ওয়াহিদা আহমেদ রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন টেলিমার্কেটিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বিদেশে ক্রেতার কাছে ফোন করে নিজের কোম্পানির পণ্য বিপণনে সহায়তা করেন। আয়রোজগার মন্দ নয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চাকরি করছেন।

ওয়াহিদা আহমেদের বাড়ি নাটোর জেলার সদর উপজেলার আলাইপুরে। টেলিমার্কেটিং করে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন, আর তা দিয়ে বেশ ভালো চলে।

ওয়াহিদা আহমেদ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেলিমার্কেটিং বিভাগের নাটোর সেন্টারে কাজ করেন। তিনি মূলত প্রাণ-আরএফএলের পণ্য কুয়েতের যেসব সুপারশপ বা দোকানিরা কেনেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। প্রতিদিন গড়ে ৮০টির মতো ফোনকল করেন। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই কল করেন তিনি। ফোন করে তিনি ওই সুপারশপ বা দোকানিকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর নতুন করে কোনো পণ্য লাগবে কি না। এ ছাড়া কোনো অভিযোগ থাকলেও এর সমাধানের চেষ্টা করেন। ক্রয়াদেশ পেলে ওয়াহিদা আহমেদ তা প্রাণ-আরএফএলের নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে তা সন্নিবেশিত করেন। প্রতিষ্ঠান সেই অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ করে। এভাবে তিনি কোম্পানির পণ্যের বিপণনে সহায়তা করেন।

ওয়াহিদা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই পেশা নতুন ধরনের ও চ্যালেঞ্জিং। আয়রোজগার ভালো। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এই পেশায় আসছেন। অনেকটা ঘরে বসেই এই পেশায় আয় করা যায়। বড় বড় শহরের বাইরে মফস্‌সলের শিক্ষিত তরুণ-তরণীরা এই পেশায় আসতে পারেন। তিনি জানান, বেতনের পাশাপাশি ক্রয়াদেশের ওপর নির্দিষ্ট হারে অর্থ পান তিনি।

ওয়াহিদা আহমেদের মতো ঘরে বসেই দেশে-বিদেশে পণ্যের মার্কেটিং বা বিপণন পেশা হিসেবে নিয়েছেন প্রায় সাড়ে সাত শ নারী। দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে এমন সাড়ে সাত শ নারী কাজ করছেন।

টেলিমার্কেটিং পেশায় থাকা তরুণীরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের ছোট-বড় সুপারশপের মালিকদের ফোন দিয়ে বাংলাদেশের পণ্যের কথা বলেন এবং ক্রয়াদেশ দেন। সেই অনুসারে আমদানিকারককে জানানো হয়। এভাবে দেশে–বিদেশ টেলিমার্কেটিংয়ের কাজ করছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা।

নারীদের সম্পৃক্ত করে টেলিফোনের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২৪ সালে টেলিমার্কেটিং ধারণা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। শুরুতে বিভিন্ন দেশের পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার তথ্যসংবলিত একটি সফটওয়্যার তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে মাত্র চার নারী কর্মী নিয়োগ দিয়ে নাটোরে একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, নাটোর ও রাজশাহী অঞ্চলে তিনটি সেন্টারে প্রায় ৭৫০ নারী কর্মী টেলিমার্কেটিংয়ের কাজ করছেন। যাঁরা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য বিশ্ববাজারে ক্রেতার সামনে তুলে ধরছেন। নিয়োগ পাওয়া নারী কর্মীরা ভালো করায় এ খাত নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখছে শিল্প গ্রুপটি। এ জন্য টেলিমার্কেটিং খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে টেলিমার্কেটিং সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

টেলিমার্কেটিংয়ের যাত্রা নিয়ে গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, সশরীর বিপণন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি অনেক ব্যয়বহুল। টেলিফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জায়গায় বসে বিদেশে যোগাযোগ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নারীদের যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ এলাকায় কাজের সুযোগ দেওয়া যায়, তবে তাঁরা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। সেই চিন্তা থেকেই মূলত নারী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে টেলিমার্কেটিং খাতের চিন্তা আসে।

কীভাবে কাজটি করা হয়

প্রথমেই প্রাণ-আরএফএলের পণ্য বিদেশের যেসব সুপারশপ বা দোকানে রাখা হয়, সেসব সুপারশপের মালিককে ফোন করেন টেলিমার্কেটিংয়ে যুক্ত থাকা নারীরা। নির্দিষ্ট পণ্যটি কেমন বেচাকেনা চলছে, চাহিদা কেমন, বিক্রেতা খুশি কি না, এসব জিজ্ঞাসা করে পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে জানান ওই কর্মী। পরে তাঁর (মালিক) কাছ থেকে সম্ভাব্য ক্রয়াদেশ নেন। এরপর প্রাণ-আরএফএলের নির্দিষ্ট সফটওয়্যার সেই ক্রয়াদেশের তথ্য দেয়। এরপর ওই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওই নির্দিষ্ট দেশের প্রাণ-আরএফএলের পণ্য আমদানিকারককে। ওই আমদানিকারক তাঁর চালানে ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করেন। এভাবে চলে টেলিমার্কেটিংয়ের কাজ।

প্রাণ-আরএফএলের টেলিমার্কেটিং খাতের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ তানবীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের টেলিমার্কেটিং খাতে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেই ভাষাগত দক্ষতা দিয়ে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই আছেন যাঁরা স্নাতক শেষ করেও ঢুকছেন। এখানে আয়ের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ণ আরএফএল গ র প প র ণ আরএফএল র স প রশপ এই প শ ক জ কর আহম দ ব পণন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

লাইটবার খুলে পড়ার আশঙ্কায় টেসলার সাইবারট্রাকের ১০ শতাংশ গাড়ি প্রত্যাহার

আবারও বাজার থেকে সাইবারট্রাক ফিরিয়ে নিচ্ছে টেসলা। এবার এর কারণ সফটওয়্যার নয়, সরাসরি যান্ত্রিক ত্রুটি। যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার ১৯৭টি সাইবারট্রাক প্রত্যাহারের বা রিকলের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনএইচটিএসএ) তথ্য অনুযায়ী, এসব গাড়ির সামনের লাইটবার খুলে পড়ে সড়কে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ মডেলের কিছু সাইবারট্রাকে লাইটবার বসানোর সময় ভুল ধরনের ‘সারফেস প্রাইমার’ ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে আঠালো সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সহজভাবে বললে, টেসলা কিছু গাড়িতে লাইটবার লাগাতে ভুল আঠা ব্যবহার করেছিল। যেসব গাড়িতে এই ত্রুটি রয়েছে, সেগুলোর লাইটবার পরীক্ষা করে দেখা হবে। প্রয়োজনে নতুনভাবে লাইটবার বসানো হবে। সবই গ্রাহকদের জন্য বিনা খরচে। প্রায় ৬ হাজার ২০০টি সাইবারট্রাক প্রত্যাহার মানে টেসলার বিক্রি হওয়া মোট গাড়ির প্রায় ১০ শতাংশই সমস্যাগ্রস্ত।

এর এক সপ্তাহ আগেই আরও একটি বড় ত্রুটির কারণে ৬৩ হাজার ৬১৯টি সাইবারট্রাক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তখন দেখা যায়, গাড়ির সামনের পার্কিং লাইট অতিরিক্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় তা সামনের দিক থেকে আসা গাড়ির চালকদের দৃষ্টিকে ব্যাহত করতে পারে। তবে সেই সমস্যা সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছিল। টেসলার সাইবারট্রাক নিয়ে একের পর এক প্রত্যাহার এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর অনেক সমস্যাই হার্ডওয়্যার–সংক্রান্ত, যেগুলো দূর থেকে সফটওয়্যার আপডেট দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।

সূত্র: ম্যাশেবল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিটা প্রকল্প যথাযথ পরিমার্জনের আহ্বান
  • লাইটবার খুলে পড়ার আশঙ্কায় টেসলার সাইবারট্রাকের ১০ শতাংশ গাড়ি প্রত্যাহার