তিন কনটেন্টে জমজমাট ওটিটি, হিসাব মিলবে ৪০০ কোটি টাকারও
Published: 3rd, April 2025 GMT
প্রতি ঈদেই দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। এবার রোজার ঈদে ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে দুটি নতুন সিরিজ ও সমানসংখ্যক সিনেমা। পাশাপাশি প্রকাশ হয়েছে একাধিক নাটক। গল্পের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি এসব কনটেন্টে ছিলেন জনপ্রিয় তারকাশিল্পীরা। এবারের ঈদে একটি সিনেমা ও দুটি সিরিজ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ঈদের আলোচিত তিনটি কনটেন্ট নিয়ে এ প্রতিবেদন।
জিম্মি
‘জিম্মি’ একটি মিস্ট্রি ড্রামা। প্রথম সিজনে পর্ব মোট ৭টি পর্ব মুক্তি পেয়েছে হইচইতে। এর গল্প ‘ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি ও সংসারে টানাটানি নিয়ে জীবন নির্বাহ করতে থাকা নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী রুনা লায়লার জীবন ওলট-পালট হয়ে যায় অফিসের স্টোররুমে মোটা অঙ্কের টাকা ভর্তি একটি বাক্স আবিষ্কার করার পর। সে কি লোভের কাছে নতি স্বীকার করবে, নাকি অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সত্য প্রকাশ করবে?’
প্রথম পর্বেই রুনার জীবনের টানাটানির সঙ্গে সঙ্গে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের প্রাপ্তিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই না পাওয়ার অভাব পূরণ করতেই টাকাভর্তি বাক্সে হাত গলায় রুনা। লোভ তখন তাকে একেবারে পেয়ে বসেছে। লোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এরপর রুনার জীবনে চলে আসে ভোগান্তি। এই পুরো গল্প আসলে চলেছে ২০২৪ সালের মধ্য-জুলাই থেকে আগস্টের শুরুর মধ্যে। ফিকশন হলেও ওই সময়কার বাংলাদেশের বাস্তবতাও ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা।
কোটা আন্দোলন, অভ্যুত্থান, পটপরিবর্তন সংক্রান্ত নানা ঘটনাকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা। এই সিরিজে রুনা লায়লা চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া আহসান। তাঁর চরিত্রের ব্যাপ্তিও বেশি ছিল, ফলে এই শিল্পীর ৭ পর্বজুড়েই ক্ষুরধার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অতীব প্রয়োজন ছিল। সেই পরীক্ষায় জয়া উতরে গেছেন ভালোভাবেই। এর বাইরে ইরেশ যাকেরের অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। শাহরিয়ার নাজিম জয়ও ছিলেন নিখুঁত। অভিনয়ের দিক থেকে প্রায় সবাই দারুণ করেছেন। ৭ পর্বের সিরিজে প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই। অনায়াসেই দেখে ফেলা যায়, ক্লান্তি জাগায় না।
হাউ সুইট
সুইট নামে এক মেয়েকে বিয়ে করতে চায় এক সন্ত্রাসী। সেই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বরিশালে পাড়ি জমায় মেয়েটি। পথে পরিচয় হয় অপূর্ব অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে। ঘটতে থাকে নানা মজার ঘটনা। জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তাসনিয়া ফারিণ অভিনীত রোমান্টিক, অ্যাকশন ও কমেডির মিশেলে ওয়েব ফিল্ম ‘হাউ সুইট’ সিনেমার গল্প। এটি নির্মাণ করেছেন কাজল আরেফিন অমি। ঈদের দিন থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে দেখা যাচ্ছে। আরও আছেন মারজুক রাসেল, আবদুল্লাহ রানা, এরফান মৃধা শিবলু, পাভেল, জিয়াউল পলাশ প্রমুখ।
মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন ২
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে চাঁদ রাতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। ‘সিন্ডিকেট’ সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র অ্যালেন স্বপনকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’। চট্টগ্রামের মাদক কারবারি থেকে স্বপন কীভাবে হয়ে ওঠে মানি লন্ডারিংয়ের হোতা, সেই গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছিল সিরিজের প্রথম সিজন। নতুন সিজনে বাড়ে স্বপনের কাজের পরিসর। স্বপনের কাছে থাকা ৪০০ কোটি টাকা কোথা থেকে এলো, শেষ পর্যন্ত এই টাকা সাদা করতে পারবে কিনা সেই উত্তর পাওয়া যায় এবারের সিরিজে। প্রথম সিজনের মতো এবারও সিরিজটি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। অ্যালেন স্বপন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। আরও আছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, জেফার রহমান, আইমন শিমলা, ফরহাদ লিমন, অর্ণব ত্রিপুরা প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অ য ল ন স বপন কর ছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
দেড়শ বছর টিকে আছে বালিকান্দি চামড়ার হাট
প্রায় দেড়শ বছর আগে মৌলভীবাজারের বালিকান্দি গ্রামে গড়ে ওঠে চামড়ার হাট। কোরবানির ঈদ এলেই মনু নদী তীরবর্তী গ্রামের এ হাটে চামড়া কেনাবেচা চলে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকের আনাগোনায় উৎসবমুখর থাকে বালিকান্দি বাজার।
মৌলভীবাজার জেলায় চামড়া কেনাবেচার একমাত্র হাট বালিকান্দি বাজার। জল ও স্থলপথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এটি দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। স্থানীয় বাজারে চা স্টলের মালিক আব্দুল করিম জানান, তারা বাপ-দাদার আলোচনায় শুনেছেন, চার-পাঁচ পুরুষ আগে এ ব্যবসার যাত্রা শুরু। এক সময় খুব জমজমাট ছিল এ হাট। তিনিও এক সময় চামড়া কেনাবেচায় জড়িত ছিলেন। ব্যবসায় লস খাওয়ায় চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এখন।
জানা যায়, ১৮৬০ থেকে ১৮৭০ সালের দিকে এ বাজারের যাত্রা। এখন এ ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। ট্যানারি মালিকরা টাকা আটকে রাখায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। চামড়া বেচাকেনা যখন জমজমাট ছিল, তখন ঈদকেন্দ্রিক বাজার সরব থাকত।
স্থানীয়রা জানান, অতীতে ঈদকেন্দ্রিক মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ শতাধিক মানুষ চামড়া কেনাবেচা করতেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাংস ছিলে লবণ লাগিয়ে বড় পুঁজির ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। বড় ব্যবসায়ীরা আগেকার দিনে ঢাকার হাজারীবাগ এবং নাটোরে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন। শওকত মেম্বার, সানুর মিয়া, আনোয়ার মিয়া, মো. তারণ, মিন্টু মিয়া, সুলেমান মিয়ারা তাদের আদি পুরুষের ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
গত ৭ জুন ঈদের দিন সন্ধ্যায় সরেজমিন বালিকান্দি চামড়ার বাজারে যেতে দেখা যায় চামড়াবোঝাই ছোট-বড় ট্রাক-পিকআপ, টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভিড়ে জ্যাম লেগে গেছে। ফাঁড়ি রাস্তায় যেতে হয়েছে বালিকান্দি বাজারে। সেখানে শামিয়ানা টানিয়ে সড়কের পাশে, কোথাও সড়কের অংশজুড়ে চলছে চামড়া থেকে মাংস সরানোর কাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ কাজ করছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী সুলেমান মিয়া জানান, ঈদের সময় বালিকান্দি বাজারে এখনও ১৫ থেকে ১৬ হাজার চামড়া কেনাবেচা হয়। এতে এক দিনে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। এবার গরুর আকারভেদে দেড়শ থেকে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চামড়া বিক্রি করতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা তাফাজ্জুল বিন ফারুকী রাজনগরী জানান, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দেড়শ-দুইশ টাকায় প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন। এতে ট্রাক ভাড়া ও অন্যান্য খরচ ওঠানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত মিয়া মেম্বার সমকালকে জানান, ব্যবসার মজা শেষ হয়ে গেছে ২০১৩ সাল থেকে। আগে ঈদ এলেই ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করে দিতেন। এখন বছরের পর বছর যাওয়ার পরও পাওনা টাকা পরিশোধ করেন না। গত বছরের পাওনা ৫৫ লাখ টাকার মাঝে এবার ঈদের আগের দিন ট্যানারি মালিক মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ বছর চার হাজারের বেশি চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রেখেছেন। আরও কিছু লবণযুক্ত চামড়া কেনার জন্য দাম-দর চলছে। তিনি জানান, এ বছর বড় গরু কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা খুব কম। ছোট চামড়ার সংখ্যাই বেশি।