পুরোনো ছন্দে ফিরছে বম নারীদের তাঁত
Published: 7th, February 2025 GMT
একটু একটু করে আবার চলতে শুরু করেছে লাইমিপাড়ার কোমরতাঁত। নতুন সুতা কেনা হচ্ছে। চাদর বুনছেন বম নারীরা। ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে। বহুদিন পর আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে পুরোনো জীবিকার ছন্দ। দুই বছর ধরে পর্যটনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পর বান্দরবানের শৈলপ্রপাতের ঝরনার পাশে বম নারীদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে আবার।
বান্দরবান জেলার শহরতলির পর্যটনকেন্দ্র শৈলপ্রপাতে আসা পর্যটকদের কাছে কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি করেন বম তরুণী ত্লাওয়াংপুই ওরফে নিক্কি বম। বছর দুয়েক আগেও তাঁর জীবনযাপনে বেশ সচ্ছলতা ছিল। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় হারানো জীবিকায় আবারও ফিরতে পেরেছি। আশা নিয়ে বাঁচা আর কি! সব গুছিয়ে নিতে পারলে আবার হয়তো একটু ভালো থাকতে পারব।’
কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী তৎপরতার পরিস্থিতিতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে বান্দরবানের পর্যটন। ফলে গত প্রায় দুই বছর ধরে নিক্কি বমের মতো শৈলপ্রপাত এলাকায় ফারুকপাড়া, লাইমিপাড়ার পর্যটননির্ভর অনেক পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েন। এ ছাড়া বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের গ্যেৎসেমানিপাড়া, ম্রোলংপাড়ার শত শত বম ও ম্রো পরিবার আয়-রোজগার হারিয়ে সংকটে পড়েছিল।
গত ৬ নভেম্বর থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি ছাড়া বান্দরবান জেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে আবার আগের জীবিকায় ফেরার চেষ্টা করছেন অনেকে। জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কে পর্যটনগন্তব্য শৈলপ্রপাত ঝরনা। সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বম নারীরা তাঁদের কোমরতাঁতের চাদর, কম্বল, মাফলার, ওড়না ছাড়াও হস্ত ও কুটিরশিল্পের পণ্য এবং বাগানের ফলমূল বিক্রি করেন। সেই রোজগারেই চলে তাঁদের সংসার। সম্প্রতি শৈলপ্রপাতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের আগমনে বম নারীদের বেচা-বিক্রি বেড়েছে।
পর্যটন শুরু হওয়ায় বম নারীরা আবারও কোমরতাঁতে কাপড় বুনছেন নিয়মিত। সম্প্রতি বান্দরবানের শৈল প্রপাতের ফারুকপাড়ায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস