ভারতীয়কে ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা এফবিআইয়ের
Published: 3rd, December 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) নিউ জার্সিতে ২০১৭ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত এক ভারতীয় সম্পর্কে তথ্যের জন্য ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করেছে। অভিযুক্ত ওই ভারতীয়র নাম নাজির হামিদ।
এফবিআই একইসঙ্গে ভারত সরকারের কাছে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করেছে। খবর এনডিটিভির।
আরো পড়ুন:
ভারত গিয়ে নিখোঁজ ২ বাংলাদেশি
ভারতে দুটি ট্রলারসহ ২৮ বাংলাদেশি জেলে আটক
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ৩৮ বছর বয়সী নাজির হামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে নিউ জার্সির ম্যাপেল শেডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভারতীয় নারী শশীকলা নারা (৩৮) ও তার ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিশ নারাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হামিদের বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রি হত্যা ও অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পরে হামিদ ভারতে চলে যায় এবং আজও সেখানেই রয়েছে।হামিদ এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন।
বার্লিংটন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিস (বিসিপিও) এক বিবৃতিতে বলেছে, হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। পরবর্তী পদক্ষেপ হবে হামিদকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা।
নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি জানান, গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কোয়াত্রাকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে হামিদের প্রত্যর্পণে ভারত সরকারের ‘সহায়তা’ চাওয়া হয়েছে।
মারফি বলেন, ‘জঘন্য অপরাধ’টি পুরো রাজ্যকে হতবাক করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, নিউ জার্সি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং এফবিআই-এর সঙ্গে ‘ভারতীয় আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য’ সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়ার জন্য তিনি কোয়াত্রার প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন।
গত মাসে, বার্লিংটন কাউন্টির প্রসিকিউটর লাচিয়া ব্র্যাডশ এবং ম্যাপেল শেড পুলিশ প্রধান ক্রিস্টোফার ফ্লেচার ৮ বছরের তদন্ত শেষে হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘোষণা করেন।
বার্লিংটন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিস (বিসিপিও) এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চের সন্ধ্যায় শশিকলা ও তার ছেলের মরদেহ তাদের ঘরে ভেতরে আবিষ্কৃত হওয়ার পর ম্যাপেল শেড পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
ময়নাতদন্তে দেখা যায়, নিহত দুজনের ঘাড়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। অনিশ নারাকে তার আক্রমণকারী প্রায় শিরশ্ছেদ করেছিল। ময়নাতদন্ত পরীক্ষায় উভয়ের শরীরে বেশ কয়েকটি আত্মরক্ষামূলক ক্ষত দেখা যায়।
ফ্লেচার বলেন, “সেদিনের দৃশ্যটি অকল্পনীয় ছিল। যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তারা একজন মা ও তার ছোট সন্তানের হত্যাকাণ্ড দেখেছিলেন, যারা তাদের জীবনের জন্য লড়াই করে তাদের শেষ মুহূর্তগুলো কাটিয়েছিলেন।”
হামিদ একই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকতেন। তিনি নিহত ওই নারীর স্বামী হনুমানথ নারার মতো একই আইটি কোম্পানিতে কাজ করতেন।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘোষণায় দীর্ঘ সময় লেগেছে, কারণ তদন্তকারীরা অতিরিক্ত প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন এবং ভারত থেকে তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
অপরাধস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত থেকে জানা যায়, তদন্তকারীদের সংগৃহীত রক্তের কিছু ফোঁটা ভুক্তভোগীরদের নয়। পরে জানা যায়, সেটি মধ্য এশীয় বংশোদ্ভূত এক পুরুষের।
বার্লিংটন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিসের (বিসিপিও) বিবৃতিতে বলা হয়, হামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইকে জানায় যে, নাজির হামিদ ডিএনএ নমুনা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
এতে আরো বলা হয়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, ভারত সরকারের কাছে একটি পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছিল, যেখানে আদালতের আদেশের মাধ্যমে হামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেটিও পূরণ করা হয়নি।
বার্লিংটন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিস (বিসিপিও) আরো বলেছে যে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে গোয়েন্দাদের ভুক্তভোগীদের প্রতি অসহানুভূতিশীল বলে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।
ম্যাপেল শেড পুলিশ প্রধান ফ্লেচার জোর দিয়ে বলেন, “শশিকলা ও অনিশের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের চেষ্টায় কোনো কমতি ছিল না।”
তিনি বলেন, “এই অপরাধগুলো আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য ও এই মামলায় কাজ করা সকল তদন্তকারীর জন্য এক ক্ষোভের বিষয় ছিল। আমাদের গোয়েন্দা ব্যুরোর ভেতরে দুটি ছবি স্পষ্টভাবে ঝুলছে, একটিতে শশিকলা ও অনিশের একসঙ্গে এবং আরেকটিতে অনিশের স্কুলে তার পোশাক পরা। এই ছবিগুলো প্রতিদিন প্রতিটি তদন্তকারীকে মনে করিয়ে দেয় যে, তারা ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করে।”
প্রসিকিউটর অফিস থেকে হামিদের নিয়োগকর্তার কাছে অনুরোধের মাধ্যমে অবশেষে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যা তাকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। হামিদের অফিসের ল্যাপটপের কিবোর্ড পরীক্ষা করে একটি ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়, যা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে থাকা অজানা রক্তের ফোঁটা থেকে প্রাপ্ত ডিএনএর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে নিশ্চিত করা হয়।
বিসিপিও লেফটেন্যান্ট ব্রায়ান কানিংহাম বলেন, “এই অগ্রগতি শক্তিশালী ভৌত প্রমাণ সরবরাহ করেছে, যা আমাদের তদন্ত ইতিমধ্যে যা নির্ধারণ করেছে তা নিশ্চিত করেছে- নাজির হামিদ ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে শশীকলা ও তার ছেলে অনিশকে নির্মমভাবে হত্যা করে।”
বিসিপিওর তদন্ত প্রধান প্যাট্রিক থর্নটন বলেন, আমাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই যে হামিদ এই অপরাধ করেছেন। আমরা আশা করছি, তাকে প্রত্যর্পণ করা হবে।
ব্র্যাডশ বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে এই ব্যক্তিকে এখানে তার জন্য অপেক্ষা করা অভিযোগের মুখোমুখি হতে বিলম্ব না করে প্রত্যর্পণ করা যায়। কোনো সীমান্ত, কোনো দূরত্ব এবং কোনো বিলম্ব ন্যায়বিচারের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। আমরা দেশগুলোকে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানাই যাতে নিশ্চিত হয় যে, সহিংস অপরাধকারীরা সমুদ্র অতিক্রম করে জবাবদিহিতা থেকে পালাতে পারে না।”
আইসিসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য জয়েশ পারিখ বার্লিংটন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিস, ম্যাপেল শেড পুলিশ বিভাগ এবং তদন্তে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গত আট বছর ধরে ‘পথে অনেক চ্যালেঞ্জ ও বাধা সত্ত্বেও’ তাদের নিষ্ঠা এবং অধ্যবসায়ের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ক ণ ড র য ক তর ষ ট র স গ রহ আম দ র র জন য র অফ স অন র ধ তদন ত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে মৎস্য উপদেষ্টা
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় এভারকেয়ার হাসপাতালের পৌঁছান তিনি।
রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. মামুন হাসান। এ সময় উপদেষ্টা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবগত হন।
উল্লেখ্য যে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সবশেষ বিএনপির পক্ষ থেকে এক ব্রিফিংয়ে গতকাল জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। প্রয়োজন হলে তাকে বিদেশে নেওয়া হবে।
ঢাকা/রায়হান//