চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ ৮টি রাজনৈতিক দলের ২২ জন নেতা গতকাল সোমবার চীন সফরে গেছেন। এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাতসহ সংগঠনটির চারজন। এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

গতকাল মধ্যরাতে গণমাধ্যমে পাঠানো জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে অবগত নয় এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পায়নি। একই সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে কেউ এই প্রতিনিধিদলে অংশগ্রহণ করছেন না বা প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

চীন সফরে ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদলে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আলী আহসান জোনায়েদ ও ও রাফে সালমান রিফাত ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। এর মধ্যে জোনায়েদ জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হবেন, এমন আলোচনা রয়েছে। আগামী শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তরুণদের এই নতুন রাজনৈতিক দল।

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের অংশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি নতুন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ দাবি করা হয়। অন্যদিকে নতুন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

সম্প্রতি শিবিরের সাবেক নেতাদের অংশটি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজেদের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেয়। আখতারের সমর্থকেরাও আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে পোস্ট দেন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে শিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতৃস্থানীয়দের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় একধরনের সমঝোতা হয়। সমঝোতার পর শীর্ষ চার পদের (আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক) পাশাপাশি নতুন করে আরও দুটি নতুন পদ (জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব) সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সমঝোতার আলোকে শিবিরের সাবেক নেতা আলী আহসান জোনায়েদকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করার পরিকল্পনা ছিল। রাফে সালমানকেও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা ছিল।

আরও পড়ুনবিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাসহ ২২ জন চীন যাচ্ছেন কাল২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কিন্তু নাগরিক কমিটির কেউ কেউ শুরু থেকেই আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমানকে গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখার পক্ষে ছিলেন। তাঁদের কারও কারও যুক্তি ছিল, আওয়ামী লীগ জুলাই অভ্যুত্থানকে জামায়াত–শিবিরের আন্দোলন বলে প্রচার করে আসছে। সেই জায়গা থেকে কৌশলগত কারণে হলেও শীর্ষ পদগুলোতে শিবিরের সাবেক নেতাদের না রাখাটা ভালো হবে। তবে নাগরিক কমিটির নীতিনির্ধারকদের অনেকে নতুন দলকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ করার জন্য তাঁদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার পক্ষে ছিলেন।

সর্বশেষ চীন সফরের পর আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমানদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন তৈরি হয়। গতকাল রাতে নাগরিক কমিটির জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কারণে বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটির আনুষ্ঠানিক সম্মতির বাইরে এভাবে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চীন সফরের বিষয়টি নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। ফলে আলী আহসান জোনায়েদকে নতুন দলের শীর্ষ ছয় পদের একটিতে রাখা নিয়ে যে আলোচনা ছিল, শেষ পর্যন্ত তাঁকে সেই পদে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবা হতে পারে।

আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে কেউ চীন সফরে যাচ্ছেন না১৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহস ন জ ন য় দ সদস যসচ ব চ ন সফর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন’, জামায়াত আমিরের দুঃখ প্রকাশ

নারী বিষয়ক কমিশনের রি‌পোর্ট‌কে শরীয়তবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য রিপোর্ট উল্লেখ ক‌রে এর ওপর বুধবার প্রদত্ত বক্তব্যের এক পর্যায়ে একটি শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন হয়েছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৃহস্প‌তিবার (১ মে) নি‌জের ও দ‌লের ফেসবুক পে‌জে এ কথা ব‌লেন তিনি।

এতে তি‌নি জানান, অসাবধানতাবশত ভুল শব্দ চয়ন হয়েছে, যা একান্তই অনিচ্ছাকৃত। এজন‌্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন তি‌নি।

আরো পড়ুন:

প্রতিহিংসার রাজনীতিতে শান্তি আসতে পারে না: জামায়াত আমির

দেশকে যে ভালোবাসে, সে দেশ ছেড়ে পালায় না: শফিকুর রহমান

জামায়াত আমির ব‌লেন, “রেইপ হচ্ছে বিবাহবহির্ভূত এক ধরনের জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক, যা সাধারণত বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে ঘটে, যেখানে অপরাধী ব্যক্তিটি অসৎ ও দোষী, কিন্তু ভিকটিম সম্পূর্ণ নিরপরাধ।”

“আমি এটাও মনে করি যে, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ‘রেইপ' এর মতো জঘন্য শব্দকে প্রবেশ করানো পবিত্র এই সম্পর্কের জন্য অবমাননাকর এবং দীর্ঘ মেয়াদে দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে কারো দ্বারা সীমালঙ্ঘন বা জুলুম সংঘটিত হলে তা স্বাভাবিক বিচারের আওতায় অবশ্যই আনতে হবে। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যকার কোনো অনাকাঙ্খিত বিষয়কে রেইপ বা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে তুলনা করা অবাঞ্ছণীয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যাজনক।”

“আমার এই অনিচ্ছাকৃত শব্দ চয়নের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সর্বদা সেই মূলনীতির ওপরই প্রতিষ্ঠিত,” ব‌লেও দা‌বি ক‌রেন তি‌নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ