যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সমঝোতা স্মারককে একটি চূড়ান্ত খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার প্রাথমিক ধাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ চুক্তির প্রস্তাবটি এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দুই দেশের প্রস্তুতি থাকলেও ট্রাম্প এবং ইউক্রেনীয় নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে হট্টগোল হওয়ার পর তা বিলম্বিত হয়।

বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের মুখ্য উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের মার্কিন সহযোগীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত।’

সভিরিদেঙ্কো আরও বলেন, বৃহস্পতিবারের সমঝোতা স্মারকটি একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর ও ইউক্রেনকে পুনর্গঠনের জন্য একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে।

ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্য হট্টগোল হওয়ার পর কিয়েভের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, খনিজ চুক্তিটি সেই প্রচেষ্টার অংশ।

ট্রাম্প বলেছেন, মূল চুক্তিটি আগামী সপ্তাহে স্বাক্ষর হতে পারে। তবে চুক্তিটি কবে নাগাদ স্বাক্ষর হতে পারে, এ ব্যাপারে ইউক্রেনীয় পক্ষ কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র নতুন ও আরও বিস্তৃত একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর গত সপ্তাহের শেষের দিকে আলোচনার জন্য ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন সফর করে। প্রাথমিকভাবে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে দুই পক্ষ সম্মত হয়।

ট্রাম্প এমন একটি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর বিশেষাধিকার দেবে। একে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনের মেয়াদে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তার প্রতিদান হিসেবে বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।

ওভাল অফিসে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমরা এখনো বিস্তারিত নিয়ে কাজ করছি।’ আগামী শুক্রবার নাগাদ চুক্তি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার চুক্তি স্বাক্ষরের পর কিয়েভে সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি একটি সমঝোতা স্মারক। আমাদের উদ্দেশ্যগুলো ইতিবাচক ও গঠনমূলক।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, মার্কিন পক্ষ থেকে পূর্ণ চুক্তির আগে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র প রস ত হওয় র প র জন য সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ