সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস জুড়ে ধ্বংসস্তূপ, থমথমে পরিবেশ
Published: 27th, October 2025 GMT
সাভারের আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার (২৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সংঘর্ষ থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সহায়তা তারা পাননি।
আরো পড়ুন:
পাবনায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২
কুবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ২
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের ফটকে দেখা যায় আগুনে পোড়ার দৃশ্য। বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচ, কাঠসহ ভাঙা বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভাঙচুর করা অবস্থায় ছিল পাঁচটি যানবাহন। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনেও চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। পুরো ভবনের জানালার থাই গ্লাস ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। ভেতরের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় কাগজপত্র ও ভাঙা আসবাবপত্র।
শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রবিবার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে বসে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী থুতু ফেললে অসতর্কতাবশত সেখান দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইট নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।
পরে ড্যফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় ক্যাম্পাসে দাঁড় করিয়ে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়া হয়। একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করা হয়। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘ড্যাফোডিলের এক ছাত্রের গায়ে থুতু লাগা থেকে ঘটনার শুরু। পরবর্তীতে ওই ছাত্র সরিও বলেছে। তারা বিষয়টিকে সেভাবে নেয়নি, তাকে সেখানে মারধর করে। এরপর তাকে আটকে রাখে। যখন বিষয়টা আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা এগোই। এভাবেই প্রথম অবস্থায় হয়। আমরা ঢিল ছুড়ছি, এমন পর্যন্তই ছিল।”
তিনি বলেন, “ক্যাস্পাসের ভেতরে গেলে দেখবেন, অ্যাকাউন্টসে কোনো টাকা নাই, পাঁচটা গাড়ি ভাঙছে। প্রত্যেকটা রুমে রুমে সব ভাঙছে। কিছুই নাই। এগুলা কী ধরনের আচরণ। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এটা কীভাবে পারে।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। মেয়েদের হলের কলাপসিবল গেটে ভাঙচুরের চেষ্টা করে, ইট ছুড়ে মারে। সেগুলো মেয়েদের গায়ে লেগেছে। আমাদের পুরো ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে।”
সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা হতে পারে? এটি পরিকল্পিত। আমাদের শিক্ষার্থী আহতের সংখ্যা আনুমানিক অর্ধশতাধিক হতে পারে।”
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘অসতর্কতাবশতই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেলা থুতু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে সরি বলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু, রাতে এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরতরা আমাদেরই সন্তান, আমাদের শিক্ষার্থী। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।”
সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, ‘‘এখনো আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।”
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম আ্যান্ড অপস) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ঝগড়া-বিবাদ, ভাঙচুর যা হয়েছে, রাতেই হয়ে গেছে। ঘটনাটি কেন ঘটল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত অভ য গ ড য ফ ড ল ইউন ভ র স ট র ইউন ভ র স ট র শ ক ষ র থ ইউন ভ র স ট র প র এক শ ক ষ র থ আম দ র স ঘর ষ এ সময় ব ষয়ট র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়িতে থাকা টাকা হাতিয়ে নিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে হত্যা: পুলিশ
রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭০) এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে (৬০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মোরসালিন ইসলাম (২৫) নামে এক টাইলস মিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ফাজিলপুর শেরমস্ত গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মোরসালিন একই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।
আরো পড়ুন:
লালবাগে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সালিশ বৈঠকে ভ্যানচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
আরো পড়ুন: স্বামী-স্ত্রী হত্যা: যোগেশ চন্দ্রকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায়
ডিবি পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে মোরসালিন বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে টাইলস লাগানোর কাজ করেন। ওই বাড়িতে প্রচুর টাকা আছে এমন ধারণা থেকে তার মনে লোভ জন্মে। এ থেকেই তিনি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে নিজের বাড়ির একটি চায়নিজ কুড়াল নিয়ে মোরসালিন যোগেশ চন্দ্রের বাড়ির পেছনে যান। কাঁঠাল গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে তিনি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি সুবর্ণা রায়কে ও পরে যোগেশ চন্দ্র রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর আলমারির তালা ভাঙ্গেন মোরসালিন। সেখানে কোনো টাকা না পেয়ে তিনি বাড়িটি থেকে বের হন। হত্যায় ব্যবহৃত কুড়ালটি পাশের পুকুরে ফেলে দেন।
আরো পড়ুন: চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ ও সুবর্ণাকে
ডিবি পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থার সংকট এবং ৮ হাজার টাকার ঋণ তাকে এই পথ বেছে নিতে প্ররোচিত করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন মারুফ বলেন, “গত ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন মোরসালিন। টাইলসের কাজ করার সময় বাড়িটিতে অনেক টাকা রয়েছে এমন ভুল ধারণা তৈরি হয় তার মধ্যে। ঋণের চাপ থেকেই তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেন।”
আরো পড়ুন: রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে হত্যা
তিনি আরো বলেন, “হত্যার পর আলমারির তালা ভাঙ্গেন মোরসালিন। সেখানে কোনো টাকা না পেয়ে খালি হাতে পালিয়ে যেতে হয় তাকে। ঘটনাস্থল থেকে পুকুরে ফেলা কুড়ালটিও উদ্ধার করা হয়েছে।”
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ