যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর: খনিজ চুক্তির প্রথম ধাপ, বলল কিয়েভ
Published: 18th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সমঝোতা স্মারককে একটি চূড়ান্ত খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার প্রাথমিক ধাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ চুক্তির প্রস্তাবটি এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দুই দেশের প্রস্তুতি থাকলেও ট্রাম্প এবং ইউক্রেনীয় নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে হট্টগোল হওয়ার পর তা বিলম্বিত হয়।
বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের মুখ্য উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের মার্কিন সহযোগীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত।’
সভিরিদেঙ্কো আরও বলেন, বৃহস্পতিবারের সমঝোতা স্মারকটি একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর ও ইউক্রেনকে পুনর্গঠনের জন্য একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে।
ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্য হট্টগোল হওয়ার পর কিয়েভের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, খনিজ চুক্তিটি সেই প্রচেষ্টার অংশ।
ট্রাম্প বলেছেন, মূল চুক্তিটি আগামী সপ্তাহে স্বাক্ষর হতে পারে। তবে চুক্তিটি কবে নাগাদ স্বাক্ষর হতে পারে, এ ব্যাপারে ইউক্রেনীয় পক্ষ কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন ও আরও বিস্তৃত একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর গত সপ্তাহের শেষের দিকে আলোচনার জন্য ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন সফর করে। প্রাথমিকভাবে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে দুই পক্ষ সম্মত হয়।
ট্রাম্প এমন একটি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর বিশেষাধিকার দেবে। একে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনের মেয়াদে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তার প্রতিদান হিসেবে বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
ওভাল অফিসে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমরা এখনো বিস্তারিত নিয়ে কাজ করছি।’ আগামী শুক্রবার নাগাদ চুক্তি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার চুক্তি স্বাক্ষরের পর কিয়েভে সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি একটি সমঝোতা স্মারক। আমাদের উদ্দেশ্যগুলো ইতিবাচক ও গঠনমূলক।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, মার্কিন পক্ষ থেকে পূর্ণ চুক্তির আগে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র প রস ত হওয় র প র জন য সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।