মুন্সীগঞ্জ শহরের পিটিআই ইনস্টিটিউশনের পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ক্যাম্পাসে তুমুল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভে স্থানীয়রা যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাড়ী শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায়। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম রোমান মিয়া। বাড়ি সিলেটের লাখাই উপজেলায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) স্কুল ছুটির পর শিক্ষক রোমান মিয়া ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বাথরুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বাড়ি ফিরে শিশুটি তার মাকে ঘটনা জানালে সাপ্তাহিক ছুটির পর রবিবার অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটির সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেন। 

পিটিআইয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল।

উত্তর ইসলামপুর এলাকার অভিভাবক শিমু বেগম বলেন, ‘‘আমরা সন্তানদের নিরাপদ পরিবেশে স্কুলে পাঠাই। শিক্ষকই যদি এমন অপরাধ করে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা থাকে কীভাবে?”

এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসন মাইকিং করে অভিভাবক ও স্থানীয়দের শান্ত থাকার আহ্বান জানায়।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, “পিটিআইয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে আমরা তাকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে পাঠাই। বাদীপক্ষ মামলা করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। অভিযোগ যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।”

এ ঘটনায় মামলা হলে রোমানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

ঢাকা/রতন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহের যে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ

প্রতিবছর দুই শতাধিক দেশে অনুষ্ঠিত হয় বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহ বা জিইডব্লিউ। এ আয়োজন করা হয় উদ্যোক্তা সংস্থা গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন)–এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে। এসব আয়োজনে নতুন ভাবনা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই সপ্তাহ শুধু আয়োজন নয়; বরং একটি জাতীয় আন্দোলন হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ পটভূমিতে দুটি বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। প্রথমত, বাংলাদেশের স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতি। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহে আমাদের অংশগ্রহণ ও গুরুত্ব।

বাংলাদেশের স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতি

বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য গতি দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১ হাজার ২ শতাধিক স্টার্টআপ সক্রিয় রয়েছে, যা সৃষ্টি করেছে ১৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান। এ স্টার্টআপের ফলে ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরই উন্নয়নশীল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সূচকে ৭৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে দেশ। এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চালিকা শক্তি। প্রথমত, দেশের যুব জনসংখ্যা ও ডিজিটাল সংস্কৃতি। দ্বিতীয়ত, চালিকা শক্তি হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা। তৃতীয়ত, ফিনটেক, লজিস্টিকস, ই-কমার্স, এডটেকসহ বিভিন্ন সেক্টরে উদ্ভাবন।

উদ্ভাবন ও নেটওয়ার্কিংয়ের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম

প্রতিবছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহ এখন একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা আন্দোলন। ওই সপ্তাহে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হাজার হাজার ওয়ার্কশপ, প্রতিযোগিতা, মেন্টরিং, স্টার্টআপ শোকেস পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশেও নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুব সংগঠন, চেম্বার ও উন্নয়ন সংস্থা ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহর গুরুত্ব অনেক বেশি। এ আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে উঠছে। বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তা শিক্ষা জনপ্রিয় হচ্ছে। একদিকে স্থানীয় উদ্যোগ আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, বিনিয়োগ ও মেন্টরিংয়ের সুযোগ বাড়ছে। অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ অনুপ্রেরণার দেশ’ হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করছে।

প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের যে নতুন জাগরণ, সেটি আরও শক্তিশালী হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কনসোর্টিয়াম, ইনোভেশন হাব ও টেকভিত্তিক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইনকিউবেশন, আইটি স্কিল ট্রেনিং, বিজনেস আইডিয়া প্রতিযোগিতা ও মেন্টরিং প্রোগ্রাম দেশের স্টার্টআপ যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

এ ছাড়া দেশের তরুণদের মধ্যে এখন ‘নিজে কিছু করার’ মানসিকতা অনেক বেশি, যা ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল ট্রেড, ই-কমার্স, এডটেক, হেলথটেক ও অ্যাগ্রিটেক খাতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। গ্রামীণ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণেও নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। অনেক নারী ক্ষুদ্র উদ্যোগ থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ব্যবসাকে বড় করে তুলছেন।

বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি আয়োজন নয়, এটি নীতি, প্রস্তুতি ও সম্ভাবনার মানচিত্র। বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহ কেন্দ্র করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বাজারকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে সরকারি নীতিনির্ধারকেরা ‘স্টার্টআপ সহায়ক ইকোসিস্টেম’ তৈরি করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল উইন্ডো পলিসি, স্টার্টআপ ভিসা, উদ্যোক্তা করছাড় ইত্যাদি।

বাংলাদেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি এখন আর শুধু শহরভিত্তিক নয়; বরং প্রান্তিক পর্যায়ের তরুণদের মধ্যেও উদ্ভাবনী মনোভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, কৃষিপ্রযুক্তি, স্মার্ট সাপ্লাই চেইন, নবায়নযোগ্য শক্তি, গ্রামীণ হস্তশিল্পের ডিজিটাল রূপান্তরসহ বহু স্থানীয় উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক বাজারে নজর কাড়ছে। জিইএন বাংলাদেশ এ পরিবর্তনকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক কমিউনিটি চ্যাপটার, স্কুল-কলেজ উদ্যোক্তা ক্লাব এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে।

এসব উদ্যোগ শুধু স্টার্টআপ তৈরির সংখ্যা নয়; বরং একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক ও আত্মনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে সহায়ক। এদিকে বিদেশফেরত তরুণদের অভিজ্ঞতাও এআই, ব্লকচেইন, রোবোটিকস ও ক্লাউড স্কিল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরও গতিশীল করে তুলছে। এ সমন্বিত অগ্রযাত্রাই বাংলাদেশের উদ্যোক্তা খাতকে আগামী দশকে একটি ট্রিলিয়ন ডলার সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

আমাদের করণীয়

উদ্যোক্তা সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহর এ সুযোগ কাজে লাগাতে আমরা কয়েকটি সুপারিশ নিয়ে ভাবতে পারি। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তরুণদের উদ্যোক্তা শিক্ষা দেওয়া। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো। বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহর মতো আন্দোলনকে শুধু ধামাকা আয়োজন নয়; বরং সিস্টেম হিসেবে গড়ে তোলা, যা মেন্টরিং প্ল্যাটফর্ম, ইনকিউবেশন সেন্টার, স্টার্টআপ ক্যাম্পাসগুলোকে নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশে উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ সংস্কৃতি ইতিমধ্যে একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। আর বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সপ্তাহর মতো আন্তর্জাতিক আয়োজন তরুণদের জন্য মূলত ভাগ্য বদলের সুযোগ এনে দেয়। ‘টুগেদার উই বিল্ড’ স্লোগান শুধুই শব্দ নয়, এটি একটি প্রয়াস, এটি একটি সংকল্প। আসুন, আমরা মিলেমিশে কাজ করি, নতুন উদ্ভাবন গড়ি, জাতিকে গড়ি। যেখানে স্টার্টআপ শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক পরিবর্তনের এক শক্তি।

ড. মো. সবুর খান চেয়ারম্যান, গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশ

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ