৬ বছর পূর্তিতে শিক্ষকদের বিশেষ সম্মাননা ইন্সট্রাক্টরির
Published: 26th, January 2025 GMT
ছয় বছর পূর্তিতে শিক্ষকদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে এডটেক প্ল্যাটফর্ম ইন্সট্রাক্টরি। গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষককে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে গোল্ড মেম্বারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের স্কিল ডেভেলপমেন্ট খাতে অসামান্য অবদান রাখা সেরা শিক্ষকদেরকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয় অনুষ্ঠানে।
ওইদিন দুপুর দুইটায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর আমন্ত্রিত অতিথি ও শিক্ষকদের নিয়ে কেক কেটে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয় ইন্সট্রাক্টরি ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন ইন্সট্রাক্টরির প্রতিষ্ঠাতা রিফাত এম হক, সহ প্রতিষ্ঠাতা হোসনা আরা কলি, আইএকাডেমির সিএসও মো.
তরুণ উদ্যোক্তা এবং ইন্সট্রাক্টরির প্রতিষ্ঠাতা রিফাত এম হক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা চাই, দেশের তরুণ-তরুণীরা তাদের সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। প্রায় ৩৯০ এরও অধিক অনলাইন কোর্সের থেকে পছন্দ মত কোর্স বাছাই করে নিজেদেরকে চাকরির বাজার কিংবা ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসের জন্য প্রস্তুত করবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের লক্ষ্য ‘ইন্সট্রাক্টরি - মেড ইন বাংলাদেশ’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।’ তিনি আরো বলেন, ‘তরুণ সমাজ, গৃহিণী বা শিক্ষিত বেকার সমাজ তারা যে কোন জায়গা থেকে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে। দেশে বসে বিদেশের কাজ করে রেমিটেন্স নিয়ে আসবে। এই উদ্দ্যেশ্যই কাজ করে যাচ্ছে ইন্সট্রাক্টরি। আমাদের লক্ষ্য একটাই শিখবে সবাই ইন্সট্রাক্টরিতে, শিখছে সবাই ইন্সট্রাক্টরিতে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আত্মনির্ভরশীল এবং দক্ষ বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশীয় এডটেক প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন টিচিং মার্কেটপ্লেস ইন্সট্রাক্টরি। এই প্ল্যাটফর্মে দেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার এবং প্রফেশনাল শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স অনলাইনে শেখানো হয়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ঘরে বসে নামমাত্র মূল্যে কোর্সগুলো করতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।