ঈদ ঘিরে ধনী থেকে গরিব সব শ্রেণির ক্রেতার মেলবন্ধন ঘটে চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দীন বাজার, টেরি বাজার ও জহুর হকার্স মার্কেটে। এখানে কম দামে মেলে ভালো পণ্য। তাই ক্রেতাদের পছন্দের বাজারে পরিণত হয় এ তিন মার্কেট। তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে কসমেটিক্স, জুতা সবই মিলে এখানে। রমজান আসতেই ক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠছে রিয়াজউদ্দীন বাজার, টেরি বাজার ও হকার্স মাকের্টের অলিগলি। এর মধ্যে টেরি বাজার ও রিয়াজউদ্দীন বাজার রমজানের ১০ দিন আগে থেকেই জমে উঠেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পাইকারি পণ্য কিনতে টেরি বাজার ও রিয়াজউদ্দীন বাজারে ভিড় করে যাচ্ছেন।
টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘শবেবরাতের পর থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রচুর পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এখন পাইকারি বিক্রি একটু কমে এলেও নগরের মানুষ মার্কেটের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ঈদের বাজার শুরু করে দিয়েছেন। প্রথম রমজান থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটায় টেরি বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। ঈদকে ঘিরে প্রায় ৪৫ দিন আমাদের ভালো বেচাকেনা হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় ভালো ব্যবসার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।’
সরগরম টেরি বাজার : একসময় কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে এ বাজারের সুখ্যাতি থাকলেও সময়ের ব্যবধানে খুচরা কেনাকাটার জন্যও টেরি বাজার সুনাম কুড়িয়েছে। কাপড়ের পাইকারি দোকানের পাশাপাশি সময়ের বিবর্তনে এখানে স্থান করে নিয়েছে একাধিক আধুনিক শপিংমল ও মেগাশপ। টেরি বাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮৫টি মার্কেট রয়েছে। দোকানের সংখ্যা দুই হাজার। এসব দোকানে শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি, শার্ট থেকে শুরু করে থান কাপড়, কসমেটিক্সসহ সাজসজ্জার নানা উপকরণ খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। গিফট দেওয়ার জন্য কিছু কাপড় কিনতে ছুটে যান এখানে।
ব্যবসায়ীরা জানান, শবেবরাতের পর থেকে মূলত তাদের বিক্রি শুরু হয়। রমজান শুরুর আগে পাইকারি বিক্রি বেশি থাকলেও রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুচরা ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়। শুক্রবার সরেজমিন চট্টগ্রাম নগরীর টেরিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে। সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চলে কাপড় বিক্রি। টেরি বাজারের নিউ বধূয়া শপিং সেন্টারের পরিচালক এনএইচ রাসেল বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন পাইকারি বিক্রি করেছি। রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা শুরু হবে। অনেকে মার্কেটের ঝামেলা এড়াতে একটু আগেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করে ফেলেন। প্রতিটি দোকানেই এখন ঈদের বেচাবিক্রির ব্যস্ততা রয়েছে।’
সবই মিলে রিয়াজউদ্দীন বাজারে: কথায় আছে, ‘হাতির দাঁত থেকে বাঘের নখ পর্যন্ত সবই মেলে রিয়াজউদ্দীন বাজারে। ঈদ পোশাক, কসমেটিক, বিদেশি পণ্যের সমাবেশ প্রাচীন মার্কেটে মেলে। নগরজুড়ে ঝা চকচকে মল, সুপার মার্কেট, শপিং প্লাজার রমরমার মধ্যেও সাশ্রয়ী মূল্যে বিপুল
কেনাকাটার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের ভরসা রিয়াজউদ্দীন বাজার। রিয়াজউদ্দীন বাজার চট্টগ্রাম শহরের একটি ঐতিহাবাহী বাজার। ব্যস্ততম মার্কেট। দুই শতাধিক মার্কেটে ১০ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে এ বাজারে। সব ধরনের কেনাকাটার জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেন মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারের সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি ও খুচরা দুই কেনাকাটার জন্য এই বাজারে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। এখানে মেলে না এমন কিছু নেই। ক্রেতা যা চায় তাই কিনতে পারেন সুভল মূল্যে।’ রিয়াজউদ্দীন বাজারের মহিউদ্দীন সুপার মার্কেটের কর্মকর্তা সালেহ আহমদ সোলাইমান বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রচুর ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। সব শ্রেণীর মানুষ কেনাকাটা করতে আসছেন। রিয়াজউদ্দীন বাজার ধীরে ধীরে আগের চিরচেনা জমজমাট পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে।’
স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা হকার্স মার্কেট : নগরের স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটার জন্য হকার্স মার্কেট অন্যতম। কিন্তু অনেকে বিত্তবানও হকার্স মার্কেটের ক্রেতা। এখানে ব্র্যান্ড থেকে কমমূল্যের পোশাকই পাওয়া যায়। হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ফজলুল আমিন বলেন, ‘রমজান শুরুর সাথে সাথে বিক্রি মোটামুটি বেড়েছে। মার্কেট জমজমাট হতে শুরু করেছে। আশা করছি সামনে বিক্রি বাড়বে। যারা চাকরিজীবী তাদের অনেকেই এখনও বেতন-বোনাস পায়নি। বেতন-বোনাস পেলে বিক্রি আরও বাড়বে। রোজার শেষ দিকে আমাদের বিক্রি বাড়ে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ প শ ক র য় জউদ দ ন ব জ র ক ন ক ট র জন য হক র স ম র ক ট ঈদ র ক ন ক ট রমজ ন শ র ব যবস য় ন বল ন নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
২৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে প্রথম আলোর। ৪ নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যাটিতে লেখা থাকবে বর্ষ ২৮, সংখ্যা ১। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো—এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বরে বেরিয়েছিল প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যা। ঝকঝকে ছাপা, রঙিন ছবি, ১২ পৃষ্ঠার কাগজ, প্রতিদিন নতুন নতুন ফিচার পাতা, দলনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার, বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা, পেশাদারত্বের উৎকর্ষ আর নতুনকে মেনে নেওয়ার অবিরাম প্রয়াস—সব মিলিয়ে প্রথম আলো হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষের এক অপরিহার্য সঙ্গী। হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম আলো লাভ করে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্মান। নানা রকমের বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে সত্যে তথ্যে প্রথম আলো আজ শুধু একটা কাগজ নয়, একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মও। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে প্রথম আলো লাভ করেছে বাংলাভাষী পাঠকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা, তেমনি ওয়ান–ইফরা বা ইনমার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে এ গণমাধ্যম লাভ করছে সম্মানজনক স্বীকৃতি, বিশ্বসেরা আর এশিয়া সেরার পুরস্কার।
প্রথম আলোর ঢাকা অফিস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে বেজে উঠেছে উৎসবের আনন্দলহরী। জেলায় জেলায় চলছে প্রথম আলোর লেখক–সুধী পাঠক আর শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলনীর প্রস্তুতি। কাগজে, অনলাইনে, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য কর্মী আর অংশীজনদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য।
প্রথম আলো কাগজটি মোট ৪ দিন প্রকাশিত হবে বর্ধিত কলেবরে। ৪ দিনে থাকবে ৪টি ক্রোড়পত্র। লিখবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা লেখকেরা। থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের আঁকা প্রচ্ছদ।
৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার বের হবে ‘বৈষম্য পেরিয়ে’
২০২৪ সালের বিপুল অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা পথে এসেছিল বৈষম্যের বিলোপ চেয়ে। এই ক্রোড়পত্রে লেখকেরা খুঁজে দেখছেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও রাজনীতির অঙ্গনে বৈষম্যের রূপ। খোঁজার চেষ্টা করেছেন উত্তরণের উপায়।
৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার প্রকাশ পাবে ‘বৈষম্যের অন্দরে’
সমাজ আর জনগোষ্ঠীর গভীরে থেকে যাওয়া বৈষম্য প্রতিফলিত হয় রাষ্ট্রে। আবার রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে ভিত্তি দেয়। দেশের নারী–লেখক ও ভাবুকেরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা নানা বৈষম্যের চেহারা।
৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার আসছে ‘তারুণ্যের দিগন্ত’
তরুণদের সামনে নতুন পৃথিবীর আহ্বান। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পথে শত বাধা ও বৈষম্যের প্রাচীর। আবার তরুণেরাই সেসব বৈষম্যের বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলেন। তরুণদের পথের সেসব বাধা আর বাধা পেরোনোর গল্প নিয়ে এই ক্রোড়পত্র।
৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার প্রকাশিত হবে ‘আলোর গল্প’
সাংবাদিকতা শেষ পর্যন্ত জনমানুষের জন্য। সত্য ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য প্রথম আলো সেসব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রথম আলোর নানা উদ্যোগের লক্ষ্যও মানুষ। এই ক্রোড়পত্র গত একটি বছরে প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্পের সমাবেশ।
অনলাইনে থাকছে আকর্ষণীয় আয়োজন
লেখা, ছবি, ভিডিও, পডকাস্টসহ নানা কনটেন্ট দিয়ে সাজানো হবে প্রথম আলো ডটকম, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দালোকিত দিনগুলোতে প্রথম আলো ডটকম থাকবে জমজমাট। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর ফলোয়ারদের জন্য থাকবে বাড়তি কিছু, উৎসবের উপহার।
প্রথম আলোর কর্মীরা মিলবেন প্রীতিসম্মিলনীতে
৪ নভেম্বর প্রথম আলো তার সব কর্মীকে নিয়ে আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রীতিসম্মিলনী। রাজধানীর একটি বড় মিলনায়তনের একাধিক হলরুমজুড়ে বসবে এই আসর। তাতে সারা দেশের প্রথম আলো প্রতিনিধি, ঢাকার সর্বস্তরের স্টাফদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও। থাকবেন অতিথি বক্তা ও শিল্পীরা।
প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ
এরই মধ্যে সারা দেশে প্রথম আলোর শতাধিক বন্ধুসভা ‘একটি করে ভালো কাজ’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুধী সম্মিলনী আয়োজনের জন্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্ধুসভা কাজ করে চলেছে উৎসাহের সঙ্গে। ঢাকা বন্ধুসভাও ১৩ নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে বন্ধুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব।
২০২৩ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘হারবে না বাংলাদেশ।’ গত বছর প্রথম আলো বলেছিল ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। সত্যে তথ্যে ২৫, সত্যে তথ্যে ২৬ পেরিয়ে এল ২৭ বছর পূর্তির উৎসব।
প্রথম আলো আজকের দিনে, যখন চারদিকে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি, যখন দেশবাসী অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশার মধ্যে দিগন্তে তাকিয়ে আছেন আলোকরেখার জন্য, তখন প্রথম আলো ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কী স্লোগান নিয়ে আসছে? জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।