কয়লার বাড়তি দাম ধরেই আদানির বকেয়া হিসাব, পরিশোধে শীর্ষ পর্যায়ে চিঠি
Published: 19th, October 2025 GMT
চুক্তি অনুসারে কয়লার দাম ধরে বিল জমা দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিল পরিশোধ করে তা কাটছাঁট করে বাজারদর ধরে। কয়লার দাম নিয়ে এ বিরোধ দুই বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। এতে বকেয়া বিলের হিসাবে ফারাক এখন ৪৬ কোটি ডলার। সেই অর্থের পুরোটাই চেয়ে এই প্রথম সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতের শিল্পগোষ্ঠীটি।
তবে পিডিবির হিসাবে তেমন বকেয়া নেই। আর তা জানিয়ে সেই চিঠির জবাব পাঠাতে যাচ্ছে সরকারি সংস্থাটি।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৩ সাল থেকে আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে সরকার। তখন থেকে আদানির বিল বকেয়া বাড়ছিল। তা বাড়তে বাড়তে ৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিল শোধে কয়েক দফা তাগাদা দেয় আদানি গ্রুপ।
পিডিবির হিসাবে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম ধরা হচ্ছে টনপ্রতি ৬৫ ডলার। তবে আদানি হিসাব করছে ৮০ ডলার ধরে। নিয়মিতভাবেই দুই হিসাবে ১৫ থেকে ২০ ডলারের ফারাক থাকছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই পুরো বিল চাইছে আদানি।পিডিবির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত জুনে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার বকেয়া শোধ করা হয়েছে। জুলাই মাসেরও অধিকাংশ বিল শোধ করা হয়েছে। বাকি আছে মাত্র ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর আগস্টের বিল মাত্র জমা হয়েছে। এটিকে বকেয়া বলা যাবে না। সে হিসেবে আদানির তেমন কোনো বকেয়া নেই।
পিডিবি সূত্র বলছে, আদানি মূলত কয়লার বাড়তি দাম ধরে বকেয়া হিসাব করেছে। এ হিসাবে পুরোনো বকেয়ার সঙ্গে চলমান বিল যুক্ত করে ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাওনা দাবি করে তা পরিশোধের তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আদানি।
চিঠিতে বলা হয়, বিলম্ব মাশুলসহ সব বকেয়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শোধ করা হবে বলে গত জুনের বৈঠকে জানিয়েছিল পিডিবি। যদিও বিল পরিশোধের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। বকেয়া শোধে দেরির কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থায়নকারী সংস্থা ও অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গত জুনে একসঙ্গে বকেয়ার বড় একটি অংশ পরিশোধ করার প্রশংসা করেন গৌতম আদানি। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার বিল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা সহজ হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এখন বাকি বকেয়া শোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠিটি পাঠান আদানি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। চিঠিটি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে ইতিমধ্যে পিডিবিকে নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো.
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বকেয়া বিল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিঠি চালাচালি করছে আদানি ও পিডিবি। নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হচ্ছে এখন। কিন্তু কয়লার দামে বিরোধ থাকার কারণে বকেয়া থেকে যাচ্ছে।
পিডিবির হিসাবে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম ধরা হচ্ছে টনপ্রতি ৬৫ ডলার। তবে আদানি হিসাব করছে ৮০ ডলার ধরে। নিয়মিতভাবেই দুই হিসাবে ১৫ থেকে ২০ ডলারের ফারাক থাকছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই পুরো বিল চাইছে আদানি।
এ বিরোধ নিষ্পত্তি করতে শেষ পর্যন্ত আদানি গ্রুপ আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে যেতে পারে বলে খবর পাওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগও আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
গত জুনে একসঙ্গে বকেয়ার বড় একটি অংশ পরিশোধ করায় প্রশংসা করেন গৌতম আদানি। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার বিল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা সহজ হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এখন বাকি বকেয়া শোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে নির্মিত আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। তাতে ওই কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেনার কথা রয়েছে।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ওই বছরের জুনে। চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুতের দাম সময়ে–সময়ে নির্ধারিত হয় কয়লার দাম ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর।
তবে উৎপাদনে আসার আগেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলছে, আদানি কয়লার দাম বেশি ধরছে। অন্যদিকে আদানি বলছে, চুক্তি অনুসারে বিল করছে তারা।
তবে পিডিবির আপত্তির কারণে বাংলাদেশের অন্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছিল আদানি। কয়লার দামে এক বছর পর্যন্ত এ ছাড় দেয় আদানি। গত বছরের জুলাই থেকে আবার বাড়তি দাম ধরে বিল করছে তারা।
কয়েক দফা আলোচনা করেও কয়লার দাম নিয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। একাধিক বৈঠকের পরও চুক্তির বাইরে ছাড় দিতে রাজি নয় আদানি। বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ২৩ জুন আদানি ও পিডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা সবশেষ বৈঠক করেন। যদিও বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়নি।
এর আগে বকেয়া শোধে জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি পিডিবিকে চিঠি দিয়েছিল আদানি পাওয়ার। ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পিডিবিকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের বিল হিসেবে তাদের পাওনা ৮৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করা না হলে চুক্তি অনুসারে বিলম্ব ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হবে পিডিবির। ওই সময়ের মধ্যে বিল শোধ করায় দুই কোটি ডলার বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে আদানি।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দরপত্র ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত ওই বিশেষ আইন ইতিমধ্যে বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন চুক্তি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতেও বেশ কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ওই কমিটি। তারা এটি নিয়ে এখনো কাজ করছে।
আরও পড়ুনকয়লার দাম নিয়ে বিরোধ: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যেতে পারে ভারতের আদানি২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কয়ল র দ ম ন য় ব ল পর শ ধ ত কয়ল র কয়ল র ব গত জ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একঝলক (১৯ অক্টোবর ২০২৫)
ছবি: মঈনুল ইসলাম