বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়ক ধরে আট কিলোমিটার গেলে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বম সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের কোমর তাঁতের চাঁদর, কম্বল, মাফলার, ওড়না ছাড়াও হস্ত ও কুটিরশিল্পের পণ্য এবং বাগানের ফলমূল বিক্রি করেন। সেই রোজগারে তাদের সংসার চলে।

শৈলপ্রপাত ঝর্ণার পাশে লাইমি পাড়া ও ফারুক পাড়া। এ দুই পাড়া মূলত বম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে দুই শতাধিক বম পরিবারের বসবাস রয়েছে। এসব পরিবারের নারী সদস্যরা বুনন করেন কোমর তাঁত। তৈরি করেন ছোট-বড় সাইজের বিভিন্ন কম্বল, মাফলার ও চাদরসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র।

শৈলপ্রপাতে স্থায়ীভাবে কোনো বাজার গড়ে না উঠলেও বম নারীরা নিজ উদ্যোগে একটি অস্থায়ী বাজার গড়ে তুলেছেন। সেখানে খ্রিস্টীয় চার্চ সমিতির পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে কয়েকটি ছোট-বাজার শেডও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রোববার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা বম সম্প্রদায়ের নারীরা কোমর তাঁতের বুনন করা কাপড় বিক্রি করে থাকেন।

জেলা কুটির শিল্প সংস্থার তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় প্রায় ১০ হাজার পাহাড়ি নারী কোমর তাঁতে কাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পাহাড়ি নারীরা কোমর তাঁতে তৈরি করেন থামি, গামছা, কম্বল, রুমাল, গায়ের শাল, টুপি, ওড়না ও বিছানার চাদরসহ রকমারি পোশাক। এইসব পোশাক বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। 

কাপড় ও কারুপণ্যের দোকানি জুলি বম জানান, আগের মতো বিক্রি না হলেও মোটামুটি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। রোজার দিন হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। ঈদের ছুটিতে বিক্রি বাড়বে বলে তাঁরা সবাই আশাবাদী।

ফারুক পাড়ার কোমর তাঁত শিল্পী লিমা বম জানান, বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনার কারণে কয়েক বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত আছেন। ভালো মানের একটি থামি (পরনের কাপড়) বিক্রি করেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়।

আরেক তরুণী লাল কিম বম জানান, বাজার থেকে কাপড় কিনে নিজেদের তৈরি চরকার মাধ্যমে সুতা তৈরি করেন। সে সুতায় রঙ লাগিয়ে রোদে শুকানোর পর কোমর তাঁতের মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয়। পরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে কিনে করে নিয়ে যায়। সব কিছু মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুপন চাকমা জানান, জেলায় বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কম-বেশি সবাই কোমর তাঁতে কাপড় বুনে থাকে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মূলত বম নারীরা পর্যটকদের ঘিরে কোমর তাঁত বুনে বাণিজ্যিকভাবে আয় করে থাকে। বিভিন্ন সময় পাহাড়ি তরুণীদের কোমর তাঁত বুননের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বান্দরবান উপ-ব্যবস্থাপক মো.

শামীম আলম জানান, কোমর তাঁত পাহাড়ি জনপদের প্রাচীন পেশা। কোমর তাঁতের ওপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল। দক্ষ ও যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে কোমর তাঁত উদ্যোক্তারা চাইলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়।
 

ঢাকা/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 
  • কক্সবাজারে পর্যটকদের নতুন ঠিকানা সাম্পান রিসোর্ট