গত বছরের ছাত্র বিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটি যুদ্ধাপরাধ আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সংস্থার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ দ্রুতই ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা চালায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ওই সহিংসতার ঘটনায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় শিশুসহ ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়ে থাকতে পারেন।

‘ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রায়কে গত বছর বিক্ষোভ দমনের সময় সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের জন্য ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওএইচসিএইচআর। এর পর থেকে সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নেতৃত্ব, নির্দেশদাতাসহ ওই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার এবং ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

ওএইচসিএইচআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতা ধরে রাখতে তৎকালীন বাংলাদেশি প্রশাসন ক্রমবর্ধমান সহিংস উপায়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিক্ষোভকারীদের দমনের চেষ্টা চালিয়েছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি, সেগুলো ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। এগুলো মানবাধিকারের সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে এবং তা আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আরও বলেন, ‘জাতির এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার অপরিহার্য।’

মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করুন

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বলেছে, তারা ধারাবাহিকভাবে এমন বিচারপ্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে, যেটা প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে।

নিজেদের কাজের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর কয়েক বছর ধরে সর্বজনীনভাবে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের সুপারিশ করে আসছে এবং মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় বিগত বছরগুলোতে জাতিসংঘে একাধিক প্রস্তাব পাস হয়েছে।

আরও পড়ুনএ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর২০ ঘণ্টা আগে

ওএইচসিএইচআর বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিচার তাঁদের অনুপস্থিতিতে হয়েছে এবং তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এই বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখাটা ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠেছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শান্ত থাকার এবং সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত স ঘ র ম নব ধ ক র ওএইচস এইচআর গত বছর প রক শ প রক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন রাভিনা শামদাসানি।

ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদেরসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানিয়েছি।’

রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যেহেতু এই বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাই আমরা সব জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগগুলো যেন প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে, সে জন্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি। এটি বিশেষভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন, এ মামলার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের শান্তি দেওয়া হয়েছে।’

মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে এর বিরোধিতা করি।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা খাতের অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। আর এ সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেন আর কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে। এসব প্রচেষ্টাগুলোয় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে ওএইচসিএইচআর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর