সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে একলাফে বাড়িয়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। নতুন দাম আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

আজ রোববার বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ নতুন দাম ঘোষণা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো.

আবদুর রাজ্জাক, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার প্রমুখ।

পেট্রোবাংলা এবং গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার আবেদন করেছিল। সে প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয় গত ৬ অক্টোবর।

সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।

দাম বাড়ানোর পর সার কারখানায় গ‍্যাস সরবরাহ না বাড়লে পেট্রোবাংলাকে জরিমানা করা হবে কি না বা দাম কমানো হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম‍্যান জালাল আহমেদ বলেন, পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সার কারখানায় গ‍্যাস সরবরাহ বাড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। ছয় মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরো মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে (এপ্রিল-মে) ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে।

সার কারখানায় পুরো মাত্রায় গ্যাস দেওয়া হলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে। বছরে ৩০–৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার জোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬–২১ লাখ টন জোগান দিতে হয়।

ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুনসার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব০৬ অক্টোবর ২০২৫

এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন কাফকো সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র ট ল ইজ র য স সরবর হ ২০ ল খ টন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে চাহিদার ৭৫ শতাংশের কম সার সরবরাহ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

এখন চলছে ফসল আবাদের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে শরীয়তপুরে সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের চাহিদার বিপরীতে ৪৪ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কম সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থানে নিকটবর্তী বাজারে সার না পেয়ে দূরবর্তী বাজার থেকে কৃষকদের অতিরিক্ত দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় উৎপাদিত ফসলের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলায় ৮২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন কৃষকেরা। সেপ্টেম্বর মাস থেকে শরীয়তপুরের কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন শাকসবজি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, রবিশস্য, তেলজাতীয় ফসল, ডালজাতীয় ফসল, মসলাজাতীয় ফসল, ধানের বীজতলা ও বিভিন্ন ধরনের ধানের আবাদ শুরু করেন। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কৃষকেরা ওই সব ফসল আবাদ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত থাকেন। এই চার মাস শরীয়তপুরে ফসল আবাদের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমেই জেলায় সারের বরাদ্দ কম পাওয়া গেছে।

ফসলের এ মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) শরীয়তপুরের ৮২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল আবাদের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সারের চাহিদা পাঠায়। যার মধ্যে ইউরিয়া ১৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন, ডিএপি ১২ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন, এমওপি ৮ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় সারের বরাদ্দ দিয়েছে কম। শরীয়তপুরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ইউরিয়া ৭ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন, ডিএপি ৭ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন, এমওপি ২ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে চাহিদার চেয়ে কম পাওয়া গেছে ইউরিয়া ৫৭ শতাংশ, টিএসপি ৬৪, শতাংশ, ডিএপি ৪৪ শতাংশ এবং এমওপি ৭৫ শতাংশ।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৭১ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। সরকার–নির্ধারিত প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি সার ২০ টাকা দামে বিক্রি করতে হবে। ওই দামে কৃষক তাঁর প্রয়োজনীয় সার ডিলার পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ থাকায় ডিলার ও ডিলারদের নিয়ন্ত্রিত খুচরা ব্যবসায়ীরা বর্তমানে প্রতি কেজি সার ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয় সারা বছরের চাহিদা নেওয়ার পর তার বিপরীতে বরাদ্দের তালিকা পাঠায়। ওই তালিকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাস অনুযায়ী বণ্টন করেন। তারপর ইউনিয়নভিত্তিক সারের ডিলারদের মধ্যে ওই ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই বরাদ্দ অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বিসিআইসি ও যশোরের নওয়াপাড়ায় থাকা বেসরকারি আমদানিকারকেরা ডিলারদের অনুকূলে সার সরবরাহ করেন।

কয়েকজন কৃষক জানান, শরীয়তপুরের কৃষকেরা ইউরিয়া, টিএসটি, ডিএপি ও এমওপি সার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। প্রতি শতাংশ জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য তিন কেজি সার ব্যবহার করা হয়। যার সরকার–নির্ধারিত দাম ৮০ থেকে ৮২ টাকা। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে ওই সার কৃষককে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। প্রতি শতাংশ জমিতে কৃষককে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদিত ফসলের খরচ বাড়বে।

নড়িয়ার নশাসন এলাকার কৃষক মোকলেছ খন্দকার ১৬৫ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শাকসবজি, পেঁয়াজ ও রসুন আবাদ করেছেন। ওই ফসলগুলোর জন্য তাঁর ২০ হাজার টাকার সার ক্রয় করতে হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় তাঁকে সার সংগ্রহ করতে সাড়ে ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে।

মোকলেছ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে ডিলারের কাছে গেলে বলেন সার পাই না, কোথা থেকে দেব? যা চাই, তার কম পাই। ফসল আবাদ করেছি, ফলন ভালো পেতে হলে সার তো দিতেই হবে। তাই বেশি দাম দিয়ে খুচরা দোকান থেকে কিনতে হয়েছে।’

জাজিরার ডুবলদিয়া এলাকার কৃষক হারুন মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্ষে, ধনিয়া, কালিজিরা, পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করেছি। বাজারে সারের দাম বেশি। প্রতিটি সার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আমরা কৃষক, আমাদের কথা কে ভাবে? সার ও শ্রমিকের দাম বেশি। ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, কিন্তু বিক্রি করতে গেলে দাম পাই না।’

জানতে চাইলে বিএডিসির ফরিদপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এস এম ইকরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। বিএডিসি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে। আর ইউরিয়া বিসিআইসি সরবরাহ করে। মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগের বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী আমরা সেই সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করি। কোনো জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের ঘাটতি থাকলে তারা মন্ত্রণালয়ে উপবরাদ্দ চাইতে পারে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে আমরা সরবরাহ দিতে পারব।’

শরীয়তপুর সার বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারের যা বরাদ্দ পাই, তা নির্ধারিত দামে বিক্রি করছি। অনেক সময় কিছু সার সরবরাহের ঘাটতি থাকে। তখন খুচরা বিক্রেতারা একটু বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করেন।’

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সারের বরাদ্দ কম আছে। কৃষক বিভিন্নভাবে ঘাটতি মোকাবিলা করছেন। বেশি দামে সার বিক্রি রোধে মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকদের অতিমাত্রায় সার ব্যবহার না করে সুষম মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইনে ফাটল, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
  • খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
  • রেহমান সোবহান এলডিসির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন
  • শরীয়তপুরে চাহিদার ৭৫ শতাংশের কম সার সরবরাহ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
  • ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
  • গ্রী গ্লোবাল বাংলাদেশের পার্টনারস মিট: কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দিকনির্দেশনা