রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে শিক্ষক নিয়োগে কোটা বৈষম্য ও অনিয়মের প্রতিবাদে জেলায় বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে কোটাবিরোধী ঐক্যজোট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ৩টায় জেলার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা রাকিব হাসান, শিক্ষার্থী ইব্রাহিম রুবেল, নুরুল আলম, রুবেল হোসেন, রেজাউল করিম রাজু ও ইমাম হোছাইন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোটা বৈষম্য বাদ দিয়ে সঠিকভাবে নিয়োগ প্রদানের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানোর পরেও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সমাধান দেয়নি। তাই, বাধ্য হয়ে হরতাল দিতে হয়েছে।

বক্তারা বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোনো কোটা উল্লেখ নেই এবং শূন্যপদের সংখ্যাও পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি। সরকার নির্ধারিত সাত শতাংশ কোটা বিধান উপেক্ষা করে পরিষদ কর্তৃপক্ষ ৭০ শতাংশ উপজাতি ও ৩০ শতাংশ বাঙালি কোটা অনুসারে নিয়োগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা দুঃখজনক। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কোটা প্রথার নামে বৈষম্য আর মেধা হত্যার সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।

ঢাকা/শংকর/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

যে জমিতে ঘাস জন্মায় না, সেখানে আমি সোনা ফলাই

দৃঢ় মনোবল আর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো বাধা পেরোনোই কঠিন নয়। দরকার ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের জীবনগাথায় লিখে চলেছেন অদম্য জয়ের গল্প। তাঁদের সেই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা পেরিয়ে সমাজের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। তেমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এ আয়োজন। আজ জানব পটুয়াখালীর কুয়াকাটার বাসিন্দা মো. আল আমিন শিকদারের জীবন-গল্প।

সাগরপাড়ের মানুষ আমি মো. আল আমিন শিকদার। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাগরতীরে বাড়ি আমার। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে সাগরের কাছে জমিতে নোনা পানির প্রভাব এতটাই বেশি যে, কৃষিকাজে কখনো লাভের মুখ দেখা যেত না। শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান চাষের সুযোগ পেতাম। বছর শেষে যে ফসল পেতাম তাতে খরচ উঠত না। অন্যান্য মৌসুমি ফসল যে চাষ করব, সেটিও সাহসে কুলাতো না। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য ফসলও এখানে ঠিকমতো জন্মায় না।  

বছরের পর বছর এ রকমই চলছে—এই দুরবস্থা শুধু আমার একার না। সাগরপাড়ের সব কৃষকই কমবেশি এ সমস্যা মোকাবিলা করছে। ফলে আমার উপার্জন দিন দিন কমে যাওয়ায় হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম। একদিন গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে জানতে পারলাম, আলীপুরে ব্র্যাকের একটা অফিস আছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সময়োপযোগী ফসলের চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটা শোনার পর আমার মনে আশার সঞ্চার হলো। আমরা কয়েকজন মিলে যোগাযোগ করলাম।

তারপর একদিন ব্র্যাকের কয়েকজন ভাই আমাদের গ্রামে আসলেন। সব সমস্যা শুনে আমাদের অভয় দিলেন। বললেন, লবণাক্ত জমির কারণে এই এলাকায় চাষাবাদের পদ্ধতি বদলাতে হবে। নতুন ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়া যাবে। তারা পরামর্শ দিলেন জমিতে সূর্যমুখী ফুল আর ভুট্টা চাষের, পাশাপাশি চাষের নিয়মও দেখালেন। তাদের থেকেই জানলাম—সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ হয়, সেটি মণ হিসাবে বিক্রি হয়। আর বীজ থেকে তেল হয়। ভুট্টা থেকে হাঁস-মুরগি আর গরুর খাবার হয়। এগুলোর চাহিদা সারা বছরই থাকে। তাদের এসব কথায় সাহস পেলাম।

ব্র্যাক থেকে আমাদের চাষপদ্ধতি শেখানোর পাশাপাশি সারও দেওয়া হয়, এমনকি জমিতে পানি দেওয়ার জন্য সেচযন্ত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটু দ্বিধা কাজ করল, আসলেই কি এই চাষপদ্ধতি কাজে লাগবে? পরিশ্রম কি বৃথা যাবে? কিন্তু চেষ্টা না করলে তো ফলাফল জানা যাবে না। আল্লাহর ভরসায় জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করলাম। কিছুদিন বাদে সূর্যমুখী গাছের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার হতাশাও কমতে থাকল। পুরো জমি সূর্যমুখী ফুলে ভরে গেল। অনেক বছর বাদে আমি আশার আলো দেখলাম। প্রথম ফলনে বেশ কয়েক মণ বীজ পেলাম।

কিন্তু কিছুদিন বাদেই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলাম। বীজ থেকে তেল বের করতে হবে। এতে লাভ বেশি। কিন্তু তেল ভাঙাতে যেতে হয় বাজারে। সে তো অনেক দূর। যাওয়া-আসা মিলিয়ে অনেক অসুবিধা। বাধ্য হয়ে আবার ব্র্যাক অফিসের সাহায্য চাইলাম। বললাম, আমাকে যদি একটা তেল ভাঙানোর মেশিনের ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমার সঙ্গে গ্রামের অনেক কৃষকেরও উপকার হবে।

মো. আল আমিন শিকদারের নানা চড়াই-উতরাই পেরোনোর এ যাত্রায় পাশে ছিল তাঁর স্ত্রী। আর তাঁদের পাশে ছিল ব্র্যাক

সম্পর্কিত নিবন্ধ