ঋণ করে ‘ফ্রি ভিসা’ নিয়ে বিদেশে গেছেন ৭২ শতাংশ কর্মী
Published: 19th, October 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় বাংলাদেশ থেকে। তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসার’ নামে নির্দিষ্ট চাকরির নিশ্চয়তা ছাড়াই বছরের পর বছর এসব দেশে যাচ্ছেন কর্মীরা। সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ টাকা নেওয়া হয় তাঁদের থেকে। তারপরও দেশগুলোতে গিয়ে কাজ পাননি ৪৩ শতাংশ কর্মী। গন্তব্যে পৌঁছার পর কাজের অনুমতি পেতে নতুন করে টাকা খরচ করতে হয়েছে তাঁদের।
তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে যাওয়া ১ হাজার ৮৪ জন প্রবাসী কর্মীর পরিবারে গিয়ে জরিপটি চালানো হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশের আটটি জেলায় এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপের তথ্য বলছে, বিদেশে যাওয়ার আগে মাসে কর্মীর গড় আয় ছিল ৯ হাজার টাকা। তাঁর পরিবারের আয় ছিল ৩৬ হাজার ২৩৮ টাকা। কম আয়ের জন্যই মূলত তাঁরা বাড়তি খরচ করে ফ্রি ভিসার নামে বিদেশে যান। এ জন্য তাঁদের খরচ করতে হয়েছে পরিবারের বার্ষিক আয়ের চেয়ে বেশি। তাঁর মানে সবাইকে ধার-দেনা করতে হয়েছে। ৭২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে ঋণ নিয়েছেন। ১১ শতাংশ জমি বন্ধক রেখেছেন, ৬ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। যাঁরা চাকরি না পেয়ে ফিরে এসেছেন, তাঁরা বন্ধক রেখে যাওয়া জমিও পুনরুদ্ধার করতে পারেননি।
‘প্রবাসী আয় হারানোর ওপর গভীর মূল্যায়ন: সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর বাংলাদেশিদের ফ্রি ভিসা অভিবাসনের প্রভাব’ শিরোনামের গবেষণা জরিপের তথ্য নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে আজ রোববার আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে সরকার নির্ধারিত গড় খরচ ১ লাখ ১৬ হাজার ২২৪ টাকা। অথচ ফ্রি ভিসার নামে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০২ টাকা খরচ করেছেন কর্মীরা।
জরিপ বলছে, ২০২২ সালে ৯ লাখ ৩৮ হাজার কর্মী গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। দেশগুলোতে গিয়ে ৫৭ শতাংশ কাজের অনুমতি পেয়েছেন। গিয়ে কাজ না পেয়ে আরও প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে কাজের অনুমতিপত্র (ইকামা) নিয়েছেন ২১ শতাংশ কর্মী। ৪৪ হাজার টাকা খরচ করে কাজ পেয়েছেন ৪ শতাংশ কর্মী। গিয়ে কাজ না পেয়ে ফিরে এসেছেন ৪ শতাংশ। তাঁদের নিজেদের টাকা খরচ করে ফিরতে হয়েছে। ৪ শতাংশকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই, এটি বেশ বড় সংখ্যা। তাই এটিকে গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে। আর ১৪ শতাংশ কর্মী দেশগুলোতে গিয়ে বাড়তি খরচ করতে না পারায় কাজের অনুমতি পাননি, দেশেও ফিরতে পারেননি। অবৈধ হয়ে রয়ে গেছেন সেখানে।
দেশের আট জেলা—বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা ও সুনামগঞ্জে জরিপটি চালানো হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ পুরুষ ও ৯ শতাংশ নারী। নারীরা মূলত গৃহকর্মী হিসেবে যান, যার জন্য ফ্রি ভিসা প্রযোজ্য নয়।
ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। আইএলও কনভেনশন অনুসারে কাজের চুক্তি ছাড়া কর্মী পাঠানো যায় না। অথচ সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ৩-৪ শতাংশ কর্মীর নিয়োগ চুক্তি পাওয়া যায়মো.আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিএমইটি
জরিপে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বা ৫৫৪ জন কর্মী ফ্রি ভিসা জেনেই বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ গেছেন অবৈধ দালাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ৭ শতাংশ সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। ৮ শতাংশ পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে। আর ৩১ শতাংশ গেছেন দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, অবৈধ অভিবাসন শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, অর্থনীতিতেও বিরাট ক্ষতি করছে। প্রত্যেক কর্মীর নিয়োগ স্বচ্ছ ও জবাবদিহির মধ্যে রাখতে কাজ করছে সরকার। টাকা পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে নিয়োগকর্তার খরচে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বায়রার প্রশাসক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। আইএলও কনভেনশন অনুসারে কাজের চুক্তি ছাড়া কর্মী পাঠানো যায় না। অথচ সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ৩-৪ শতাংশ কর্মীর নিয়োগ চুক্তি পাওয়া যায়। দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকে যেতেই হবে। দক্ষ কর্মী তৈরি করা গেলে বিদেশিরা এখানে আসবে কর্মী নিতে।
জরিপের তথ্য তুলে ধরেন ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুপারিশ হলো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এখানেই মূলত হতাশা কাজ করে। যাঁরা জড়িত, তাঁদের কোনো শাস্তি হয় না। আইন আছে, তা কার্যকর করা দরকার। অভিবাসন খরচ নজরদারি করা জরুরি। দক্ষ কর্মী তৈরির প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি নোমান চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক কাজী মাহমুদুর রহমান, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজিয়া হায়দার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হেড অব প্রোগ্রাম শ্রুতি ঈশিতা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহনুমা সালাম খান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ওকাপের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী। অভিবাসীদের প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেন হেলভেটাস বাংলাদেশের ইনটেরিম প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রেমাংশু শেখর সরকার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খরচ কর পর চ ল শ কর ম কর ম র পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৬টি ভাষার প্রশিক্ষক নেবে সরকার, ঘণ্টাপ্রতি বেতন ৮০০ টাকা, পদ ১২৪
৬টি ভাষা শিক্ষা কোর্স পরিচালনার জন্য অতিথি ভাষা প্রশিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। মোট পদসংখ্যা ১২৪। বিএমইটির নিয়ন্ত্রণাধীন ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)/কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র (টিটিসি)/ শিক্ষানবিশি প্রশিক্ষণ দপ্তরগুলোয় প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
চাকরির বিবরণপদের নাম: অতিথি ভাষা প্রশিক্ষক
১. ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সের নাম: জাপানিজ
পদসংখ্যা: ৫১
আবেদনের যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচএসসি/সমমান পাসসহ জাপানিজ ভাষাগত দক্ষতায় JLPT N3/সমমান লেভেল পাস হতে হবে। জাপানে তিন বছরের অধিক সময় অবস্থানকারীরা/স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় জাপানিজ ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
২. কোরিয়ান
পদসংখ্যা: ০১
আবেদনের যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচএসসি/সমমান পাসসহ কোরিয়ান ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় TOPIK Level-3/সমমান পাস হতে হবে। কোরিয়ায় তিন বছরের অধিক সময় অবস্থানকারীরা/স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় কোরিয়ান ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
৩. ইংরেজি
পদসংখ্যা: ৩১
আবেদনের যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর/সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে তিন বছরের অধিক সময় অবস্থানকারীরা/স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা/IELTS-এ ৬.৫ পয়েন্ট অর্জনকারী প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
আরও পড়ুনকারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুতি ও নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদন: আতঙ্কে চাকরিপ্রত্যাশীরা২৯ নভেম্বর ২০২৫৪. আরবি
পদসংখ্যা: ২৬
আবেদনের যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর/সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। আরবি ভাষাভাষী দেশে তিন বছরের অধিক সময় অবস্থানকারীরা/স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় আরবি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
৫. জার্মান
পদসংখ্যা: ০৭
আবেদনের যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচএসসি/সমমান পাসসহ জার্মান ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় ন্যূনতম Level-B1 পাস থাকতে হবে। জার্মানিতে তিন বছর বা অধিক সময় কাজের/স্বনামধন্য কোন প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় জার্মান ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে।
৬. ইতালিয়ান
পদসংখ্যা: ০৮
আবেদনের যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচএসসি/সমমান পাসসহ ইতালিয়ান ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় ন্যূনতম Level-A2 পাস থাকতে হবে। ইতালিতে তিন বছর বা অধিক সময় কাজের/স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের অধিক সময় ইতালিয়ান ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
আরও পড়ুনবিগ ফোর-এর জায়গায় কি উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেন৩০ নভেম্বর ২০২৫বয়সসীমা২২-৪৫ বছর (অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য)।
বেতনঘণ্টাপ্রতি ৮০০ টাকা
আবেদনের নিয়মবিএমইটিয়ের ওয়েবসাইট থেকে নির্ধারিত আবেদন ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করে আবেদনপত্রের স্ক্যান কপি [email protected] ই-মেইলে প্রেরণ করতে হবে।
আবেদনের শেষ তারিখ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
আরও পড়ুনঅফিসার পদে বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগ, কর্মস্থল ঢাকা৩০ নভেম্বর ২০২৫নির্দেশনা ও শর্তগুলো১. প্রাপ্য সম্মানী থেকে ১০% হারে আয়কর কর্তন করা হবে।
২. আমন্ত্রণ প্রাপ্তিসাপেক্ষে নির্বাচিত অতিথি ভাষা প্রশিক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় তাঁর আমন্ত্রণ বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
৩. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, সে ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
৪. প্রার্থীকে দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো উপজেলা/জেলায় কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
বিস্তারিত দেখুন বিএমইটির ওয়েবসাইটে