উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়ার পরদিনই কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চালু হয়েছে ছয়টি অবৈধ ইটভাটা। মঙ্গলবার উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের শ্রীকোল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছিল।

এ সময় ভাটাগুলোকে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভবিষ্যতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভাটা পরিচালনা না করার বিষয়ে মুচলেকাও দেন মালিকরা। বুধবার সরেজমিন ওই এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমবিসহ বিভিন্ন ভাটায় ইট পোড়াতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুকনো পদ্মা নদীর প্রায় চার কিলোমিটার চর ইজিবাইকে পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চরসাদিপুরের শ্রীকোল এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি, পদ্মা ও এমডিবি ব্রিকসে অভিযান চালায় প্রশাসন। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি ও পদ্মা ব্রিকসকে ৭০ হাজার করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা; এমডিবি ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রাম চিমনিও ভেঙে দেওয়া হয়।

বুধবার সকালে সরেজমিন ওই ভাটাগুলোতে কাজ চলতে দেখা গেছে। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত ড্রাম চিমনিতে কাঠ পোড়ানোর দৃশ্যও চোখে পড়ে। সবগুলো ভাটার চারপাশে কৃষিজমি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিবছর উচ্ছেদের নামে নাটক করে প্রশাসন। নামমাত্র জরিমানা করে মালিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। অথচ পরদিন আবারও চালু হয় ভাটা; পোড়ানো হয় কাঠ। এ কারণে প্রতি বছরই অবৈধ ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।

চিমনি দিয়ে ভাটা করতে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীকোল এলাকার কেআরবি ভাটার মালিক আছাই মণ্ডল। তিনি বলেন, জরিমানা-মুচলেকা দিয়েই পাঁচ বছর ধরে ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়েছেন। এভাবেই অন্যরাও ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। আগামী বছরও এভাবেই ভাটা পরিচালনা করবেন বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন তিনি। 

পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তনের চরসাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। আইন অমান্য করে এ ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ৩৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে অন্তত ১৯টিতে রয়েছে টিনের তৈরি ড্রাম চিমনি। এ ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা সদর ইউনিয়নের অংশেও আরও অন্তত সাতটি অবৈধ ভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় দেদার পোড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি; আশপাশের এলাকার গাছের কাঠ। ইট বহনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ছে; দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনও সহজে সেখানে অভিযানে যেতে চায় না। 

২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র‍্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের ৬০ সদস্যের দল চরসাদিপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে যায়। সেদিন ওই ইউনিয়নের ভোমরার মোড় এলাকায় তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা। পরে ভাটা মালিকরা ‘আগামী বছর থেকে অবৈধভাবে ভাটা চালাবেন না’ মর্মে মুচলেকা দেন। সেটি নিয়েই কোনোমতে এলাকা ছাড়ে প্রশাসনের দলটি। এ ঘটনায় ১১ ডিসেম্বর ইটভাটার ১০ মালিকের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া পরিবেশ আদালতে ১০টি মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। 

চরসাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.

মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘আমার কথা কেউ শোনে না। বারবার মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানিয়েও অবৈধ ভাটা বন্ধ হয়নি। বরং বছর গেলেই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।’ ১০ বছর আগে ওই ইউনিয়নে মাত্র একটি ইটভাটা ছিল। অথচ এখন এই সংখ্যা ৩৩টিতে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।

অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযানের তথ্য জানিয়ে ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবারও নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ সময় ছয় ভাটা মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইউএনও আরও বলেন, ৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড র ম চ মন এল ক র ক আরব

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা

শেরপুরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করায় দুই সার ব্যবসায়ীকে প্রায় সোয়া লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এক বিএডিসি সার ডিলারকে ১ লাখ টাকা ও লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রি করায় আরেক ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আরো পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে মহাসড়কে ১০০০ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঝিনাইদহে ২৫০টি অবৈধ জাল জব্দ, বাঁধ উচ্ছেদ

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া আদালত পরিচালনা করেন। তিনি জরিমানার তথ্য জানান।  

ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া বলেন, ‘‘সার বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই অসাধু ব্যাবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। কৃষকের উপর জুলুম মেনে নেওয়া হবে না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের বিভিন্ন সোর্স এ সব অসাধু ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখছেন। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’’ জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

অভিযানকালে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন। বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে বেশি দামে সার বিক্রির প্রমাণ পেয়ে বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রয় করায় একই বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা শিশির এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু বলেন, ‘‘আমন মৌসুসে সারের দাম ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। আমরা যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই।’’

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় পুলিশ দেখে পালালেন শিকারিরা, উদ্ধার ৪৫টি ঘুঘু অবমুক্ত
  • শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা