৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা
Published: 30th, July 2025 GMT
আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেদিন সবাইকে শহীদ মিনারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সেদিন সঙ্গে থাকলে সকল দাবি আমরা আদায় করে ছাড়ব।’
আজ বুধবার বিকেলে নরসিংদী শহরের পৌরসভার সামনে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র শেষ দিন আজ বুধবার। ১ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী পদযাত্রা শুরু করেছিল এনসিপি।
নরসিংদীর পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি গত এক বছরে দেশে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। নতুন সংবিধান আমরা পাইনি, ফ্যাসিস্টের রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে দেওয়া হয় নাই, আমাদের ঘোষণাপত্র দেওয়া হয় নাই। আমরা কোনো দাবি থেকে সরে আসিনি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশের দাবিতে রাজপথে নামতে হচ্ছে আমাদের।’
দেশের মানুষের মুক্তির দাবিতে চব্বিশের আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত এক মাস সারা দেশ ঘুরতে ঘুরতে আজ আমরা বিপ্লবের শহর নরসিংদীতে আপনাদের কাছে এসেছি। বিপ্লবের স্মৃতি আমরা কেউ ভুলে যাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে আছে ১৮ জুলাইয়ের কথা। আমরা ভুলিনি সেদিন নরসিংদীতে কী হয়েছিল। ১৭ জুলাই যখন আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আমরা “কমপ্লিট শাটডাউন” ঘোষণা করেছিলাম। তখন নরসিংদীর শিক্ষার্থী তাহমিদ শহীদ হয়েছিল। সেদিন শহীদ হয়েছিলেন আরেক শিক্ষার্থী ইমন।’
এ সময় নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নরসিংদী জেলায় মোট ২২ জন শহীদ হয়েছেন বলে জানান। তাঁদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা নরসিংদীর জন্য কাজ করতে চাই, এ জেলাকে শিল্পোন্নত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নরসিংদীতে সন্ত্রাসীরা রয়েছে, চাঁদাবাজেরা রয়েছে। আমরা তাদের বিতাড়িত করতে চাই। আপনারা সবাই নরসিংদীতে এনসিপির হাত শক্তিশালী করুন, ইনশা আল্লাহ আমাদের বিজয় আসবে। সারা দেশে জুলাই পদযাত্রা যেভাবে সফল হয়েছে, ইনশা আল্লাহ আগামী সংসদে, আগামীর বাংলাদেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির জয়জয়কার হবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তী সরকারে দুজন ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে রাজনীতিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তাঁরা দুজন আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির কেউ নন। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি। গণ-অভ্যুত্থানকে শক্তিশালী করতে তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’
সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে, কিন্তু পেছন থেকে পাঞ্জাবি টেনে ধরছে। এখনো সময় আছে, সরকারের কথা শুনুন, শহীদদের সঙ্গে থাকুন। যদি না থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, জানি না। আমরা এ দেশে নতুন সংবিধান চাই, নতুন সংবিধান আমরা বানিয়েই ছাড়ব।’
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সরকারের কোন বাহিনী, কোন কর্মকর্তার কী ভূমিকা ছিল, তা খুঁজে বের করতে হবে বলে দাবি জানান এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজ চোখে দেখেছি, সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা গুলি চালিয়েছিল। কার নির্দেশে তারা গুলি চালিয়েছিল, আমরা জানতে চাই।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনা সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উত্তরাঞ্চলের সংগঠক শিরিন আক্তার, যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সাল, নরসিংদীর প্রধান সমন্বয়কারী আওলাদ হোসেন প্রমুখ।
এর আগে বিকেল পাঁচটার দিকে নরসিংদী শহরের জেলখানার মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এনসিপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা পৌরসভার সামনে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। পদযাত্রা শুরুর আগে নরসিংদী ক্লাবে জেলায় গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এসব কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ। শহরে মোড়ে মোড়ে ও সভাস্থলে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য মাঠে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
এ ছাড়া ১৯ জুলাই কক্সবাজারের চকরিয়ায় এনসিপির পথসভা মঞ্চ ভেঙে দেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ট্রাকের ওপর মঞ্চটি করা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম পদয ত র আম দ র হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ হতে হবে, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। নির্বাচিত যে সরকার আসুক এই সদন বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে। এর বিকল্প আমরা দেখতে চাই না। সরকার সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। জুলাই সনদ শুধু সংস্কার হলে হবে না, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে।”
আরো পড়ুন:
ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, ৫ আগস্টের আগেই অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবেন। আমরা সবাই মিলে আকাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের একবছর উদযাপন করতে পারব।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, মো. মহসিন উদ্দিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের সাবেক আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ।
এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন মোড়ে ও সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হয়। রাজবাড়ীর সড়কে বন্ধ থাকে সব ধরনের যান চলাচল।
এর আগে, এনপিপির কেন্দ্রীয় নেতরা টাঙ্গাইলের পথসভা শেষে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে উপজেলা হয়ে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা যান। সেখানে বিকেলে পথসভা শেষে গাজীপুর শহরের রাজবাড়িতে আসেন তারা।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ