রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক ধাক্কা সত্ত্বেও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে টেকসই উত্তরণে সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো—আর্থিক খাতের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, রপ্তানিতে ঝুঁকির মাত্রা, জলবায়ু ঝুঁকি, যুব বেকারত্ব ও বহির্বিশ্বের বাণিজ্য–সংক্রান্ত রাজনৈতিক উত্তাপ। এ ছাড়া দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতাও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।

এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সম্প্রতি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে বাংলাদেশ সরকার। আগামীকাল জাতিসংঘের সিডিপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। সভাটি ভার্চ্যুয়াল উপায়ে হবে।

দীর্ঘ আট বছরের নানা প্রক্রিয়ায় ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি কম থাকার জন্য এলডিসি উত্তরণ আরও তিন থেকে ছয় বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এলডিসি উত্তরণের তিনটি মানদণ্ড আছে। এগুলো হলো—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।

বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মানদণ্ডের তিনটিতেই উত্তীর্ণ হয়। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ চূড়ান্ত সুপারিশ পায় যে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হতে পারে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে প্রস্তুতির জন্য আরও দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যদি এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে বাংলাদেশই হবে প্রথম দেশ, যেটি তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে বের হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি শুধু সরকারের প্রতিবেদন নয়; দেশের প্রতিবেদনও। সরকারের পাশাপাশি অন্য অংশীজনেরা কী বলেন, তাও প্রতিবেদনে থাকা উচিত। আমরা এলডিসি উত্তরণের শর্ত পূরণ করেছি। কিন্তু টেকসই উত্তরণের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। যেহেতু অ্যানহেন্সড মনিটরিং ম্যাকানিজমের (ইএমএম) আওতায় এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তাই সামনের চ্যালেঞ্জ ও বাস্তব পরিস্থিতি থাকা উচিত। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি; নির্বাচনের কারণে বিনিয়োগ শঙ্কা; ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ-এসব নতুন করে এসেছে। বাড়তি সময় পেলে আরও শক্ত অবস্থানে যাওয়া সম্ভব হবে। কিছু সময় পেছানোর সুযোগ থাকলে তা নেওয়া যেতে পারে।

প্রতিবেদনে যা বলা আছে

জাতিসংঘকে পাঠানো সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলডিসি উত্তরণ–পরবর্তী সময়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি আছে। যেমন অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা চলে যেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ কিছু বাজারে তিন বছর সুবিধা বাড়ালেও দীর্ঘ মেয়াদে কঠোর শর্ত আসবে। ট্রিপসের আওতায় সুবিধা যাবে, যা ওষুধশিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। স্থবির হয়ে পড়া বিদেশি বিনিয়োগে আরও প্রভাব পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও দীর্ঘমেয়াদি সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে আছে। এলডিসি–পরবর্তী যুগে নানা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। যেমন রপ্তানি প্রতিযোগিতা, ব্যাংকিং সংস্কার, রাজস্ব কাঠামো, জলবায়ু অর্থায়ন, ঋণ ব্যবস্থাপনা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তবে সরকার যদি নীতি সংস্কার ধরে রাখে, বেসরকারি খাত উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথ সহায়তা দেয়। তাহলে বাংলাদেশ শুধু এলডিসি উত্তরণই নয়, বরং উচ্চমধ্যম আয়ের পথে স্থায়ী অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।

উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে যা

একের পর এক বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ইস্যু বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রাকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করেছে—এমন মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এক.

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যসরবরাহে বড় ধাক্কা লাগে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। দুই. মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে শ্রমবাজার অনিশ্চয়তা ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে আঘাত। তিন. ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে। চার. দীর্ঘদিনের অনিয়ম, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, তদারক ব্যবস্থার ঘাটতিতে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। পাঁচ. যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিতে চাপ। এসব বিষয় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে পথকে জটিল করেছে। নীতিনির্ধারণী চাপ বাড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে ২০২৪–এর গণ-অভ্যুত্থান

জাতিসংঘে পাঠানো প্রতিবেদনে ২০২৪–এর গণ-অভ্যুত্থান ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের চিত্রও ওঠে আসে। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটালেও এরপরে প্রশাসনিক পুনর্গঠন, রাজস্ব ঘাটতি, নীতিগত শূন্যতাসহ বেশ কিছু ইস্যু আরও কিছু সময় অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বহু বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত এলিটদের প্রভাব ছিল। বিগত সরকারের সময়ে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যা আর্থিক খাত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র জন ত ক ব যবস থ সরক র র এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

বিবলিওথেরাপি: বইয়ের মাধ্যমে মনের আরোগ্য

মানুষের জীবনে মানসিক সুস্থতা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা শারীরিক সুস্থতা। আজকের দ্রুতগতির তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও একাকিত্ব যেন এক অনিবার্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘বিবলিওথেরাপি’ বা বইয়ের মাধ্যমে মানসিক আরোগ্য একটি প্রাচীন অথচ আধুনিক প্রেক্ষাপটে পুনরুজ্জীবিত ধারণা হিসেবে বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব পাচ্ছে।

‘বিবলিওথেরাপি’ শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ থেকে—‘বিবলিও’ অর্থাৎ ‘বই’ এবং ‘থেরাপিয়া’ অর্থাৎ ‘চিকিৎসা’। সহজভাবে বলতে গেলে, বিবলিওথেরাপি হলো এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাপদ্ধতি, যেখানে বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি, আত্মজ্ঞান ও আবেগীয় ভারসাম্য ফিরে পাওয়া যায়। এটি শুধু গল্প বা উপন্যাস পড়া নয়, বরং পাঠকের মানসিক অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বই বা সাহিত্য নির্বাচনের মাধ্যমে তার চিন্তা ও অনুভূতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো।

বিবলিওথেরাপি এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাপদ্ধতি, যেখানে বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি, আত্মজ্ঞান ও আবেগীয় ভারসাম্য ফিরে পাওয়া যায়। বিবলিওথেরাপির কাজ হলো অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বই বা সাহিত্য নির্বাচনের মাধ্যমে পাঠকের চিন্তা ও অনুভূতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো।

আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের (এএলএ) দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিবলিওথেরাপি হলো চিকিৎসা ও মনোরোগবিদ্যায় থেরাপিউটিক সহায়ক হিসেবে নির্বাচিত পাঠ উপকরণের ব্যবহার এবং নির্দেশিত পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানে নির্দেশনা।

স্যামুয়েল জনসন যথার্থই বলেছিলেন, ‘আ রাইটার অনলি বেগিন আ বুক; আ রিডার ফিনিশেস ইট’ বিবলিওথেরাপি কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের নিরাময় নয়, এটি নতুন করে বেঁচে থাকার মন্ত্র। একটি ভালো বই যে আলো জ্বালাতে পারে, তা কোনো ওষুধ বা পরামর্শ হয়তো পারে না।

বিবলিওথেরাপির ইতিহাস

বিবলিওথেরাপির শিকড় অনেক প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিসে ‘থিবস’ শহরের গ্রন্থাগারের প্রবেশদ্বারে একটি শিলালিপি ছিল—‘হিলিং প্লেস ফর দ্য সোল’, অর্থাৎ ‘এটি আত্মার আরোগ্যের স্থান।’ প্রাচীন মিসরের রাজা দ্বিতীয় রামেসিস তাঁর লাইব্রেরির দরজায় লিখে রেখেছিলেন ‘আত্মা নিরাময়ের ঘর’ এগুলোই ইঙ্গিত দেয় যে মানুষ বহু আগে থেকেই বইকে মনের চিকিৎসা হিসেবে দেখত।

আধুনিক অর্থে ‘বিবলিওথেরাপি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯১৬ সালে স্যামুয়েল ম্যাককর্ড ক্রোথারস ফোনেটিক নামক একজন আমেরিকান ধর্মযাজক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদের প্রবন্ধে। ১৯৪১ সালে ডরল্যান্ডস মেডিকেল ডিকশনারিতে বিবলিওথেরাপি মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার অংশ হিসেবে স্বীকৃত পায়। তবে বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে এটি মনস্তত্ত্ব ও সমাজচিকিৎসার অংশ হিসেবে সুসংগঠিত রূপ পরিগ্রহ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিবলিওথেরাপির প্রয়োগ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা শুধু মানুষের দেহ নয়, মনকেও ক্ষতবিক্ষত করেছিল। যুদ্ধ শেষে হাজার হাজার আহত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সৈনিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিল। অনেকের মধ্যে হতাশা, অপরাধবোধ, ভয় ও যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক আঘাত (পোস্ট–ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার–পিটিএসডি) দেখা দেয়।

এ সময় ইউরোপ ও আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে বিশেষভাবে ‘হসপিটাল লাইব্রেরিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রশিক্ষিত গ্রন্থাগারিক ও মনোবিজ্ঞানীরা সৈনিকদের জন্য মানসিক প্রশান্তিদায়ক বই বেছে দিতেন। গল্প, আত্মজীবনী, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা ও ধর্মগ্রন্থ—এসব বই পাঠের মাধ্যমে সৈনিকদের মনে আশার আলো জ্বালানো হতো।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটেরান্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হাসপাতালগুলোতে ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ‘বিবলিওথেরাপি প্রোগ্রাম’ চালু করা হয়। গ্রন্থাগারিকেরা রোগীর মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বইয়ের তালিকা তৈরি করতেন। উদাহরণস্বরূপ—যেসব সৈনিক ভয়ের কারণে কথা বলতেন না, তাঁদের দেওয়া হতো সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের গল্প; যাঁরা পরিবার হারিয়ে একাকিত্বে ভুগতেন, তাঁদের দেওয়া হতো মানবিক সম্পর্ক ও সহানুভূতির গল্প। ফলাফল ছিল আশাজাগানিয়া—অনেক সৈনিক তাঁদের হতাশা কাটিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এই সফলতার কারণেই বিবলিওথেরাপি পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যচিকিৎসার স্বীকৃত অংশে পরিণত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু আমাদের দেশে মনোরোগ চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই সীমিত। এ অবস্থায় বিবলিওথেরাপি একটি কার্যকর, সাশ্রয়ী ও মানবিক সমাধান হতে পারে।বিবলিওথেরাপির ধরন

বিবলিওথেরাপি সাধারণত দুটি প্রধান ধরনে প্রয়োগ করা হয়—

১. ক্লিনিক্যাল বিবলিওথেরাপি: এটি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা থেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এখানে রোগীর মানসিক সমস্যার ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বই বেছে দেওয়া হয়। পড়ার পর থেরাপিস্ট রোগীর প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পরামর্শ দেন। এটি হতাশা, উদ্বেগ, পিটিএসডি বা আচরণগত সমস্যায় ভুগছেন, এমন রোগীদের জন্য কার্যকর।

২. স্ব-সহায়ক বা উন্নয়নমূলক বিবলিওথেরাপি: এখানে পাঠক নিজের ইচ্ছায় এমন বই বেছে নেন, যা তাকে অনুপ্রাণিত করে বা আত্মোন্নয়নে সহায়তা করে। যেমন আত্মজীবনী, প্রেরণাদায়ক সাহিত্য বা আধ্যাত্মিক বই।

বিবলিওথেরাপি কেন মানসিক রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ

মানুষের মন এমন এক জটিল ক্ষেত্র, যেখানে প্রত্যেকের যন্ত্রণা ও প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। কিন্তু সাহিত্য, গল্প বা কবিতার মাধ্যমে মানুষ নিজের মতো করে আরেক জীবনের সঙ্গে সংযোগ খুঁজে পায়। এটাই বিবলিওথেরাপির মূল জাদু।

১. সহমর্মিতা জাগায়: গল্পের চরিত্রের সঙ্গে পাঠক নিজের অনুভূতির মিল খুঁজে পায়। এতে একাকিত্ব কমে, সহমর্মিতা বাড়ে এবং নিজের সমস্যাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়।

২. আবেগ প্রকাশে সাহায্য করে: অনেকেই নিজের ব্যথা বা ভয় প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু কোনো বইয়ের চরিত্র যখন সেই অনুভূতি প্রকাশ করে, পাঠক মানসিকভাবে মুক্তি পেতে শুরু করেন।

৩. আত্মজ্ঞান বৃদ্ধি করে: পাঠক নিজের চিন্তা ও আচরণ নিয়ে ভাবতে শেখে। এতে আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসে।

৪. স্ট্রেস কমায়: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাঠ মানসিক চাপ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। বই পড়া মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে, হার্টরেট ও টেনশন হরমোন কমায়।

৫. আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে: ইতিবাচক গল্প বা প্রেরণাদায়ক বই মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালায়। এতে জীবনের প্রতি বিশ্বাস ও আশাবাদ বাড়ে।

আধুনিক যুগে বিবলিওথেরাপির পুনর্জাগরণ

একুশ শতকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘রিডিং ফর ওয়েল–বিয়িং’ বা ‘বুকস অন প্রেসক্রিপশন’ নামে জাতীয় পর্যায়ের বিবলিওথেরাপি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—যুক্তরাজ্যে ২০১৩ সালে ‘রিডিং ওয়েল’ উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে ডাক্তাররা রোগীদের নির্দিষ্ট বই পড়ার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু আমাদের দেশে মনোরোগ চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই সীমিত। এ অবস্থায় বিবলিওথেরাপি একটি কার্যকর, সাশ্রয়ী ও মানবিক সমাধান হতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘রিডিং থেরাপি কর্নার’ স্থাপন করে শিক্ষার্থী ও তরুণদের জন্য ইতিবাচক পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। লাইব্রেরিয়ানরা প্রশিক্ষিত হয়ে মানসিক অবস্থা অনুযায়ী বই সুপারিশ করতে পারেন।

বিবলিওথেরাপি মানুষের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলার এক নীরব শক্তি। বই মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু—তা শুধু জ্ঞান দেয় না, মনের গভীরে শান্তির আলো জ্বালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের মনোবল পুনরুদ্ধারের ইতিহাস যেমন প্রমাণ করেছে, তেমনি আজও বই হতে পারে একাকী বা হতাশ মানুষের শ্রেষ্ঠ নিরাময়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই মাস পর ভুটানের প্রথম চালানের পণ্য খালাস শুরু
  • সাবেক নেত্রীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, এই পথে বড় বাধা ভারত
  • বিবলিওথেরাপি: বইয়ের মাধ্যমে মনের আরোগ্য
  • চ্যালেঞ্জ নিয়েই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি: খাদ্য উপদেষ্টা
  • সাত কলেজে ১ম বর্ষের ক্লাস শুরুর তারিখ পুনর্নির্ধারণ
  • ঢাকার সাত কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগেই তীব্র সেশনজটে শিক্ষার্থীরা 
  • সিটি ব্যাংকের মাসরুর আরেফিন পেলেন ‘সিইও অব দ্য ইয়ার ২০২৫’ পুরস্কার
  • ভূমিকম্পে ধামরাইয়ে হেলে পড়া সেই ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে
  • শিক্ষকেরা চ্যাটজিপিটি থেকে কপি-পেস্ট করেন