বিয়ের পর অভিনয়কে বিদায়: নীরবতা ভাঙলেন মহেশ বাবুর শ্যালিকা
Published: 21st, February 2025 GMT
আশির দশকের শেষ লগ্নে বলিউডে পা রাখেন অভিনেত্রী শিল্পা শিরোদকর। অভিষেক সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে পান— মিঠুন চক্রবর্তী, রজনীকান্ত, রেখার মতো তারকাদের। এরপর ‘যোধা’, ‘ত্রিনেত্র’, ‘হাম’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এসব সিনেমায় সুনীল শেঠি, অনীল কাপুর, মাধুরী দীক্ষিত, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেন এই অভিনেত্রী।
দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা মহেশ বাবুর স্ত্রী অভিনেত্রী নম্রতা শিরোদকরের সহোদর ছোট বোন শিল্পা। অর্থাৎ সম্পর্কে মহেশ বাবুর শ্যালিকা হন শিল্পা শিরোদকর। ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্যাংকার অপরেশ রঞ্জিতকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর স্বামীর সঙ্গে বিদেশে পাড়ি জমান। বিয়ের ১৮ বছর পর বলিউডের একটি সিনেমায় অভিনয় করেন শিল্পা। তারপর আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাকে।
ক্যারিয়ারের ভালো সময়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত ও দেশ ছাড়ার পেছনের গল্প নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পা শিরোদকর। এ অভিনেত্রী বলেন, “২০০০ সালে আমি বিয়ে করি। আমার মা বিশ্বাস করতেন, ‘সবকিছু সঠিক সময়ে হওয়া উচিত। তা না হলে তুমি তোমার নৌকা মিস করবে।’ তারপর সারা জীবন অভিযোগ করবে, আমি এটা করতে পারতাম। কিন্তু করতে পারিনি।’ আমার এগিয়ে যাওয়া জরুরি ছিল। ২৬-২৭ বছর বয়সি একজন মেয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো— বিয়ে। আমি বিয়ে করেছি। ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে বিয়ে করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।”
আরো পড়ুন:
রাজামৌলির সিনেমার জন্য ১৬৪ কোটি টাকা ছাড়াও লভ্যাংশ নেবেন মহেশ!
তিনটি শব্দ বলার জন্য মহেশ পারিশ্রমিক নিলেন সাড়ে ৬ কোটি টাকা
বিয়ে করা ও ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কখনো আফসোস করেননি শিল্পা। সবসময় তার মায়ের সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রেখেছিলেন। বিয়ে ছিল তার পছন্দের সিদ্ধান্ত। তবে কখনো ভারত ছেড়ে যেতে চাননি। কিন্তু ভাগ্যের পরিকল্পনা ভিন্ন ছিল বলেও মনে করেন এই অভিনেত্রী।
ব্যাখ্যা করে শিল্পা শিরোদকর বলেন, “কোনোরকম অনুশোচনা ছিল না। মা যা বলতেন, আমি সবসময় তা শুনতাম। আমি সবসময় অনুভব করতাম, মা আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা সঠিক। সিদ্ধান্ত ছিল বিয়ে করা ও কখনো ভারত ছেড়ে না যাওয়া। কিন্তু আগেই বলেছি, ভাগ্যের ভিন্ন পরিকল্পনা থাকে। কেবল ভাগ্যে ছিল বলেই আমি ভারত ছেড়ে চলে যাই; এ কারণে কাজ চালিয়ে যেতে পারিনি। আমি পুরোপুরি একজন গৃহিণী হতে চেয়েছিলাম।”
যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন বসবাসের পর ভারতে ফিরেছেন শিল্পা। মুম্বাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করেছেন। এ বিষয়ে শিল্পা বলেন, “আমি গত দুই বছর ধরে কাজ খুঁজছি। স্থানান্তরিত হতে চাই কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে আমার একটু সময় লেগেছে।”
যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন কাজের জন্য অনেকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছেন। সেই স্মৃতি স্মরণ করে শিল্পা শিরোদকর বলেন, “আমি যখনই ফোন করে বলতাম, ‘আমি কাজ খুঁজছি’, তারা উত্তর দিতেন, ‘এখানে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না’। সেসব ব্যক্তিরাই এখন আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘মুম্বাই আছি কিনা, এক কাপ কফি খেতে পারি কিনা?’ আমি অহংকারী হতে চাই না। বলতে চাই না, ‘আমি যখন কাজ খুঁজছিলাম আপনি তখন আমাকে উপেক্ষা করেছিলেন।”
অভিনয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত কেবল নেননি, এরই মধ্যে নতুন সিনেমায় অভিনয়ের ঘোষণাও দিয়েছেন শিল্পা। নির্মাতা ভেঙ্কট কল্যাণ ‘জটাধার’ সিনেমা নির্মাণ করছেন। এতে দেখা যাবে শিল্পাকে। সুধীর বাবুর বিপরীতে অভিনয় করবেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ র দকর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।