বাংলাদেশ তিন কনভেনশন অনুসমর্থন করবে বুধবার
Published: 19th, October 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই হচ্ছে প্রথম দেশ, যারা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মোট ১০টি মৌলিক কনভেনশনের সব কটি অনুসমর্থন করতে চলেছে। আইএলওর মোট মৌলিক কনভেনশন ১০টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অনুসমর্থন করেছে ৮টি। আগামী বুধবার দুটি মৌলিক কনভেনশনসহ আরও একটি অর্থাৎ তিনটি কনভেনশন অনুসমর্থন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএলওর এ কনভেনশনগুলোয় সই করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদেশগুলোর শ্রমমন্ত্রীদের ষষ্ঠ ওআইসি সম্মেলনে (১৫-১৬ অক্টোবর) যোগ দিতে গিয়ে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এখন কাতারে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরবেন ২১ অক্টোবর। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ সম্মেলনেও শ্রম উপদেষ্টা আইএলওর তিন কনভেনশন অনুসমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ যে তিনটি কনভেনশনে অনুসমর্থন দেবে সেগুলো হচ্ছে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কনভেনশন ১৫৫, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মান উন্নয়নে প্রচারণামূলক কাঠামো কনভেনশন ১৮৭ এবং কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধবিষয়ক কনভেনশন ১৯০। এর মধ্যে ১৫৫ ও ১৮৭ হচ্ছে আইএলওর মৌলিক কনভেনশন।
শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে প্রথম দেশ, যে দেশ আইএলওর মোট ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুসমর্থন করছে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গত ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইএলও এ তিনটি কনভেনশনে অনুসমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, সই করার পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবোর কাছে তিন কনভেনশন অনুসমর্থনের প্রমাণপত্র কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। আগামী ১৭ থেকে ২৮ নভেম্বর জেনেভায় আইএলওর পরিচালনা পর্ষদের ৩৫৫তম অধিবেশন বসবে। এ অধিবেশনে শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি দল যাচ্ছে জেনেভায়। তখনো আইএলওর মহাপরিচালকের কাছে তা হস্তান্তর করা হতে পারে।
১৯১৯ সালের ১৯ এপ্রিল ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী গঠিত হয় আইএলও, যার বর্তমান সদস্য ১৮৭। এ পর্যন্ত আইএলওর মৌলিক ৮টিসহ ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকলে অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ।
কোন কনভেনশনে কী আছে
আইএলও ১৯৮১ সালে পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য কনভেনশন গ্রহণ করে। এটি আইএলও কনভেনশন ১৫৫, যা অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ) হিসেবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত মোট ৮৩টি সদস্যরাষ্ট্র এ কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। কর্মক্ষেত্রে ওএসএইচ সংস্কৃতি গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলোর আস্থা অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে জানায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
আইএলও কনভেনশন ১৮৭ গৃহীত হয় ২০০৬ সালে। ১৫৫ ও ১৮৭ মোটামুটি কাছাকাছি ধরনের। কনভেনশন ১৮৭ অনুসমর্থন করেছে এ পর্যন্ত ৬৯টি সদস্যদেশ। এ কনভেনশনের মূল উদ্দেশ্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা।
আইএলও কনভেনশন ১৯০ গৃহীত হয় ২০১৯ সালে। এটি অনুসমর্থন করেছে ৪৯টি সদস্যদেশ। এটি অনুসমর্থনের ফলে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে ও কর্মক্ষেত্রে কর্মরত নারী কর্মী ও শ্রমিকদের অপ্রত্যাশিত আচরণ ও হয়রানি থেকে মুক্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ল ক কনভ নশন ন কনভ নশন আইএলওর ম উপদ ষ ট সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গলিতে গলিতে পড়ে ছিল মানুষের মরদেহ
১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল শহরের বাসিন্দারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেদিন মধ্যরাতে কীটনাশক কারখানায় দুর্ঘটনার পর হাজারো ঘুমন্ত মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে চুপিসারে হাজির হয়েছিল প্রাণঘাতী গ্যাস। যার প্রভাবে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঝরে যায় কয়েক হাজার নিরীহ প্রাণ। যে ক্ষত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই শিল্পবিপর্যয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
কী হয়েছিল সেদিন
সেদিন ছিল ২ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে। ভোপালের প্রায় ৯ লাখ বাসিন্দা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ইউনিয়ন কার্বাইড কীটনাশক কারখানায় তখন রাতের পালার কাজ শুরু হয়েছে।
কিছুক্ষণ পরে শ্রমিকেরা শারীরিক প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে শুরু করেন। কীটনাশক কারখানায় এ ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া ছিল স্বাভাবিক। শ্রমিকেরা পরিস্থিতি দেখার জন্য চা-বিরতি পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
একটা ট্যাংকের ভেতর চাপ ও তাপ বাড়তে বাড়তে একসময় তা বিপৎসীমার ওপর চলে যায়। সোয়া ১২টার দিকে বিস্ফোরণে কারখানাটি কেঁপে উঠলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অতিরিক্ত চাপে ট্যাংকের একটি ভালভ ভেঙে গেলে ভেতর থেকে গ্যাস বের হতে শুরু করে। বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়া রোধের উদ্দেশ্যে স্থাপিত যন্ত্র ‘ভেন্ট গ্যাস স্ক্রাবার’ নষ্ট থাকায় কারখানা থেকে বেরিয়ে যায় ৪০ টনের বেশি বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস।
বিষয়টি প্রথমে টের পায় কারখানা এলাকার কিছু বস্তিবাসী। তারা নাকে একটা দুর্গন্ধ অনুভবন করে। এর প্রভাবে তাদের চোখ জ্বালাপোড়া শুরু করে। প্রথম দিকে বিষয়টিকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কেউ কেউ মনে করে, আশপাশে কোথাও হয়তো শুকনো মরিচ পোড়ানো হচ্ছে।
কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ঝাঁজালো গন্ধ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানকার বাসিন্দাদের নিশ্বাস নিতে কষ্টে হতে শুরু হয়। তীব্র গন্ধের কারণে অনেকে বমি করতে থাকে।
কারখানার লাগোয়া বাসিন্দাদের কাছে সেই ‘গ্যাসের রাতের’ ঘটনা এখনো দুঃস্বপ্নের স্মৃতি