বিচারিক আদালতের সাজা বহাল চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
Published: 19th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া সাজা বহাল রাখার আরজি জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ বুধবার ওই মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল শুনানিতে তিনি এ আরজি জানান।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানির দিন রয়েছে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
এর আগে ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিতরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে। পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের পর গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ আপাতত যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে।
আজ দিনের প্রথমার্ধে আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের পক্ষে আইনজীবী আজিজুর রহমান শুনানি করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার ও নূর মুহাম্মদ আজমী উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, চারজন সাক্ষীর বরাত দিয়ে অমর্তে৵র বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন। অস্তিত্বহীন জবানবন্দি। কেননা, চার সাক্ষীর কেউই বলেনি যে অমর্ত্য হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও আঘাত করেছে। অথচ রায়ে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণ করেছে, যা জালিয়াতির শামিল।
প্রত্যুত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাক্ষী যা বলেননি, তা বিচারিক আদালতের রায়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছেন। এখানে কোড–আনকোড উল্লেখ করা হয়নি। সাক্ষীর বক্তব্য সামারি করে বলা হয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে প্রসিকিউশনের ঘটনাকে সমর্থন করেছেন। যে কারণে অন্যভাবে চিন্তা করার সুযোগ নেই। সাধারণ পরিবারের সদস্য আবরারের বিরুদ্ধে তখন বিরোধীপক্ষের একটি রাজনৈতিক দলের ট্যাগ দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওই সময় সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ কোনো সাক্ষীকে প্রভাবিত করবে—এমন মনে করা হলে সে ক্ষেত্রে বক্তব্য হচ্ছে, এটি ভ্রান্ত ব্যাখ্যা। এটি বিভ্রান্ত করার জন্যই বলা হচ্ছে। এ মামলায় আটজন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দি দিয়েছেন, যা একে অপরকে সমর্থন করে। এখানে পরিস্থিতিগত প্রমাণাদি এবং আবরারকে কীভাবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, কারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল—সেগুলোও একটি অন্যটিকে সমর্থন করে।
ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল, নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিতরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন হাইকোর্ট আসামিদের জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিতরা। আসামিদের এই ডেথরেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে। গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ২২ জনকে রায়ের দিন আদালতে আনা হয়। পলাতক তিনজন। আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আবর র র ওপর গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।
আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।