বিনিয়োগের বড় খাত হতে পারে স্বাস্থ্যসেবা
Published: 10th, April 2025 GMT
দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। তাছাড়া খাতটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কারণ, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতির বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। আগামী ২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বাজার পৌঁছাতে পারে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বড় খাত হতে পারে স্বাস্থ্যসেবা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য সচিব মো.
প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিলভানা কাদের সিনহা ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই যন্ত্রাংশের বাজার তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই যন্ত্রাংশ মূলত আমদানিনির্ভর। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এসব চিকিৎসাসামগ্রী দেশে উৎপাদন সম্ভব। এদের মধ্যে রয়েছে আইসিইউ সামগ্রী, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিট, রোগীসেবা ব্যবহৃত উপকরণ।
তিনি বলেন, দেশে নানা কারণে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বাড়ছে। জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের কারণে অসংক্রামক রোগ বেড়েছে। একইসঙ্গে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এসব সমস্যা নিরসনে এখনই এই খাতে বিনিয়োগ জরুরি। স্বাস্থ্য খাত পাঁচ স্তম্ভের ওপরে দাঁড়িয়ে। সেগুলো হলো– স্বাস্থ্য সেবা, ওষুধশিল্প, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্র, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা এবং মেডিকেল বায়োটেকনোলজি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে এ দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত এগিয়ে যাচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এবং সরকারি প্রণোদনা এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এই খাতে করমুক্ত সুবিধার কারণে স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। রোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তির উন্নয়নে বিদেশি টেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে এই খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম খাত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যেখানে ২০১০ সাল থেকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বার্ষিক যৌগিক বৃদ্ধির হার (সিএজিআর) দেখা গেছে এবং সরাসরি প্রায় ৩ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে যুক্ত রয়েছেন।’
চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’-এ গতকাল স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের উপস্থিতিতে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকি, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক এহতিয়াজ করিম এবং দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মাইকেল জনাথন গেইল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের মধ্যে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ মাসেই সাইবার সেফটি অধ্যাদেশের গেজেট
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ বলেছেন, সরকার চলতি মাসের শেষ নাগাদ ‘সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ’ গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। বিনিয়োগ সম্মেলনে ‘নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে ডিজিটাল অর্থনীতি’ শীর্ষক উপস্থাপনায় তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটিব্যাংক এনএর কান্ট্রি অফিসার মো. মইনুল হক।
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমরা সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা সব উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছি। তাই আশা করছি, চলতি মাসের শেষ নাগাদ আমরা একটি নতুন সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে পারব।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যানসার ঠেকাতে খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপনপদ্ধতি পরিবর্তনের তাগিদ
‘খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপনপদ্ধতিতে পরিবর্তন না আনলে ক্যানসার ঠেকানো কঠিন।’ আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে অনকোলজি ক্লাব আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কংগ্রেস ২০২৫–এর উদ্বোধনী দিনে বক্তারা এ কথা বলেন।
এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১৬টি দেশের ৩১ জন খ্যাতনামা ক্যানসার–বিশেষজ্ঞসহ মোট ১ হাজার ২০০ জন ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ, ক্যানসার–সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন।
খাদ্যাভ্যাস আর অনিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের জন্যই দেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর পেছনে খাদ্যে ভেজাল আর বায়ুদূষণকেও দুষলেন দেশ–বিদেশের স্বনামধন্য ক্যানসার–বিশেষজ্ঞরা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনকোলজি ক্লাব বাংলাদেশ ও ক্যানসার কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ হাই বলেন, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যানসার রোগীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আশঙ্কাজনক। দেশে বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত, যার অধিকাংশই চিকিৎসার আওতার বাইরে।
দেশে ক্যানসার চিকিৎসার আধুনিকায়নে মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবল তৈরি করাই ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে ডা. হাই বলেন, ‘ক্যানসার জয় করতে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান ক্যানসার রোগী ও তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
প্রতি জেলায় ক্যানসার ইউনিট গড়ে তোলার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেন ডা. হাই। তরুণ চিকিৎসকদের ক্যানসার চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বর্ষীয়ান এই ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ।
একাডেমিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত রয়েছে ইতালির বলোনিয়া ইউনিভার্সিটি, সিংহেলথ সিঙ্গাপুর এবং গ্লোবাল হেলথ ক্যাটালিস্ট। এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মডার্ন হাসপাতাল, সেন্ট বার্থোলোমিউ’স হাসপাতাল, কেএইচসিসি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং একাডেমি, হুইপস ক্রস ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউপিএমসি হিলম্যান ক্যানসার সেন্টার, ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ স্কুল অব মেডিসিন, পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বিশ্বের অন্যান্য খ্যাতনামা ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক ও গবেষকেরা।
অনকোলজি ক্লাব বাংলাদেশ ও ক্যানসার কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ হাই এবং জেনারেল সেক্রেটারি ডা. এ এম এম শরীফুল আলমের নেতৃত্বে দেশের প্রখ্যাত ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন একাডেমিক সেশনে।