‘জাতীয় পা‌র্টির কাউন্সিল দেন, দে‌খি আপ‌নি কত ভোট পান। তৃণমু‌লের নেতাকর্মীরা কা‌কে চায়। কাউন্সিল দি‌য়ে আপ‌নি আপনার জন‌প্রিয়তার প্রমাণ দিন।”

বৃহস্প‌তিবার (১০ জুলাই) গুলশা‌নে এক যোগদান অনুষ্ঠা‌নে জাতীয় পা‌র্টির চেয়ারম‌্যান জিএম কাদেরের প্রতি চ‌্যা‌লেঞ্জ ছু‌ড়ে দি‌য়ে সদ‌্য অব‌্যা‌হতিপ্রাপ্ত দল‌টির সি‌নিয়র কো-চেয়ারমান ব‌্যা‌রিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ কথা ব‌লেন।

এর আগে, জিএম কা‌দের গ্রু‌পের প্রভাবশালী প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য ও সা‌বেক এম‌পি লিয়াকত হো‌সেন খোকা, কুমিল্লার সাবেক এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে দলটির প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী বি‌দ্রোহী গ্রু‌পে যোগ দেন।

আরো পড়ুন:

ভোট কারচুপির অভিযোগে কুষ্টিয়ায় বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও

নিউ ইর্য়কের ডেমোক্র্যাট ‘চমক’ ৩৩ বছরের মামদানি

বি‌ভিন্ন সময় দল থে‌কে বে‌রি‌য়ে যাওয়া নেতাদের যুক্ত ক‌রে বৃহত্তর ঐক‌্য গড়ে তু‌লে এক‌টি ঐক‌্যবদ্ধ শ‌ক্তিশালী জাতীয় পা‌র্টি গড়ার মিশন নে‌মে‌ছেন দল‌টির অবাহ‌তি প্রাপ্ত সি‌নিয়র কো-চেয়ারমান ব‌্যা‌রিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম‌্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ‌্যাড‌ভো‌কেট কাজী ফি‌রোজ রশীদ, মহাস‌চিব মু‌জিবুল হক চুন্নুসহ সি‌নিয়র নেতারা।

ব‌্যা‌রিস্টার আনিস ব‌লেন, “পদ হারা‌নোর ভ‌য়ে জিএম কা‌দের কাউন্সি‌ল ডে‌কেও আর কাউন্সিল কর‌ছেন না। দ‌লে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কা‌জে যারা কাজ করছেন, তা‌দের প‌থের কাটা মনে করে স্বৈরাচারী কায়দায় স‌রি‌য়ে দি‌চ্ছেন।”

তিনি বলেন, “জিএম কা‌দের একজন কর্তৃত্ববাদী। তিনি কারো পরামর্শ মানেন না। নিজের ইচ্ছে মত দল পরিচালনা করেন। দলের ভেতর স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাই একমত। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কারের ভয়ে অনেকে মুখে খোলেন না।”

জাতীয় পার্টি ভাঙ‌তে দেওয়া হ‌বে না জা‌নি‌য়ে তিনি আরো বলেন, “অনেক কষ্ট করে এই পার্টি করেছি। এই পার্টি যেন মুসলিম লীগ, জাসদের মত হয়ে না যায়। সেজন্য জাতীয় পার্টিকে আমরা সবাই মি‌লে বড় করার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, জাতীয় পার্টি ভাঙবে না, আরো বৃহৎ হবে।”

আনিসুল ইসলাম ব‌লেন, “বর্তমান রাজনৈতিক নতুন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টির বিরাট সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করছি। কোনোভাবেই জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেওয়া হবে না।”

“এরশাদ সাহেব আমাকে বলে গেছেন, এ পার্টি যেন সাধারণ মানুষের মাঝে থাকে। সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমরা যখন দেখলাম পদ নিয়ে পার্টিতে বাণিজ্য হয়, তখন আমি বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান তা বন্ধ করেননি। গণতান্ত্রিক উপায়ে পার্টি পরিচালনার জন্য ২০ এর ১ক ধারা বাতিল করার জন্য বলেছি। তিনি তাও শোনেনি,” ব‌লেন আনিসুল ইসলাম।

জিএম কাদের এর কড়া সমা‌লো‌চোনা ক‌রে আনিস ব‌লেন, “তি‌নি কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু তিনি দলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরশাদ সাহেবও কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নিতেন না। কিন্তু জিএম কাদের নিজেকে সবার চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করেন। তিনি সবাই‌কে বলে থা‌কেন, ‘আমি চেয়ারম্যান আমার কথায় সব। আমি যদি বলে রাত তাহলে রাত।’ এভাবে কি কো‌নো রাজনৈতিক দল চলতে পারে? সবার সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সরকারও চলে না। অথচ জিএম কাদের নিজের কর্তৃত্ব বজায় রেখে দল চালাতে চায় “

একটি জাতীয় পার্টিই থাকবে উল্লেখ ক‌রে দল‌টির আরেক কো চেয়ারমান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ব‌লেন, “দুইটা জাতীয় পার্টি থাকবে না। কোনো সিন্ডিকেটের মধ্যে জাতীয় পার্টি বন্দি থাকবে না। সব তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতাম‌তে চল‌বে জাতীয় পার্টি।”

জাতীয় পা‌র্টির রাজনী‌তি মানুষের জন্য, রাজনৈতিক সহাবস্থানের জন্য, কারো বিরুদ্ধাচর‌ণের জন্য নয় মন্তব‌্য ক‌রে হাওলাদার ব‌লেন, “যারা জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে চলে গেছে, তাদের নিয়ে আসা হবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করবে।”

জিএম কাদের একটি ব্যারিস্টারকে মহাসচিব করেছে জা‌নি‌য়ে তিনি বলেন, “সে আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে। সে বলে, আমরা সিনিয়ররা বেঈমানি করেছি। তার কথায় আঘাত পেয়েছি। তার উচিত, শালীনভাবে কথা বলা। সে যে এমপি হয়েছে, তার পিছনে আমাদের কি অবদান ‌নেই?”

জিএম কাদের বেআইনীভাবে আমাদের ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির মহা‌সচিব মু‌জিবুল হক চুন্নু ব‌লেন, “তার সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। জিএম কাদের এককভাবে তার স্ত্রীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে দল চালাতে চায়। কিন্তু আমরা যারা এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, তারা কোনোভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেব না, ছোট  হতে দেব না, কোনো সিন্ডিকেটের হাতে জাতীয় পার্টিকে তুলে দিতে পারি না।”

কাউন্সিল আহ্বান করার পর, কাউকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই মন্তব‌্য ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, “শুধু কাউন্সিলে যাতে জিএম কাদেরকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারেন, সেজন্য তিনি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে, তড়িঘড়ি করে আমাদের অব্যাহতি দেওয়ার নাটক করেছেন। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি এই নাটক করছেন, তা তিনি সফল হতে পারবেন না। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ এরশাদ প্রেমিক কর্মী তার সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে।”

জিএম কাদের সি‌ন্ডি‌কে‌টে ব‌ন্দি উল্লেখ ক‌রে দল‌টির প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য লিয়াকত হো‌সেন খোকা ব‌লেন, “তার আশেপাশে থাকা কিছু তথাকথিত নেতা একটা  সিন্ডিকেট  করে নিজের ব্যক্তি স্বার্থে  দলকে ছোট করছেন। তারা চান না দল বড় হোক, ঐক্যবদ্ধ হোক। কিন্তু জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ হোক বড় হোক।”

“আমি জিএম কাদেরকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি,” ব‌লেন খোকা।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এ টি ইউ এম তাজ রহমান, নাজমা আক্তার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফুর রহমান খান, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, হারুন আর রশীদ, ভাইস-চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন আমানত, শফিকুল ইসলাম শফিক, যুগ্ম-মহাসচিব মো.

বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা,যুগ্ম-সম্পাদক সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত, শারমিন পারভীন লিজা, মাশুক আহমেদ, ডা. সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র ল ইসল ম ম ক উন স ল ন ত কর ম র জন ত ক দল ট র র জন য ন র জন আম দ র এরশ দ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেপ্তারকৃতদের তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৫ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ আশ্বাস দেন।

শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে তাঁরা এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও তদন্তের ফলাফল বিনিময়ের মাধ্যমে অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয়ই বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিথা হেরাথ এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধান পার্ক ইউনজুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ