সকালে খালি পেটে চিরতার পানি খেলে যেসব উপকার পাবেন
Published: 11th, January 2025 GMT
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষ চিরতার পানি পান করে আসছেন। চিরতার ডাল ভেজানো পানির উপকারিতার কথা আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও আছে। তেতো স্বাদের এই পানীয় ওজন কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা, লিভারের সুরক্ষা থেকে শারীরিক সুস্থতায় কাজে দেয়।
চিরতার পানির ৭ উপকারিতা১. নিয়মিত চিরতার পানি খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ কমতে থাকে। এটি ডায়াবেটিসের রোগী এবং ওজন কমাতে চাচ্ছেন, এমন ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী।
২.
৩. কৃমি দূর করতে সাহায্য করে চিরতার পানি।
চিরতা গাছের ডালউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নবী হওয়ার আগে নবীজি (সা.) কি ‘পথহারা’ ছিলেন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি আপনাকে পথ না-জানা অবস্থায় পেলেন, অতঃপর পথনির্দেশ করলেন।’ (সুরা দুহা, আয়াত: ৭)
এই আয়াতটির ব্যাখ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা আবশ্যক। এখানে ‘দ্বলাল’ বা ‘পথ না-জানা’ বলতে এমন গোমরাহি বোঝানো হয় না, যা হেদায়েতের বিপরীত। বরং এর ভিন্ন গভীর অর্থ রয়েছে, যেমনটি প্রাচীন ও আধুনিক বহু আলেম সতর্ক করেছেন।
যারা বলে যে নবুয়তের আগে নবীজি তাঁর কওমের ধর্মের ওপর ছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে ইসলামের দিকে হেদায়েত করেছেন—তাদের কথায় মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়।আলাউদ্দিন আলি বিন মুহাম্মদ আল-খাজিন (রহ.)আলাউদ্দিন আলি বিন মুহাম্মদ আল-খাজিন (রহ.) বলেছেন, ‘যারা বলে যে নবুয়তের আগে নবীজি তাঁর কওমের ধর্মের ওপর ছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে ইসলামের দিকে হেদায়েত করেছেন—তাদের কথায় মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়।
কেননা আমাদের নবী (সা.), এমনকি তাঁর পূর্বের নবীগণও জন্মের পর থেকে নবুয়তের আগে ও পরে সর্বদা তাওহিদ ও ইমানের ওপর বেড়ে উঠেছেন। তাঁরা নবুয়তের পূর্বেও আল্লাহর গুণাবলি ও একত্ববাদ সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে মুক্ত ছিলেন।’ (লুবাবুত তা’বিল ফি মা’আনিত তানযিল, ৪/৪১৪, বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, ১৯৯৫)
আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫মুশরিকরা যখন নবীজির সব বিষয়ে দোষ খুঁজছিল, তখন তারা তাঁকে শিরক বা জাহেলিয়াতের কোনো দোষে অভিযুক্ত করতে পারেনি। যদি তিনি পূর্বে এমন কিছুতে জড়িত থাকতেন, তবে তারা অবশ্যই তা প্রচার করত।
এটি নবীজির ছোটবেলার ঘটনা থেকেও প্রমাণিত হয়। বাহিরা পাদরি তাঁকে লাত ও উযযার নামে শপথ করতে বললে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাকে এই দুটির নামে জিজ্ঞেস করবেন না। আল্লাহর শপথ, এই দুটিকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি।’ তাঁর বক্ষ বিদারণের ঘটনাও এই সত্যের সাক্ষ্য দেয় (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩১২)। পাশাপাশি কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা, ‘তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্টও হননি এবং বিভ্রমের শিকারও হননি।’ (সুরা নজম, আয়াত: ২)
ইবনে আশুর (রহ.)-ও নিশ্চিত করেছেন যে এখানে ‘দ্বলাল’ দ্বারা বাতিলের অনুসরণ বোঝায় না; কারণ, আমাদের আলেমগণের ঐকমত্যে নবী-রাসুলগণ নবুয়তের আগে শিরক থেকে মাসুম বা নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁর সরলতা ও সচ্চরিত্রের ধারাবাহিকতা তাঁর রিসালাতের অন্যতম প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। (আত-তাহরির ওয়াত-তানভির, ৩০/৪০০, তিউনিস: দার সাহনুন, ১৯৯৭)
তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্টও হননি এবং বিভ্রমের শিকারও হননি।কোরআন, সুরা নজম, আয়াত: ২আল্লাহ তায়ালাও মুশরিকদের তাঁর পবিত্র জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি তো এর পূর্বে তোমাদের মধ্যে দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি; তবু কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১৬)
ডক্টর মুহাম্মদ ইযযত দারওয়াজা এই বিষয়ে বিভিন্ন তাফসির একত্র করে বলেন যে নবীজি (সা.) শিশুকালে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন—এমন দুর্বল বর্ণনাকে মেনে নেওয়া যায় না। বরং ‘দ্বলাল’ দ্বারা এখানে ‘চরম দ্বিধা’ বা ‘সন্ধান’ বোঝানো যেতে পারে।
অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁকে এমন অবস্থায় পেয়েছিলেন যখন তিনি তাঁর প্রতি অবতীর্ণ না হওয়া শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন, অথবা সর্বোত্তম উপায়ে আল্লাহর ইবাদত করার পথ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন—আর এটিই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাখ্যা।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ কী১৪ নভেম্বর ২০২৫আল-কুরতুবি (রহ.) তাঁর তাফসিরে এই আয়াতের প্রায় পনেরটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে যুক্তিসংগত ও শক্তিশালী ব্যাখ্যাগুলো হলো:
১. ‘গাফিল’ বা অনবধানতা: অর্থাৎ, আল্লাহ আপনাকে নবুয়তের দায়িত্ব সম্পর্কে অনবধান অবস্থায় পেয়েছেন, অতঃপর আপনাকে হেদায়েত দিয়েছেন। এই ‘দ্বলাল’ এখানে ‘গাফলাহ’ (অনবধানতা) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন অন্য আয়াতে: ‘আমার রব পথ ভোলেন না এবং বিস্মৃতও হন না’ (সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ৫২)।
২. শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞতা: আল্লাহ আপনাকে এমন অবস্থায় পেয়েছেন যখন আপনি কোরআন ও শরিয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে জানতেন না, অতঃপর আল্লাহ আপনাকে কোরআন ও ইসলামের শরিয়তের দিকে হেদায়েত করেছেন। এই অর্থের সঙ্গে অন্য আয়াতের সামঞ্জস্য রয়েছে, ‘আপনি তো জানতেন না কিতাব কী এবং ইমান কী।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৫২)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতগুলো পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে নবীজির হেদায়েত ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ ও অনুপম নেয়ামত।৩. বিমূঢ়তা: অর্থাৎ, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার ব্যাখ্যা নিয়ে আপনি বিমূঢ় ছিলেন, অতঃপর আল্লাহ আপনাকে তার দিকে হেদায়েত করেছেন। এখানে ‘দ্বলাল’ ‘তাহাইয়্যুর’ (বিমূঢ়তা) অর্থে এসেছে; কারণ, পথহারা মানুষ বিমূঢ় থাকে।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) এই ব্যাখ্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শেষে বলেন যে এগুলোর মধ্যে শেষ ব্যাখ্যাটি (সবগুলো আধ্যাত্মিক অর্থকে একত্র করার কারণে) তাঁর কাছে সবচেয়ে পছন্দের।
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতগুলো পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে নবীজির হেদায়েত ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ ও অনুপম নেয়ামত। এটি ছিল তাঁর রিসালাতের মূল ভিত্তি, যা তাঁকে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই হেদায়েত তাঁকে অজ্ঞতা, বিমূঢ়তা ও দ্বিধা থেকে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের আলোয় নিয়ে এসেছে, যেন তিনি সব সৃষ্টির জন্য সত্যের পথপ্রদর্শক হতে পারেন। আল্লাহর দেওয়া এই হেদায়েতই তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বা সারা জাহানের জন্য রহমত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আরও পড়ুনহেদায়াত বলতে কী বোঝায়?০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫