নতুন বাংলাদেশে কোনো অশুভ শক্তি যেন সৃষ্টি না হয়
Published: 14th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরার বইমেলায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর স্টলে ভাঙচুর ও ব্যানারে অগ্নিসংযোগ, ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’র স্টলে হামলা এবং টাঙ্গাইলে লালন স্মরণোৎসবে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে উদীচী। সমাবেশ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে কোনো অশুভ শক্তি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে উদীচী চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী একের পর এক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। মাজার ভাঙা হচ্ছে, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে, বাউলগানের আসরসহ লোকসংস্কৃতি চর্চার সব আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বলেন, এমনকি সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সংস্কারের নামে বারবার সংবিধান, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতিচিহ্নগুলোর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, আওয়ামী লীগের পুরো শাসনামল জুড়েই নানা অন্যায়-অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল উদীচী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে উদীচীই প্রথম এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি এবং ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার দাবিতে বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করে।
অমিত রঞ্জন বলেন, এত কিছুর পরও উদীচীর নামে নানা অপপ্রচার চালিয়ে উদীচীর কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরায় উদীচীর স্টলে হামলা যার সবশেষ উদাহরণ। কিন্তু যত বাধাই আসুক, সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রাম থেকে উদীচীকে কখনোই বিচ্যুত করা যাবে না।
উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি প্রবীর সরদার বলেন, উদীচী স্পষ্ট করে বলতে চায়, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে যারাই বেইমানি করার চেষ্টা করবে, সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিরোধ করবে। এক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিদায় হয়েছে; নতুন করে যেন আর কোনো ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ। সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হীরক রাজা, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
আরও পড়ুনসাতক্ষীরায় বইমেলায় পোড়ানো হলো উদীচীর স্টলের ব্যানার১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক ছাত্রদল নেতার নাম
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেম জালিয়াতি করে সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার মামলাটি করেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন মো. আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ মারুফ এলাহী, আল আমিন ও মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁদের মধ্যে আরিফুর রহমানকে আজ সন্ধ্যায় মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলার আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ মারুফ এলাহী এই চক্রের হোতা। তিনি ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তার আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।
মোহাম্মদ মারুফ এলাহীর বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মারুফ এলাহী আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তাঁর কোনো পদপদবি নেই।
এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে টাকা তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার মহা হিসাব নিরীক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এস এম রেজভীর আয়কর রিটার্ন পূরণ করতে গিয়ে দেখেন তাঁর নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ১৩ অক্টোবর তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রেভজী সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার কোনো আবেদন করেননি। পরে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন, টাকা লেনদেনের সীমা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা করাসহ নানাভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ অক্টোবর সঞ্চয়পত্রের ওই ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও দুই ব্যক্তির নামে থাকা ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা।
কীভাবে এই জালিয়াতি
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেবেন, সেই হিসাবেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যায়। উপস্থিত গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তৎক্ষণাৎ সেই ওটিপি দেখানোর পর তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। সব ক্ষেত্রে সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, তাঁদের ওখানে যেসব কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাঁদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে