সব প্রতিবন্ধীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে: উপদেষ্টা
Published: 3rd, December 2025 GMT
জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে দেশের সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি বলেছেন, “সঠিক তথ্যভিত্তিক সেবা দিতে হলে সারা দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিবন্ধনের আওতায় আনতেই হবে। এজন্য পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত সচেতনতা জরুরি।”
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ৩৪তম আন্তর্জাতিক ও ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ জানান, অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু নিজের সন্তানের খোঁজ রাখলেই হবে না; পাশের বাড়ির বিশেষ মেধাবী শিশুটিও নিবন্ধিত কি না, সেটিও জানতে হবে।”
উপদেষ্টা জানান, ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দ নয়, ‘বিশেষ মেধাবী’ শব্দটি তিনি ব্যবহার করতে চান।
আগামী বছর ডিসেম্বরের পর সরকার থাকুক বা না-থাকুক প্রতিবন্ধী সেবা উন্নয়ন কার্যক্রম চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ১২টি ভিন্ন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রতিবন্ধিতার জন্য নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করে সমস্যা, সমাধান ও বাস্তবায়ন তুলে ধরার নির্দেশনা দেন শারমীন মুরশিদ।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় যেসব মানুষ চোখ, হাত বা পা হারিয়েছেন, তাদেরকেও এই মন্ত্রণালয়ের আওতায় এনে বীরের মর্যাদা দিতে হবে।”
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্দোলন কিংবা দাবি প্রসঙ্গে তিনি জানান, দাবি-দাওয়ার ভাষা পরিবর্তনের সময় এসেছে—‘দাবি’র পরিবর্তে ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি ব্যবহার করা যায় কি না, তা ভাবার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এমডি বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, “দুর্ঘটনা বা বার্ধক্যে যেকোনো মানুষেরই প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহনশীল আচরণ সমাজের দায়িত্ব। বর্তমানে ফাউন্ডেশন তাদের ১০৩টি সেবা কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি ৪৫টি থেরাপি ভ্যান এবং ৩৪টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের বেতন প্রদানসহ নানা সেবা দেওয়া হচ্ছে।”
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান জানান, দেশে নিবন্ধিত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এখন ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার। তাদের মধ্যে ৩৪ লাখের বেশি মানুষকে সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এর লক্ষ্য—শতভাগ প্রতিবন্ধীকে সেবার আওতায় আনা।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলাও একই স্থানে শুরু হয়েছে। যেখানে ৩২টি সংগঠন অংশ নিচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট বন ধ ত ন বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গৌরবময় বিজয়ের মাস শুরু
আজ পহেলা ডিসেম্বর। মহান বিজয়ের মাসের প্রথম দিন। বিজয়ের মাস, বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জনের মাস। ১৯৭১ সালের এই মাসেই অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা।
মাসের প্রথম দিন থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে আসতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধারাও এগোতে থাকেন রাজধানী ঢাকার দিকে। একে একে বিভিন্ন রণাঙ্গনে উড়তে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাক্ষর এবারের বিজয়ের মাস নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হবে। শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবে বাঙালি জাতি।
বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় এ মাসে। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় আসে এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।
বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল-শামসদের সহযোগিতায় হানাদার গোষ্ঠী দেশের মেধাবী, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।
মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবারের বিজয় উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার বাণী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশসহ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ওই দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি বেতার বা টিভি চ্যানেলে সঠিক মাপ এবং রংসহ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধি-বিধান জনসাধারণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। তবে ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আলোকসজ্জায় আলো জ্বালানো যাবে না। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলায় একত্রিশ বার তোপধ্বনি করা হবে।
ওই দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে (সকাল ৬টা ৩৪ মিনিট) রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও বিদেশি কূটনীতিকরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সারা দেশে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মশাল রোড শোর মাধ্যমে এবারের উদ্যাপন কর্মসূচি শুরু করবে দলটি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মহাসমাবেশ করারও ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা/ইভা