ঢাকায় আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল ফিরে গেছে। কিন্তু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতিশ্রুত ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সুরাহা হয়নি। বাংলাদেশ এই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেয়েছিল গত বছরের জুন মাসে। চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ ডলার ছাড় হওয়ার কথা ছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সে প্রস্তাব ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের পর্ষদে ওঠেনি। পিছিয়ে চলে যায় মার্চে। ফলে দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড়ের আলোচনা শুরু হয়। সে আলোচনা এখন ঢাকা হয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছাল।
আইএমএফ মিশন গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ার আগে বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনা চলবে। পরবর্তী আলোচনা হবে এ মাসেই ওয়াশিংটনে সংস্থার বসন্তকালীন বৈঠকে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলে মোট ১৩০ কোটি ডলার আপাতত ঝুলে থাকল।
কেন আইএমএফ মিশন এই অর্থ ছাড়ের আগে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি, সে বিষয়ে তাদের বিবৃতিতে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, আলোচনা চলবে। তবে মিশনপ্রধান প্রেস ব্রিফিংয়ে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর মতে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার এখনই ভালো সময়। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংক এবং খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের দরের পার্থক্য কমে এসেছে।
বলা যায়, এবারের আলোচনা চূড়ান্ত রূপ নেয়নি এই বিনিময় হার নিয়ে মতানৈক্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সময় নিতে চাচ্ছে। কিন্তু আইএমএফ চায় শিগগিরই। মিশনের সঙ্গে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জুন পর্যন্ত সময় নিতে চাচ্ছে। এ মুহূর্তে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের দর হঠাৎ বেড়ে যায় কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তাদের। আর ডলারের দর বাড়লে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি উদ্বেগের জায়গা হলো, বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে এখনও ঘাটতি আছে। সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ঘাটতি ছিল ১২৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স ভালো থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললে এই ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে চাচ্ছে না।
গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাংকগুলো ডলারের একটি আন্তঃব্যাংক দর নির্ধারণ করত। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে দেওয়া হয়। এতে একটি মধ্যবর্তী রেট থাকে, যা এখন এক ডলার সমান ১১৯ টাকা। এই দর এর চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। সেই হিসাবে ডলারের দর এখন সর্বোচ্চ ১২২ টাকা হওয়ার কথা। আইএমএফের প্রস্তাব, বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ থেকে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা। এই প্রস্তাবের প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তারা এখন এ বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.
আইএমএফ মূলত চারটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রাজস্ব খাতে সংস্কার, ভর্তুকি কমানো এবং আর্থিক খাত শক্তিশালী করা। নতুন ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকার রাজি। তবে আগের ভর্তুকির বকেয়া পরিশোধের চাপ থাকায় এ খাতে অর্থ খরচ কমেনি। পরিস্থিতি আইএমএফকে বোঝানো হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলার বিষয়ে কড়াকড়ি করায় লুকিয়ে থাকা খেলাপি ঋণ বেরিয়ে আসছে। এ কারণে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে গেছে। আইএমএফ চায়, ২০২৬ সালে সরকারি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হোক। সরকারি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এখন ৪০ শতাংশের বেশি। বেসরকারি ব্যাংক খাতে ১৫ শতাংশের বেশি।
করের ক্ষেত্রে সংস্কার নাকি লক্ষ্যমাত্রা বড় বিষয়
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আইএমএফের সঙ্গে এ ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। মোট ঋণ দেওয়ার কথা ৪৭০ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ছাড় হয়েছে ২৩০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ গত ডিসেম্বরে আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চায়। আইএমএফ বাড়তি ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও দিয়েছিল। আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত প্রতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। কিন্তু গত অর্থবছরে উল্টো এ অনুপাত কমে যায়।
কর আদায় বাড়াতে আইএমএফের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় কমানোর শর্ত রয়েছে। এনবিআর এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে নিয়েছে। আগামী বাজেটেও নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে কর নীতি এবং কর ব্যবস্থাপনা আলাদা করার সুপারিশ রয়েছে আইএমএফের। আইএমএফ মিশনের ঢাকায় অবস্থানকালে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আদায়ে আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার পিছিয়ে ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা, যা অর্জন সম্ভব নয়। জুলাই আন্দোলনের প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে আমদানি শুল্ক কমানো ও সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি থাকায় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। এসব পরিস্থিতি আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার বাস্তব পরিস্থিতি রয়েছে। আইএমএফ যদি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকে, তবে তা যুক্তিসংগত হবে না। অন্যদিকে রাজস্ব খাতে সংস্কার ঠিকমতো না এগোলে, সেই ক্ষেত্রে আইএমএফের তাগিদও যুক্তিসংগত। কেননা, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
গত ৯ জানুয়ারি সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ককর বাড়ায়, যার মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করার কথা ছিল। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে এ সিদ্ধান্তে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এ কারণে কয়েক দিন পর বেশি কর আদায় হতে পারত, এমন ১০টি পণ্যসেবায় বাড়তি শুল্ককর প্রত্যাহার করা হয়।
ঋণ আটকে গেলে কী হবে
আইএমএফের ঋণের কিস্তি কোনো কারণে আটকে গেলে তার প্রভাব হবে বহুমুখী। কেননা, এটি শুধু অর্থের বিষয় নয়। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে সার্বিক উন্নয়ন সহযোগিতা এবং দেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ মিশন সমঝোতার ঘোষণা দেয়নি বলেই মনে করা উচিত হবে না যে, কিস্তি আটকে যেতে পারে। তবে সমঝোতা হলে ভালো হতো। এখন ওয়াশিংটনে কী আলোচনা হয়, তা দেখার বিষয়। তিনি মনে করেন, আইএমএফের ঋণ কোনো কারণে স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেলে অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া মুডিস, ফিচসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলোর রিপোর্টেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করেসপন্ডিং ব্যাংকিংয়ে খরচ বেড়ে যেতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আইএমএফ র ঋণ ব জ র র ওপর পর স থ ত প রস ত সমঝ ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।