রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাইরে থেকে ভবনের নিচতলায় ‘পেট্রলবোমা’ নিক্ষেপ করে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রাত দুইটার দিকে চার–পাঁচ ব্যক্তি তুরাগের দিয়াবাড়ির বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের ১ নম্বর ভবনের সামনে যান। তাঁরা ভবনের নিচতলায় ‘পেট্রলবোমা’ নিক্ষেপ করলে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, বাইরে থেকে কাচের বোতলে পেট্রল ভরে ভবনটিকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ভবনটির ফটকে আগুন ধরে যায়। কিছু বৈদ্যুতিক তার পুড়ে গেছে। নিচতলার বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগুন ওপরের দিকে যেতে পারেনি। কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। এই আগুনে বিআরটিএর ৪০-৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) সাদ্দাম হোসেন আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছেন, চার–পাঁচজন যুবক পেট্রল, অকটেন বা এ–জাতীয় দাহ্য কোনো পদার্থ বোতলে ঢুকিয়ে বিআরটিএ ভবনের উদ্দেশে মেরেছেন। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব আরট এ ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে চট্টগ্রামের ‘হাতির বাংলো’–এর কথা এখন সারা দেশের মানুষ কমবেশি জানেন। ইউটিউবে ‘হাতির বাংলো’ লিখে সার্চ দিলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। ভ্রমণবিষয়ক ভ্লগার আর কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে এটি এখন রীতিমতো ট্রেন্ড। এর মধ্যেই ভবনটি যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানের তালিকায়। কিন্তু শতবর্ষী এই স্থাপনা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী? এর উত্তর পাওয়া গেল হাতির বাংলোর সম্মুখ দর্শনের পর।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির বিপরীতে রেলওয়ের ছোট টিলা ধরে উঠতেই চোখে পড়ল ভবনটি। কাউকে চিনিয়ে দিতে হলো না। একটা আস্ত হাতির মাথা যেন কেউ বসিয়ে দিয়েছেন। বোঝা গেল লোকমুখে এমন নামকরণের কারণও। এমন একটি ভবন নিয়ে মাতামাতি না হওয়াটাই তো অস্বাভাবিক।

যাঁরা জে আর আর টলকিয়েনের ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই হবিটদের কথা মনে আছে। খর্বকায় হবিটদের বাড়ির মতোই অনেকটা রূপকথার আদল আছে এতে। আর পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে এশিয়ান হাতির আকৃতি। রূপকথার আবেশে মিশেছে প্রকৃতির মূর্ত প্রতিকৃতি। সব মিলিয়ে ভবনটি অনন্য। ডুপ্লেক্স এই বাড়ি নিয়ে মানুষের কৌতূহল দীর্ঘদিনের। প্রতিদিনই বাংলোটি দেখতে আসেন অনেকেই। ছবি ও ভিডিও তুলে রাখেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুক, ইউটিউবে তা ছড়িয়েও দেন। এভাবে হাতির বাংলো নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল বেড়ে চলেছে।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার আর সিআরবির মাঝের পাহাড়ে অবস্থিত রেলওয়ের হাতির বাংলো। যেতে হয় নগরের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও লেডিস ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে।

এই বাংলো ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই রেলওয়ের কাছে। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৮৯৮ সালের দিকে এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে। ওই সময় চট্টগ্রামে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। তখন নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের থাকার জন্য এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে।

ব্যতিক্রমী স্থাপত্য

এখন যেমন পাহাড় কেটে, গাছপাল কেটে ভবন নির্মাণ করা হয়, হাতির বাংলো নির্মাণে তার কিছুই হয়নি। চারপাশের সৌন্দর্যকে এতটুকুও ব্যাহত করা হয়নি, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে এই স্থাপনা।

পাহাড়ি এলাকায় পিচঢালা সড়কের পাশে খোলা প্রাঙ্গণ। তা পেরিয়ে হাতির বাংলো। হাতির বাংলোর প্রবেশফটকে রয়েছে হাতির মুখ, শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে। শুঁড় যেমন ঢেউয়ের মতো, ঠিক তেমনই ডুপ্লেক্স বাড়ির ওপরের অংশটিও। এর খোলা অংশটি দোতলার ব্যালকনি। এরপর রয়েছে বড় একটি কক্ষ, যা প্রায় হলরুমের সমান। কেউ থাকেন না এই কক্ষে। সামনে, পেছনে ও পাশে ছোট-বড় আটটি জানালা রয়েছে। বাংলোর নিচতলায় দুটি আলাদা বড় কক্ষ।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ডেপুটি চেয়ারম্যান আদর ইউসুফ জানান, বাংলোটি নির্মিত হয়েছে হাতির আদলে, যা দেশের স্থাপত্য ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। বাহ্যিক কাঠামোটি ত্রিমাত্রিকভাবে হাতির মতোই—মাথা, শুঁড়, কানের পরিণত অংশ, শরীরের বর্ধিত কায়া ইত্যাদি রূপে গঠিত। ভবনটির মূল কাঠামো নির্মিত হয়েছে ইট ও পাথরের গাঁথুনির ওপর। তবে এর হাতির রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে ফেরো সিমেন্ট, যা উনিশ শতকে উন্নত নির্মাণপ্রযুক্তির নির্দেশক। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কাঠ ব্যবহার করে নির্মিত দরজা ও জানালাগুলোতে কারিগরি দক্ষতার পরিচয় রয়েছে। প্রচলিত ঔপনিবেশিক বাংলোর গঠন থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। স্থাপত্যশৈলীতে কোনো সুপরিকল্পিত আদর্শ অনুসরণ না করলেও একে ঘিরে আছে একধরনের আভিজাত্য ও প্রকৌশলগত সৃজনশীলতা।

এক সময় ডুপ্লেক্স এই ভবনটিতে থাকতেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। সস্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দশমিনায় ভবন নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে খসে পড়ছে পলেস্তারা
  • চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি