ক্যানসার, সংসার, ব্যবসা—সাহসে রাঙানো সোহানীর জীবন
Published: 28th, November 2025 GMT
ক্যানসারে যেদিন স্বামীর মৃত্যু হলো, সেদিন ছিল বড় মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা। ড্রয়িংরুমে কফিনে তখন স্বামীর নিথর দেহ। শোক আর দায়িত্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেয়েকে সোহানী হোসেন বলেছিলেন, ‘জীবন ও সময় কারও জন্য থেমে থাকে না।’ এ কথা শুনে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল মেয়ে। ফিরে এসে কফিন ছুঁয়ে শেষবারের মতো বাবার মুখ দেখেছে মেয়ে।
নিজের জীবনের গল্প বলতে বলতে এভাবেই অনেক বছর আগের এক শোকের সকালে ফিরে গেলেন সোহানী হোসেন। তখন সোহানীর পাঁচ মেয়ের সবচেয়ে ছোট মেয়ের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর দুই মাস।
সোহানী বলেন, ‘মেয়ে তখন আমি বেরোলেই কাঁদত। বাইরে যাওয়ার জন্য রাখা কাপড় দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করত। শৈশবটা দেখতে পারিনি ওর। একসময় দেখলাম, ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে, ও কাঁদতে ভুলে গেছে। অথচ এখনো স্বপ্নে দেখি, আমার এই মেয়ে খুশিতে দৌড়াচ্ছে, খেলছে।’
স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুর পর রাশ টেনে ধরা
সোহানীর স্বামী মোবারক হোসেন রত্ন—পাবনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার। তাঁর মৃত্যুর পর সংসার ও ব্যবসার সব দায়িত্ব এসে পড়ে সোহানীর কাঁধে। স্বজনদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তির মামলা, পাঁচ মেয়েকে একা বড় করাসহ ব্যবসার জটিলতা—সবই সামলাতে হয়েছে একা হাতে।
২০১২ সালে নিজের শরীরে ধরা পড়ে স্তন ক্যানসার। এরপর শুরু হয় সোহানীর আরেক যুদ্ধ। চিকিৎসা চলেছে, জীবনও চলেছে। চলেছে ব্যবসার লড়াইও।
সোহানীর স্বামী মোবারক হোসেন রত্ন—পাবনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার। তাঁর মৃত্যুর পর সংসার ও ব্যবসার সব দায়িত্ব এসে পড়ে সোহানীর কাঁধে। স্বজনদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তির মামলা, পাঁচ মেয়েকে একা বড় করাসহ ব্যবসার জটিলতা—সবই সামলাতে হয়েছে একা হাতে।রূপকথার মতো এক পরিসর
গত ৩১ অক্টোবর পাবনার বাংলাবাজারের রূপকথা ইকো রিসোর্টে বসে কথা হয় সোহানীর সঙ্গে। বিশাল পরিসরের এই রিসোর্টের চারপাশে সবুজ আর শৌখিনতার ছোঁয়া। পাবনাবাসীর বিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে রিসোর্টটি। বিকেলে টিকিট কেটে অনেকেই এখানে আসেন সময় কাটানোর জন্য।
রূপকথা ইকো রিসোর্ট ছাড়াও স্বামীর নামে নামকরণ করা জালালপুরের রত্নদ্বীপ রিসোর্টেরও মালিক সোহানী। ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে অতিথিরা পাবনা গেলে বেশির ভাগই এ দুটি রিসোর্টে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঁচ মেয়ের সঙ্গে মা সোহানী হোসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস র
এছাড়াও পড়ুন:
ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।
কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।
এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।
গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’
এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।
তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।
কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।
আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।