সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে ছেলের হাতে খুন হয়েছেন বাবা। আজ বৃহস্পতিবার ইফতারের সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেলে সুলতান আহমদ তার বাবা দুলু মিয়াকে গলা কেটে হত্যা করে।
ঘটনার পর সুলতানকে আটক করেছে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ। দুলু মিয়া ওই গ্রামের মৃত কুটি মিয়ার ছেলে। নিহত দুলু মিয়ার পরিবার ‘প্রবাসী পরিবার’ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছেলে সুলতান গত ছয় মাস আগে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরেন। দুলু মিয়ার আরও দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সুলতান দেশে ফেরার পর অনেকটা একা থাকতেন। কারো সাথে বেশি কথা বলতেন না। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে।
গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম মোল্লা জানিয়েছেন, ঠিক কী কারণে ছেলে তার পিতাকে খুন করেছে প্রাথমিকভাবে তা জানা যায়নি। ঘটনার পর সুলতানকে আটক ও মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব ক হত য ব ব ক ক প য় হত য
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বছর আগের চেয়ে আম রপ্তানি কম, ব্যবসায়ীরা হতাশ
দেশের বাইরে আমসহ নানা কৃষিপণ্য রপ্তানি করে গ্লোবাল ট্রেড লিংক নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর ইউরোপের তিন দেশে ৩৫ টন আম রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা গত বছর মানে ২০২৪ সালের চেয়ে ২০ টন কম। গত বছর সাত দেশে তারা ৫৫ টন আম রপ্তানি করেছে। তবে সেটিও তার আগের বছর, ২০২৩ সালের চেয়ে কম। সেবার প্রতিষ্ঠানটির মোট আম রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ টন।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় টালমাটাল বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবেই রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু এবার অনেক বেশি রপ্তানি হবে বলে মনে করেছিলেন গ্লোবাল ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলছিলেন, ‘এবার আমের উৎপাদন অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রপ্তানি হলো অনেক কম। এতে আমি হতাশ।’
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার আম রপ্তানির লক্ষ্য ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে চীনে বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানি হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। সেই চীনে মাত্র ৫ টন আম রপ্তানি হয়েছে।
একাধিক রপ্তানিকারক জানান, উড়োজাহাজের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সম্ভাবনার তুলনায় আম কম রপ্তানি হচ্ছে। এর ওপর চীনে আম রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে।
আম রপ্তানির হালচালকৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৮৮ টন আম রপ্তানি হয়েছে। গত বছর বিশ্বের অন্তত ২৬ দেশে ১ হাজার ৩২১ টন আম রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার আম রপ্তানি বেশি হয়েছে। তবে তা ২০২৩ সালের ৩ হাজার ১০০ টনের চেয়ে অনেক কম। সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড। বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালে আম রপ্তানি শুরু হয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর আম রপ্তানি কম হয়েছিল। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। তাহলে রপ্তানি কম হলো কেন? এর জবাবে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোবাশ্বেরুর রহমান বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া বেড়ে সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এবার এক কেজি আম রপ্তানি করতে অন্তত ৫০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বছর দুয়েক আগে লাগত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
রপ্তানিকারকেরা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের তুলনায় বাংলাদেশের আমের দাম কেজিতে অন্তত ১ ডলার বেশি পড়ে। তা ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়া বেশি জটিল। যেমন, ৬০–৭০টা কাগজে সই করতে হয় এবং উড়োজাহাজের বুকিং পেতেও ‘অতিরিক্ত ব্যয়’ করতে হয়।
চীনে রপ্তানিতে হতাশাএ বছর অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম চীনে রপ্তানি হবে বলে কৃষিসচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানিয়েছিলেন মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এরপর ২৮ মে থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হয়। মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই অনুমোদন পায়।
রাজধানীর শ্যামপুরের কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউস আমসহ রপ্তানিযোগ্য নানা কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখভাল করে। তাদের অনুমোদন পেলেই পণ্য বিদেশে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, যদি বাংলাদেশ থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠান চীনে আম রপ্তানির সুযোগ পেত, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকত। এতে পণ্যের মান অনেকটা ভালো হতো। কিন্তু প্রতিযোগিতা না থাকায় একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যে ধরনের পণ্য দিয়েছে, তা-ই নিতে হয়েছে আমদানিকারকদের। সে ক্ষেত্রে মানও অক্ষুণ্ন রাখা যায়নি।
আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাভোর ডি অ্যাপেটাইটের পরিচালক রেজাউল ইসলাম বলছিলেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানকে চীনে রপ্তানির সুযোগ দিলে এবার এত হতাশ হতে হতো না।
চীনে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের আরেকটি বিষয় নিরুৎসাহিত করেছে তা হলো দাম, এ তথ্য দিয়েছেন রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চীনে এক কেজি আম রপ্তানি করে পাওয়া যায় ৭১ টাকা। অথচ ইউরোপের বাজারে এক কেজি আম ২ ডলারে (২৪০ টাকা সমমূল্য) বিক্রি করতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার মেরিডিয়ান ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান চীনে আম রপ্তানির সুযোগ পায়নি। একাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা যথাযথভাবে শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সে জন্য একটি প্রতিষ্ঠানই অনুমোদন পেয়েছে।
তবে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক রপ্তানিকারক বলেই ফেললেন, ‘আমরা যদি ইউরোপ ও আমেরিকায় আম পাঠানোর যোগ্যতা রাখি, তবে চীনে পারব না কেন?’