আইন শক্তিশালীকরণের দাবিতে তামাকবিরোধী যুব সমাবেশ
Published: 10th, July 2025 GMT
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবিতে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে শক্তিশালী ও উদ্দীপনামূলক যুব সমাবেশ। ‘তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত শক্তিশালী করা প্রয়োজন’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার ঢাবির মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডর্প)। এতে অংশ নেয় ঢাকা আহছানিয়া মিশন, নারী মৈত্রী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনসহ দেশের বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন।
সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, ঢাকা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ ও খিলগাঁও মডেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তামাকমুক্ত ভবিষ্যতের জন্য তাদের সরব উচ্চারণ ছিল এ সমাবেশের প্রাণ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা.
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন তামাকজনিত রোগে ৪৪২ জন মানুষ মারা যান। বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেন। পরোক্ষ ধূমপানে শিকার ৪২.৭ শতাংশ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ না হলে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচানো সম্ভব নয়।’
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক নাসরিন আক্তার ডলি বলেন, ‘এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫% প্রাথমিক শিক্ষার্থীর শরীরে উচ্চ মাত্রার নিকোটিন রয়েছে! আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত ধ্বংস হচ্ছে। তামাক কোম্পানির কৌশলের বিরুদ্ধে আইনে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের ৪৯ শতাংশ যুবসমাজ তামাকে আক্রান্ত হলে দেশও অন্ধকারে যাবে। খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করতে হবে। একবার এই ফাঁদে পড়লে বের হওয়া কঠিন। তারা আইনের সংশোধনী পাসের জোর দাবি জানান।
ডর্প-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর জেবা আফরোজা মূল প্রবন্ধে ছয়টি জরুরি সংশোধনী তুলে ধরেন। সেগুলো হলো— ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ। তামাক কোম্পানির সিএসআর নিষিদ্ধ। ই-সিগারেট নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। খুচরা ও খোলা তামাক বিক্রি বন্ধ এবং স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৯০ শতাংশ করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন