শিক্ষকদের কর্ম: ঝিনাইদহে ৪৬২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হ
Published: 3rd, December 2025 GMT
ঝিনাইদহে ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমপ্লিট শাটডাউন চলছে। জেলার ৯০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬২টিতে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে ফিরে যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
গত ৮ নভেম্বর তিন দফা দাবিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমবেত হয়। সেখানে তাদের প্রধান দাবি ছিল ১১ গ্রেড কিন্তু প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় তারা এই আন্দোলন করছেন।
আরো পড়ুন:
জবিতে ভর্তির আবেদন ৫ ডিসেম্বর ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বৃদ্ধি
জাবিতে আইএইজির ১৫তম এশিয়ান আঞ্চলিক সম্মেলন
কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে স্কুলে যায় কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা না নেওয়ায় তারা বাড়িতে ফিরে যায়। শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার মোট ৯০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৪৬টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৪৬২ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি। এরমধ্যে শৈলকুপা উপজেলায় ১৮১টি ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ১৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটিও পরীক্ষা হয়নি। মহেশপুর উপজেলার ১৫২টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০টির মধ্যে মাত্র ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। কোটচাঁদপুরে ৭৪টির মধ্যে ৬৮টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে ও ঝিনাইদহ সদরে ২১৬টির মধ্যে ৭টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়নি শিক্ষকরা।
অভিভাবকরা পরীক্ষা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ‘‘এই শাটডাউনটা পরীক্ষার পরে করলেও তো সমস্যা ছিল না।’’
কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশানুর রহমান জানায়, পরীক্ষা দিতে সে বিদ্যালয়ে আসে। স্যারেরা বলে আজকে পরীক্ষা হবে না। তোমরা হার্ডবোর্ড রেখে খেলা করো।
কালীগঞ্জ উপজেলার এসবিজিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশফাকুল কবীর বলেন, ‘‘আমাদের দাবি না মানার কারণে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।’’
কালীগঞ্জ উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিহার সুলতানা বলেন, ‘‘আমরা গত ৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১১তম গ্রেডের জন্য সমাবেশ করেছিলাম। তথন বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানিয়েছিলেন, আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আমরা কমপ্লিট শাটডাউন করছি।’’
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘‘জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি। বাকি ৪ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় ছাড়া পরীক্ষা হয়েছে। জেলার ৪৬২ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।’’
ঢাকা/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ঝ ন ইদহ পর ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘শিক্ষকদের কর্মবিরতি সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থী’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি সরকারি চাকরি আইন ও সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার পরিপন্থী বলে হুঁশিয়ার করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবিলম্বে এ কর্মসূচি থেকে সরে এসে বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এমন সময়ে কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ঝুঁকিতে ফেলবে।
তিন দফা দাবিতে অনড় শিক্ষকরা
তিন দফা দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। তাদের দাবিগুলো হলো—বেতন স্কেলে দশম গ্রেড বাস্তবায়ন, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
সরকার আপাতত সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের প্রস্তাব দিয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ও সেটিকে ‘যৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছে।
দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি দাবি মন্ত্রণালয়ের
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড অনুমোদনের পর সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। পে-কমিশনে বেতন কাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়াও চলমান।
উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পরীক্ষা বর্জনে বিদ্যালয় পর্যায়ে সতর্কতা
এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও বার্ষিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে। পরীক্ষায় কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার উদাসীনতা পরিলক্ষিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি শিক্ষকদের
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সতর্কতা সত্ত্বেও পরীক্ষা বর্জনে অনড় অবস্থান জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ধারাবাহিকতায় দাবি না মানা পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করে তাদের পরীক্ষার কক্ষে ফেরানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পে-কমিশন কাজ করছে এবং প্রতিবেদন পাওয়ামাত্রই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঢাকা/এএএম/রফিক