চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায় চাপাতি দিয়ে এক যুবককে কোপানোর ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের হিলভিউ রহমান নগর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো. জুলহাস (১৯) ও মো. শাহীন আলম (১৯)। দুজনই নগরের বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা।

এর আগে গত বুধবার রাতে নগরের মুরাদপুর আতুরার ডিপো এলাকার আজিজ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় মো.

আকাশ (২২) নামের এক তরুণকে। তিনি আজিজ মার্কেটের হাজারী বস্ত্র বিতানের কর্মচারী। পুলিশ জানায়, কথা-কাটাকাটির জেরে জুলহাস ও শাহীন প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে জখম করেন আকাশকে। এতে আকাশের ডান হাতের কবজি, বাঁ পায়ের হাঁটু ও পিঠের ডান পাশের ওপরের অংশে জখম হয়।

এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জুলহাস ও শাহীন মিলে আকাশকে ধরে একপাশে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে সেখানে চাপাতি দিয়ে কোপ দেন। আকাশের চিৎকারে সেখানে কয়েকজন দোকানি ও স্থানীয় বাসিন্দা জড়ো হলেও ভয়ে কেউ সামনে আসেননি। পরে জুলহাস ও শাহীন গলি থেকে বের হয়ে গেলে তাঁরা আকাশকে উদ্ধার করেন।

পুলিশ জানায়, স্থানীয় লোকজন আকাশকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে আকাশ জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনার অভিযোগ পেয়ে হিলভিউ রহমান নগর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে মো. জুলহাস ও মো. শাহীন আলমকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের কাছে থাকা চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য খণ্ডন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের

২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহ নিয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। 

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমিরের বক্তব্য, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেস উইংয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ- সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। খবর বাসসের 

প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে-

তদন্ত কমিশন

২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর কর্মী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং এমনকি যেকোনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র তদন্তে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছে তাদের ওয়েবসাইট বা ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।

সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার

স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুনঃতদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে, মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সকল বিদেশী বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে।

তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন

প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্বলিত যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে তার ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য কমিশন ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে- তানিয়া আমিরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

আদালতের মামলা এবং মুক্তি

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েকশ’ সাবেক বিডিআর কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে তানিয়া আমিরের অভিযোগ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  বন্দইদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত অফিসারদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।

নিহতদের স্মরণ

অন্তর্বর্তী সরকার একই সঙ্গে নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমিরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা দলের সাথে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।

‘তার পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত: তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবুও তাকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে- এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমির এবং অন্যান্য বক্তারা কোনও নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং, তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো  (যেমন মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দীদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ