ফতুল্লা নিজ বাড়ির ছাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আবু হানিফ (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ফতুল্লার আল আমিন বাগ এলাকায় এঘটনা ঘটে। নিহত আবু হানিফ একই এলাকার মৃত. লতিফ বেপারীর ছেলে।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, আবু হানিফ নিজ বাসার ছাদে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তখন প্রথমে তাকে পরিবারের লোকজন শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। 

এরপর আশঙ্কাজনক হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আবু হানিফকে মৃত ঘোষনা করেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষ নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে, তবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নাগরিকেরা একদিকে নির্বাচনের দিকে যেতে চাচ্ছে, আবার অন্যদিকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তাহীনতা সার্বিক। তবে কোনো কোনো বিশেষ বর্গের মানুষ বিশেষ করে নারীরা, বিভিন্ন ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই নিরাপত্তাহীনতা বেশি অনুভব করছেন। নিরাপত্তার অভাব দূর করার সাথে সাথে যে দুর্নীতি চারিদিকে ছেয়ে আছে, নতুন সরকারের কাছে মানুষ আর এই দুর্নীতি দেখতে চান না।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনায় নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক্-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে খুলনা নগরের একটি হোটেলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও তা পূরণের উপায় নিয়ে এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়।

সভায় দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি, লবণপানির চিংড়ি চাষ নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো, টেকসই বেড়িবাঁধ, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন, ইসিএর মধ্যে শিল্প স্থাপনা নিষিদ্ধকরণ, কাঁকড়া চাষের প্রতিবন্ধকতা দূর, মাঠপর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ, নিরাপদ পানির উৎস নিশ্চিত করা, মৃতপ্রায় নদী-খাল খনন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, খুলনার শিল্প পুনরুজ্জীবন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় উঠে আসে।

সভা শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে মানুষের কথায় এক নম্বরে যেটা উঠে এসেছে, তারা নিরপেক্ষ প্রশাসন চায়। নিরপেক্ষ প্রশাসন ব্যতিরেকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে মনে করছে মানুষ। একই সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতার কথা বলেছে তারা। এ জন্য তারা প্রশাসনিক নিরাপত্তাকে এক নম্বরে রেখেছে।

সিপিডির এই ফেলো আরও বলেন, এই নির্বাচন কমিশনকে যোগ্যতা ও সাহসিকতা দেখাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষ থাকতে হবে। উদ্বেগের বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের বর্তমান উদ্যোগ, প্রচেষ্টা বা নীতি প্রণয়ন নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট নয়। জনগণ এখনো আশঙ্কায় আছে, এই নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গে একটু সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে কি না? সবাই প্রত্যাশা করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মানুষের মনে যে শঙ্কা এখনো রয়েছে, সেটা দূর করবে।

বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের বন্দরব্যবস্থা অনেক উন্নত করতে হবে। বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য হয়তো বৈদেশিক বিনিয়োগেরও দরকার পড়বে। কিন্তু সঠিক সংস্কার যদি বেঠিক পদ্ধতিতে হয়, তাহলে সেই সংস্কার ফল দেয় না। বন্দর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে দ্রুততা, যে অস্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে করা হলো, তা একটা ভালো কাজের সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হব। এ দ্রুততা এই অস্বচ্ছতা কেন করার প্রয়োজন পড়ল, এই প্রশ্ন এখন আমাদের মনে রয়ে গেছে। এ ধরনের সংস্কারগুলোতে স্বচ্ছভাবে, যোগ্যতার সাথে, জনমানুষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করলে পরে এগুলো টেকসই হবে।’

খুলনার আঞ্চলিক পরামর্শ সভা নিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের বিশেষ সংকটগুলো আলোচনায় সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে। নিরাপদ পানির অভাব, চিংড়ি চাষ, লবণাক্ততা, বেড়িবাঁধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। উপকূলের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের চাহিদা স্পষ্ট। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়নের ত্রুটি, অনগ্রসর ও বৈষম্যের চিত্রও সামনে এসেছে। তিনি বলেন, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ-মানুষের প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, খুলনার আলোচনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আত্মোপলব্ধি তাঁদের চমৎকৃত করেছে। জনগণের কথা যদি তাঁরা নিয়মিত না শোনেন, তাহলে তাঁদের আবার ‘না দেশ ছেড়ে পালাতে হয়’—এমন উপলব্ধি তাঁদের হয়েছে। নির্বাচনের পর তাঁরা একটি নিরপেক্ষ, মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলা এবং একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা বহুদিন ধরে আলোচিত হলেও বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। পদ্মা সেতু চালুর পরও প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়নি। জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কর্মসংস্থান বা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি বাড়েনি। নতুন প্রজন্মের শ্রমিককে আকৃষ্ট করতে অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন জরুরি। খুলনা অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প, চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন এবং পর্যটন খাতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন ও সাংস্কৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে বৃহৎ পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতেও পারে।

সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরের আমির মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগরের সহসভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, আবদুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ