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষকসহ সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এ সময় হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের (ইয়্যাস) সভাপতি শামীউল আলীম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী নাদিম সিনা, হাসিবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় পঞ্চকবির অন্যতম কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের গুঁড়িয়ে দেওয়া বসতভিটা, তালন্দ ভবনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগর। এখানে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বসবাস করেছেন এবং তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত বাসস্থান আছে। এমন একটি বাড়ি নগরের দরগাপাড়া মৌজায়। বাড়িটি বানিয়েছিলেন দিঘাপাতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়। জনশ্রুতি আছে, মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯-১৯৪২) পুঠিয়া থেকে রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতে থাকতেন। স্থাপনাটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যাচাই না করেই ভাঙার জন্য নিলামে তোলা মোটেও ঠিক হয়নি।
স্মারকলিপির দাবিগুলো হলো ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভাঙার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে; নাগলিঙ্গম গাছ ও বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; রাজশাহী জেলা ও বিভাগে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ করতে হবে এবং সেগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে; রাজশাহীতে অবস্থিত কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, তালন্দ ভবনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই দাবিসংবলিত স্মারকলিপির অনুলিপি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনভাঙতে ভাঙতে রাজবাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে এল সুড়ঙ্গ২১ ঘণ্টা আগেরাজবাড়িটির অবস্থান রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিক বিপরীত পাশে। রাজপরিবার চলে যাওয়ার পর বাড়িটি পরিত্যক্তই ছিল। স্বাধীনতার পর বাড়িটি ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের নামে ইজারা দেয় সরকার। তিনি বাড়িটিতে ‘মহিলা কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান’ নামের একটি সংগঠন চালাতেন। মনোয়ারা রহমান ২০০৯ সালে মারা গেলে বাড়িটি আবার পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
সম্প্রতি বাড়িটির ইজারা বাতিল করে বোয়ালিয়া থানা ভূমি কার্যালয়। এরপর পরিত্যক্ত বাড়িটি নিলামে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। নিলামের ক্রেতা শ্রমিকদের দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িটি ভেঙেছেন। গতকাল ভাঙার সময় বাড়ির নিচ থেকে সুড়ঙ্গ বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। সমালোচনার মুখে বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন।
সুড়ঙ্গের বিষয়ে লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘বাড়ির নিচে সুড়ঙ্গের মতো থাকলেও এটি আসলে সুড়ঙ্গ নয়। এটি প্রাচীন নির্মাণশৈলী। বাড়ির নিচ দিয়ে বাতাস চলাচলের জন্য এটি করা হতো।’ তবে এ বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করা কলেজশিক্ষক আখতার বানুর দাবি, পেছনের দোতলা বাড়ি থেকে সামনের একতলা বাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ওই সুড়ঙ্গ। নিরাপত্তার কারণে এটি করা হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।