Prothomalo:
2025-12-03@11:25:37 GMT

রানি জোনাকির মৃদু আলোয়

Published: 3rd, December 2025 GMT

লীলাময় জ্বর

জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের চারপাশে বর্ষা নেমেছে
প্রেমরঙা মাছের নেশায়

বাজারের কোলাহল-নুয়ে-পড়া রাতে
গাছপালানো পাখিদের জ্বরগ্রস্ত যৌবন
নেচে ওঠে পারদের নানা রং–ছন্দে
আর তিন তাসের হাত ধরে বুকসমান উঁচু দিয়ে
উড়ে যায় টইটম্বুর নৈঃশব্দ্যের লীলা—

আয়ুর ভেঙে পড়া ঘরে অদৃশ্য গোলাপায়ন
কিংবা ল্যাজারাস ফেনোমেনন
যেন সরল দোলকের রোদ-পোহানোর সুখ
মিশে গেছে ব্যাঙ-ডাকের অপরূপ কৌশলে

জ্বরের তাণ্ডবে নেচে ওঠে বৃষ্টি ও মেঘ
চৈতন্যের টিলায়
তখন জলের তোড়ে ছায়া ফেলে দূরে চলে যায়
গাছ ও জলের জ্যামিতি
আঁধারের যুগল বাহুতে ঢেকে যায় নদীপাড়
জয়তির দেউড়িতে ভোরের খুৎবা স্নান সেরে ওঠে—

লীলাময় জ্বর নেমে গেলে
রাতের বুক থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ে অন্ধকার.

..

মেঘমুলুকের ঘরামি

তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে একটি ফলিত সুখগাছ
সিজদার ভঙ্গিতে পড়ে আছে, তুমি সেই সুখগাছ থেকে
বয়স্ক হলুদ পাতাগুলো তুলে নিয়ে খোঁপায় গুঁজেছ—

রাতের নদীর প্রণয়ের দিকে চেয়ে তোমার নিশাচর হাত
আলতো করে কুড়িয়ে নিচ্ছে আকাশের ছায়া
তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে মেঘের খাম্বায় সাঁটা
একটি অনাথ শিমুলগাছের পৈতৃক হাহাকার—
কার ধামে কে আঁকে চিরায়ত নির্জনতা, কে জানে!

তোমার তন্দ্রার পাশে পালের নৌকা ভেসে যায়
হলুদখেত পেরিয়ে যাওয়া বিকেলের হাওয়ায়
আমি স্বপ্নের ভেতরে তোমার বিনম্র আয়ুরেখার কড়িকাঠ
সাদা মোরগের রক্ত দিয়ে ধুয়ে দিই

ফলিত সুখগাছ থেকে ঝরে পড়ছে অশ্রুগ্রন্থির ফনেটিকস;
তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে উলুখড় দিয়ে ঘর বাঁধে
মেঘমুলুকের ঘরামি, আর চিরায়ত নির্জনতার বয়নপ্রণালি
সমুদ্রতীরের ঝাউবনের দিকে উড়ে যায়...

মায়াজাল বিস্তৃত করো

রাত্রির গহনতম আলোয় দেখা যায়—
চাঁদপাখির গানের ভেতরে ভেসে ওঠা
পরিণত বিষের যন্ত্রণা
জঙ্গলের গোপন ভাষায় অনূদিত হয়ে
যখন ছড়িয়ে পড়ে ত্রিভুবন
তখন অঙ্কুরিত হয় নিঃশব্দ মাতৃদুগ্ধ
আমাদের মানবজনম ভিজে ওঠে
গোপন পিরিতে, শিশিরে হাওয়ায়

মায়াজাল বিস্তৃত করো নির্জন আলোয়
ছলাৎ ছলাৎ শব্দগুলো দূরে সরে গেলে
যে রকম বিলুপ্ত নগরীর দেয়াল ভেসে ওঠে
সেভাবে খুলে যাক রাত্রির গোপন দরজা
জল নিঃশব্দে গড়িয়ে যাক চাঁদের সঞ্চারী হয়ে
নিরক্ষর আদিম গুহায়—

কামিনী ফুটেছিল

ইচ্ছে হলে ভোরের ইশারাটুকু সাথে নিয়ে
তুমি কোনো রাখাল শামুকের গানের
মুখরায় ঢুকে
সঞ্চারীর সেলাইয়ের ফোঁড়ে
দেখতে পারো—জলের অন্ধকারে
কামিনী ফুটেছে নীল শাড়ি পরে...

কামিনী ফুটেছিল
রাতের গোপন ছায়ায়, লেবুপাতার গন্ধে
রানি জোনাকির মৃদু আলোয়

কামিনী ফুটেছিল
শিশিরের টুপটাপ পতনে, শীতের ইশারায়

কামিনী ফুটেছিল
রাখাল শামুকের ডেরায়, উদ্বাস্তু ঘুমের আঙিনায়

মায়ামন্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছি নিরিবিলি

কোথাও কি উড়ছে ধুলো, উড়ছে কারও
নিবিড় করে কাছে পাওয়ার সুবর্ণ দিন?

শূন্য থেকে পড়ছে ঝরে পাতার মিছিল
ঘুমের পালক খসে পড়ার সালতামামি
রুগ্ন মেঘে ঝুলছে যত উপার্জিত অবহেলা

দেখছি দূরে মাঠের আলে প্রাচীন ছায়া
আমি শুধু কাকতাড়ুয়ার হৃদয় খুঁজি
শুদ্ধ করে স্বপ্ন পড়ি ডাকছে যখন বিকেলবেলা

রাতের পাশে চেনা কটি অন্ধ গোলাপ
তারাও যেন রাতের মতো আঁধার পোষে
একখানা হাত ডাকছে কাছে অন্তরঙ্গ পেখম তুলি

আমার কি আর সময় হবে সে ডাক শোনার
শালবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
জলের দিকে মায়ামন্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছি নিরিবিলি

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছে: উপদেষ্টা 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’’

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে সাভারের ব্র্যাক সিডিএম-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস-এ ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বিশ্বের বৃহত্তম শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা

এটা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা: পরিবেশ উপদেষ্টা

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমার সারা জীবনের লড়াই কীভাবে কর্পোরেটের দখলদারিত্ব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়, কীভাবে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করা যায়, কীভাবে তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং কীভাবে উন্নয়নকে পরিবেশমুখী করা যায়?”

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি তিনটি জাতীয় অগ্রাধিকার তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, গুরুত্বপূর্ণ শাসনব্যবস্থার সংস্কার এবং দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’’ 

তিনি পরিবেশ প্রশাসনে চলমান সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে রয়েছে ২২ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের কঠোর প্রয়োগ, দেশজুড়ে প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ, প্রধান নদী ও বনজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জোরদার করা।’’ 

বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেন সরকারের এই উপদেষ্টা। সম্প্রতি অনুমোদিত বন নীতিতে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর অবাধ, পূর্বানুমতিপ্রাপ্ত ও অবহিত সম্মতির বিধানকে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক পরিবেশগত অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘প্রবাল বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে সেখানে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিপজ্জনক বায়ুদূষণ কমাতে জোরদার অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যদিও কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।’’ 

উপদেষ্টা রিজওয়ানা ফেনীর নজিরবিহীন বন্যাদুর্গত অবস্থা এবং নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক সীমান্তপারের পানির প্রবাহসহ দেশের বাড়তে থাকা জলবায়ু ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, জলবায়ু ন্যায়বিচার তার দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্পনির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জানান, সরকারি সকল কার্যালয়ে কার্যকর রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নির্মূলের চলমান সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “পরিবেশ ন্যায়বিচার একটি মূল্যবোধনির্ভর ধারণা। মানুষ ও প্রকৃতিকে সত্যিকারের মূল্য দিতে চাইলে আমাদের কার্যক্রমে সেই প্রতিফলন ঘটাতে হবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ সংস্কারগুলো ধরে রাখবে এবং আরো এগিয়ে নেবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান; সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)’র চেয়ারম্যান মির্জা কামরুল হাসান এবং বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা ইসলাম।
 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ