বাবার ঋণ আদায়ে তুলে নেওয়া হলো ছেলেকে, পরীক্ষা দিতে পারল না
Published: 23rd, November 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে বাবার ঋণের জন্য ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছেন ঋণের এক কারবারি। ওই ছেলের আজ রোববার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একটি ট্রেডের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ তার পরীক্ষা দেওয়া হলো না।
ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মুংলী গ্রামে। তার বাবার নাম সেলিম হোসেন। ঋণগ্রস্ত হয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে সেলিম হোসেন সপরিবার আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকার কারণে তাঁর ছেলের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এরপর তাকে একটি কারিগরি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়।
ঋণগ্রস্ত সেলিম হোসেনের ছেলের পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজশাহী নগরের লোকনাথ উচ্চবিদ্যালয়ে। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ওই শিক্ষার্থী রাজশাহী শহরে তার খালার বাড়িতে এসেছিল। ৬ নভেম্বর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ তার একটি ট্রেডের পরীক্ষা ছিল। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ছেলেটিকে রাজশাহী নগরের ভুবনমোহন পার্ক এলাকা থেকে আটক করা হয়। ফলে আজ সে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
ওই শিক্ষার্থীর এক আত্মীয় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটিকে সোহান নামের এক ব্যক্তি আটক করে নিয়ে গেছেন। সোহানের বাড়ি চারঘাট উপজেলার ফরিদপুর এলাকায়। এ ঘটনায় রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানা ও চারঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য গিয়েছিলেন স্বজনেরা, কিন্তু পুলিশ নেয়নি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সোহান প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, তিনি সেলিম হোসেনের ছেলেকে আটক করেছেন এবং তাঁর জিম্মায় তাকে রেখেছেন।
সোহান দাবি করেন, ছেলেটির বাবা সেলিম হোসেন তাঁর কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই টাকা তাঁর (সোহান) নিজের নয়, অন্য জায়গা থেকে ঋণ করে এনে দিয়েছিলেন। এ জন্য আরও ১৪ লাখ টাকা তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।
এ–সংক্রান্ত সব প্রমাণপত্র রয়েছে জানিয়ে সোহান দাবি করেন, তিনি একা নন, এলাকার অনেক মানুষ সেলিম হোসেনের কাছে টাকা পাবেন। তাঁরা সবাই আসছেন। সেলিম হোসেন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের আসার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা কেউ এখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সেলিম হোসেনের ছেলেকে তিনি যত্নসহকারে রেখেছেন। নিজে জেগে থেকে ছেলেটিকে ঘুম পাড়াচ্ছেন। ছেলেটির কোনো ক্ষতি হবে না।
তবে ছেলেটিকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একটু উদারতা দেখানো যেত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সোহান বলেন, এটা তাঁর একার বিষয় নয়। সেলিম অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে সোহানের বাড়ি গিয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। সেখানে সোহানের ভাই পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ছেলেটি তাঁদের বাড়িতে নেই। তাঁদের মতো ৫০ জন সেলিমের কাছে টাকা পাবেন। তাঁদেরই কোনো একজনের বাড়িতে ছেলেটিকে রাখা হয়েছে। তাঁদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করেই তাঁরা ছেলেটিকে দেখভাল করছেন। সমঝোতা হলে পুলিশের মাধ্যমেই হবে, থানায় বসা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারঘাটের মুংলী গ্রামে সেলিম হোসেনের ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান ছিল। ভালো ব্যবসা হচ্ছিল। কিছু জায়গাজমিও আছে। একতলা ছাদের বাড়ি। সচ্ছল পরিবার। তবে কিছু মানুষের কাছ থেকে ধার নিয়ে তিনি আর শোধ করতে পারছিলেন না। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি গভীর রাতে তিনি সপরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি কোথায় আছেন, কেউ বলতে পারছেন না। গত এপ্রিলে তাঁর ছেলের এসএসসি পরীক্ষা ছিল। সেটাও দিতে পারেনি।
মুংলী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেলিম হোসেনের ইলেকট্রনিকসের দোকান ‘সেলিম স্টোর’ বন্ধ। বাজারের পেছনেই তাঁর বাড়ি। বাড়িতে তাঁর মা হোসনে আরা বেগমকে পাওয়া গেল। উঠানে বসে নাতির পোষা পাখিকে খাবার দিচ্ছিলেন। একা বাড়িতে আছেন, খাওয়াদাওয়া করছেন কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাশেই তাঁর মেয়ের বাড়ি। মেয়ের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করেন।
একপর্যায়ে কেঁদে ওঠেন হোসনে আরা। তিনি বলেন, ছেলে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর পাঁচ থেকে সাতজন টাকার জন্য এসেছেন। তাঁরা কেউ বলছেন, পাঁচ লাখ টাকা পাবেন, কেউ বলছেন আট লাখ টাকা পাবেন। ছেলে তাঁকে এসবের কিছু বলে যাননি। নাতিকে উদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন হোসনে আরা। কিন্তু দাদির জিম্মায় ছেলেটিকে ছাড়া হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, আবেদনের ১১ ধাপে আবেদন, নেগেটিভ নম্বরসহ দেখে নিন বিস্তারিত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৫–২০২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) এবং বিবিএ প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা হবে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের মান নির্ধারণ করা হয়েছে ০.৭৫ নম্বর। এর মধ্যে এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ৭২ নম্বর, এসএসসি বা সমমান ফলের জন্য ১০ নম্বর এবং এইচএসসি বা সমমান ফলের জন্য ১৮ নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে নতুন যুগের পড়াশোনা: কোন বিষয়গুলো ট্রেন্ডে?২০ নভেম্বর ২০২৫এর আগে ১৩ নভেম্বর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও নেগেটিভ মার্কিং পুনরায় চালু রাখার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ছিলেন।
ইউনিট ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’–এর জন্য ১ হাজার টাকা ও ইউনিট ‘ই’ (চারুকলা)–এর জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে (বিকাশ, রকেট ও সেলফিন) ফি পরিশোধ করা যাবে।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা অনুযায়ী, বিজ্ঞান ইউনিটে মোট জিপিএ (এসএসসি ও এইচএসসি) ন্যূনতম ৭.৫০, কলা ও আইন, ব্যবসায় শিক্ষা এবং সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে কমপক্ষে ৬.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। চারুকলা ইউনিটে আবেদনের জন্য ন্যূনতম মোট জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.০০।
ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী, ‘ই’ (চারুকলা অনুষদ) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ডিসেম্বর। ‘এ’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের পরীক্ষা হবে ২৬ ডিসেম্বর, ‘সি’ (ব্যবসায় শিক্ষা) ইউনিটের ২৭ ডিসেম্বর, ‘ডি’ (সামাজিক বিজ্ঞান) ইউনিটের ৯ জানুয়ারি এবং ‘বি’ (কলা ও আইন) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, কোনো ধরনের জালিয়াতি, অসদুপায় অবলম্বন বা পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ২ ঘণ্টা আগেআবেদনের ১১ ধাপ—
১. প্রথমে এইচএসসি , এসএসসি রোল নম্বর, মোবাইল নম্বর দিয়ে পাসওয়ার্ড নিতে হবে। পাসওয়ার্ড মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।
২. লগইন করতে হবে।
৩. লগইন করার পরে Dashboard-এ যে সকল ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবেন তার তালিকা আছে। যে ইউনিটে আবেদন করবেন “Click here to Apply” বাটনে ক্লিক করে আবেদন করতে হবে।
৪. ছবি এবং স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে।
৫. Question version সিলেক্ট করতে হবে।
৬. পরীক্ষার কেন্দ্র (A এবং B ইউনিটের জন্য) সিলেক্ট করতে হবে।
৭. যদি কোটা থাকে কোটার ধরন এবং ফাইল আপলোড করতে হবে।
৮. bKash এবং Rocket-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে।
৯. পেমেন্ট করার পরে Final Submit করতে হবে।
১০. Final Submit পর আর কোন তথ্য আপডেট করা যাবে না।
১১. আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর লগআউট করতে হবে।
ভর্তিসংক্রান্ত সব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনহাজী দানেশের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, ১৭৯৫ আসনের আবেদন শুরু ১৬ নভেম্বর১৩ নভেম্বর ২০২৫