২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
Published: 3rd, December 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীতে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমার জলসীমানায় প্রবেশ করায় দুই বাংলাদেশি জেলেকে আটক করেছে মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ভোরে উপজেলার হোয়াইক্যং ঝিমংখালীর নাফ নদীর অংশ থেকে তাদের আটক করা হয়। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা এ তথ্য জানান।
আরো পড়ুন:
এশিয়ার ৩ দেশ থেকে দূতাবাস গুটিয়ে নিচ্ছে ফিনল্যান্ড
১২ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
আটকরা হলেন, হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম (৫০) ও উনচিপ্রাং ৩ নম্বর ওয়ার্ড রইক্ষ্যংয়ের অলি হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (১৮)।
সিরাজুল মোস্তফা জানান, মাছ শিকারের সময় নাফ নদী থেকে দুজন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এ সময় বাকি জেলেরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/তারেকুর/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আর ক ন আর ম
এছাড়াও পড়ুন:
একটি কঙ্কাল
দুই চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস আটকে আধশোয়া হয়ে আছি বিছানায়। হাতে তাদামাসা হুকিউরার বই ‘রক্ত ও কাদা ১৯৭১’। রুশা ও ঋভূ বইটা উপহার দিয়েছে আমাকে। লিখেছে, ‘প্রিয় মেজ চাচাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।’
তাদামাসা হুকিউরা আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধি হিসেবে আট মাস বাংলাদেশে অবস্থান শেষে ১৯৭২ সালের মে মাসের এক রাতে ফিরে যান নিজ দেশ জাপানে। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘রক্ত ও কাদা ১৯৭১’ নামে বই লিখতে শুরু করেন ১২ নভেম্বর ১৯৭০–এ। শেষ করেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ। বইয়ের পাতায় পাতায় শিউরে ওঠার মতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নিষ্ঠুরতা আর নির্মমতা। বিস্ময়ে হতবাক হওয়ার মতো সব ঘটনার বর্ণনা। একেবারেই চেনাজানা মানুষ সম্পর্কে অনেক না জানা কথা। যেমন হাতিয়ার রফিক ভাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ২১ বছরের তুখোড় তরুণ। হাতিয়ার মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন তিনি। যুদ্ধের সেই সব ভয়াবহ দিনে রফিক ভাইয়ের সঙ্গে হালিম ভাইয়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছিল।
বইয়ের মাঝখানে তর্জনী দিয়ে রেখেছি। বইয়ের ভূমিকাটুকু পড়া শেষ করেছি মাত্র। হাতে ধরা বইয়ে তর্জনী সেখানেই। তাদামাসা হুকিউরা বইয়ের ভূমিকার শিরোনাম দিয়েছেন, ‘একটি কঙ্কাল’। তিনি ভূমিকা লেখা শুরু করেছেন এভাবে—
রক্ত ও কাদা ১৯৭১
তাদামাসা হুকিউরা
জাপানি ভাষা থেকে অনুবাদ: কাজুহিরো ওয়াতানাবে
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: প্রথম প্রকাশ এপ্রিল ২০১২
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
সহযোহী শিল্পী: অশোক কর্মকার
পৃষ্ঠা: ১৯২
মূল্য: ৩০০ টাকা
বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন
‘আমার এক আত্মীয় মেডিকেল কলেজের ছাত্র। সে নাকি সম্প্রতি ১ লাখ ২০ হাজার ইয়েন দিয়ে একটি কঙ্কাল কিনেছে গবেষণার কাজে সহায়ক হবে বলে। কথাটা শুনে আমার কেন যেন ভালো লাগছিল না। পরে জানা গেল, কঙ্কালটি এক বাঙালি মহিলার, যেমনটি আমি দুশ্চিন্তা করেছিলাম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ২০ বছরের মতো।
‘১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯ মাসে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। দুই কোটি মানুষ হয়েছিলেন গৃহহারা। এই ছোট্ট দেশের অধিকাংশ এলাকা পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে।’
তাদামাসা হুকিউরা ভূমিকা লেখা শেষ করেছেন এভাবে—যেখানে এসে আমার নিশ্বাস আটকে গেছে। আমি গভীর ব্যথা অনুভব করেছি বুকের ভেতর। তিনি লিখেছেন,
‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসে ২ লাখ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে হত্যাও করা হয়। শুনেছি, কঙ্কালের ব্যবসায়ীরা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কঙ্কাল জাপানে আমদানি করেছে। আমার আত্মীয় যে কঙ্কাল কিনেছে, সেটিও সম্ভবত ওইভাবে চলে এসেছে। বাংলাদেশ কি এতই কষ্টে আছে যে কঙ্কাল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়!’
হ্যাঁ, তখন আমাদের ভীষণ খারাপ অবস্থা ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন এক দেশ। ৯ মাস কঠিন মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। সেখানে শুধু লাখ লাখ মানুষই মারা যায়নি, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। শুরু হয়েছে খাবারের জন্য হাহাকার। অভাব মোকাবিলার জন্য সরকারকে ৩০ লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি বা সাহায্য হিসেবে নিতে হয়েছে। বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে তিন গুণ। সংকট দেখা দিয়েছে শিশুখাদ্যের। গুঁড়া দুধের মজুত অনেক কম।
‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসে ২ লাখ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে হত্যাও করা হয়। শুনেছি, কঙ্কালের ব্যবসায়ীরা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কঙ্কাল জাপানে আমদানি করেছে। আমার আত্মীয় যে কঙ্কাল কিনেছে, সেটিও সম্ভবত ওইভাবে চলে এসেছে। বাংলাদেশ কি এতই কষ্টে আছে যে কঙ্কাল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়!’ভয়াবহ দিন গেছে আমাদের। তা–ই বলে কি এত খারাপ অবস্থা ছিল বাংলাদেশের যে বিক্রি করতে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের কঙ্কাল! কারা সেদিন ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে কঙ্কালের ব্যবসা চালিয়েছিল। কারা সেদিন এই দেশ থেকে অর্থের বিনিময়ে পাচার করেছিল বাংলাদেশের সন্তানদের কঙ্কাল! কারা তারা?
প্রচলিত ইতিহাসের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্নমাত্রার ইতিহাস ‘রক্ত ও কাদা ১৯৭১’ আমাদের নতুনভাবে দেশকে জানতে ও ভালোবাসতে শেখায়। অতি সহজ ভাষায় লেখা এই বই আমাদের এক ঘটনা থেকে নিয়ে যায় আরেক ঘটনায়। পড়তে পড়তে আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই মানুষের ভালোবাসায়, আনন্দে ভরে ওঠে মন, আবার শিউরে উঠি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুরতায়। উত্তেজনায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এই বই পড়তে পড়তে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাক্ষী হতে আমাদের সবারই ‘রক্ত ও কাদা ১৯৭১’ পড়া দরকার। যে বই না পড়লে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ আর এই গর্বিত বিজয়কে জানা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।