জকসু নির্বাচন: ছেলে এজিএস প্রার্থী, নির্বাচনী দায়িত্বে বাবা
Published: 19th, November 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন যেমন তাদের অবস্থান মজবুত করতে ব্যস্ত, তেমনি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
সেই প্রশ্নের কেন্দ্রে এবার স্থান পেয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মারুফ। তিনি বাম জোট থেকে জকসু নির্বাচনে মাওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেলে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে, তার বাবা হল সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরো পড়ুন:
জকসু নির্বাচন: কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ২৪৯ মনোনয়ন জমা, চলছে বাছাই
জকসু: জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অনিকের সম্মানে পদ খালি রাখল ছাত্রশক্তি
এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে ঘিরে একটি গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
জানা গেছে, মারুফের বাবা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সেকশন অফিসার। তিনি নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বাম সংগঠনগুলোর জোট হল সংসদ নির্বাচনেও প্যানেল দিয়েছে। যেখানে ছেলে প্যানেলভুক্ত হয়ে নির্বাচন করছে, সেখানে বাবা নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারে কি? এটা সরাসরি স্বার্থসংঘাতের উদাহরণ। একজন কর্মকর্তা যখন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকেন, তখন তার কোন অবস্থান, নির্দেশনা বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে একজন প্রার্থীর অভিভাবক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকায় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন অনেক সময় সীমিত জনবল দিয়ে করতে হয়। তবে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিষয়টি নিয়ে আরো ভাবা উচিত ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, একজন কর্মকর্তা যখন নির্বাচনী কাজে জড়িত থাকেন, তখন তার আত্মীয় নির্বাচনে অংশ নিলে স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নেয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিষয়টি আরো আগেই প্রশাসনের নজরে আসা উচিত ছিল। নির্বাচনী দায়িত্ব বণ্টনের আগে যদি বিষয়টি বিবেচনা করা হত, তাহলে এমন বিতর্ক সৃষ্টি হত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে নৈতিকতার মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন পরিস্থিতিতে আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “এই ঘটনাটি পুরো নির্বাচনের স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার ছেলে বামপন্থি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে—এমন কোনো ছোটখাট বিষয়েও সুযোগ রাখা উচিত নয়। কমিশনের দায়িত্বে থাকা কারো আত্মীয় বা সন্তান নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিশেষ সুবিধা পেলে তা কোনো পক্ষই মেনে নেবে না। এটি সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং এর মাধ্যমে একটি দল সুবিধা পেতে পারে, এটি স্পষ্ট।”
তবে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রিজাইডিং অফিসার আঞ্জুমান আরা বলেন, “সে শুধু নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সঙ্গে ছিল। এর বাইরে কোনো ধরনের দায়িত্ব বা কার্যক্রম তার হাতে আর দেওয়া হবে না।”
সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড.
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জকস জকস ব ষয়ট করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থা, ইসলাম ও পালনবাদ: ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন
মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। না হতে পারলেন মাওলানা, না রাজনীতিবিদ, না পারলেন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে, না পারলেন ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে। কিন্তু মাওলানা কি আদৌ সমাজতন্ত্র বা ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক দর্শনটা আসলে কী?
মাওলানার চীন সফর–পরবর্তী সংবর্ধনাকে ঘিরে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিনও ভাসানীর মাথায় ছিল তালপাতার টুপি, পরনে লুঙ্গি। তাঁর বেশভূষা দেখে শ্রোতাদের মধ্যে গুনগুন মন্তব্য, ‘ইয়ে তো মিসকিন হ্যায়!’ কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে ভাসানী বক্তব্য শুরু করতেই সেই শ্রোতারা বলল, ‘ইয়ে তো মাওলানা হ্যায়!’
রাজনৈতিক বক্তব্য শুনে তারা এবার অবাক হয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘আরি বাহ্, ইয়ে তো পলিটিশিয়ান হ্যায়!’ যখন ভাসানী বিশ্ব মোড়লদের শোষণ–নিপীড়ন সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন, তখন ওই একই দর্শকশ্রোতা বলে উঠল, ‘হায় আল্লাহ, ইয়ে তো এস্টেট মেন হ্যায়!’ কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়:
‘দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,
যেন মহাপ্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ
সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি
উত্তরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তার বিচর্ণিত দক্ষিণ বাংলার
শবাকীর্ণ হু হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের
দৃশ্যাবলীময়, শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার।’
(সফেদ পাঞ্জাবী/শা.রা.)
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর গঠিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতির’র মাধ্যমে কি প্রচলিত ধারণার ইসলমি খেলাফত চেয়েছেন নাকি ইসলামি সমাজতন্ত্র চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক পরিভাষাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষিত ইতিহাসবিদের কাছেও অবোধ্য-দুর্বোধ্য। আমরা তাঁর তিনটি রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে বোঝার চেষ্টা করব। রুবুবিয়াৎ, খুদায়ে খিদমাতগার এবং হুকুমতে রাব্বানিয়া।
কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই।রুবুবিয়াৎ বা পালনবাদকোরআনের অনুবাদ করতে গিয়ে অধিকাংশ অনুবাদক ‘রব’ শব্দের অর্থ করেছেন ‘প্রভু’, যা ইসলামি দৃষ্টিতে শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করা। মাওলানা ভাসানী সচেতনভাবে এর অনুবাদ করেছেন ‘পালনবাদ’। একজন পালনকর্তা হিসেবে আল্লাহ সবাইকে খাওয়ান, পরান, আলো–বাতাস দেন। জীবজন্তুকে খাওয়ানোরও দায়িত্ব নেন। কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই। আমরা সবাই আল্লাহর প্রতিনিধি। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর যা যা দায়িত্ব, আমাদের ওপরও তা-ই দায়িত্ব। এটা যে ভাসানীর মনগড়া ব্যাখ্যা, বিষয়টা এমন না। তাঁর ব্যাখ্যার পেছনে কোরআনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে বলা হয়েছে। (২:১৩৮)
মাওলানা ভাসানীর হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি থেকে প্রকাশিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া: পূর্বশর্ত’ গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধে লেখক শামসুল হক বলেন, ‘আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী মানবজীবনে রূপায়িত হলে কতই না সুন্দর হবে।...রব হিসেবে এই সৃষ্টিকে পালন অর্থাৎ রুবুবিয়াতের কাজ করাই আল্লাহর সবচাইতে বড় কাজ। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরও প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে রুবুবিয়াৎ পালন।’
রুবুবিয়াতের চারটি স্তর—বিয়ের আগে, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে, সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে।
আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০—১৭ নভেম্বর ১৯৭৬)