বাস্তব চরিত্রকে এবার পর্দায় ‘জীবন্ত’ করছেন বলিউড তারকা ইমরান হাশমি। তেজসপ্রভা বিজয় দেওস্কর পরিচালিত ‘গ্রাউন্ড জিরো’ ছবিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ড্যান্ট নরেন্দ্রনাথ ধর দুবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইমরান। ২০০১ সালে নয়াদিল্লির লোকসভা কেন্দ্র ও গুজরাটের অক্ষরধাম মন্দিরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক অপারেশনকে ঘিরে এ ছবির কাহিনি। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ছবিটির ট্রেলার। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে ইমরান এ ছবিকে ঘিরে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।

ইমরান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আসল সত্যি প্রকৃত ঘটনার চেয়ে ভয়ংকর—এই প্রবাদ এ ছবির গল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (নরেন্দ্রনাথ ধর) দুবেজির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে। ওনার চরিত্রেই আমি অভিনয় করছি। আমি ওনাকে বলেছিলাম যে এই গল্প ফিল্মের চেয়ে বেশি ফিল্মি। ২০০৩ সালে অফিসাররা এই অপারেশন যেভাবে পরিকল্পনা করে বাস্তবায়িত করেছিলেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য ও অভূতপূর্ব।’

‘গ্রাউন্ড জিরো’ সিনেমা ইমরান। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না

ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য রোগ। কিন্তু প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। দেশে ডায়াবেটিক রোগী এখন ১ কোটি ৩৮ লাখ। সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। পরিস্থিতি পাল্টাতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

গতকাল সোমবার প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ডায়াবেটিস আমার, দায়িত্বও আমার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন। কংগ্রেসিয়া ও প্রথম আলো যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। আয়োজনে সহায়তা করে হেলদি লিভিং ট্রাস্ট। ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস এখন মহামারির পর্যায়ে আছে। এই মহামারির কথা প্রথম বলে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস সোসাইটি। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং তারপর জাতিসংঘ মহামারির এই সত্য মেনে নেয়। এই সত্য মেনে নেওয়ার পেছনে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ভূমিকা ছিল।

প্রবীণ এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, সচেতন হওয়ার জন্য মানুষকে বলা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ কথা শুনছেন না। কীভাবে বললে মানুষ কথা শুনবেন, সে ব্যাপারে চিকিৎসকদের মনোযোগী হতে হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইমামদের কথা মানুষ শোনেন, মানেন।

বিশিষ্ট ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও বারডেম একাডেমির পরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশে এখন ১ কোটি ৩৮ লাখ ডায়াবেটিসের রোগী আছে। ২০৩৫ সালে রোগী বেড়ে ২ কোটি ২০ লাখে দাঁড়াবে। অন্য একটি হিসাব বলছে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ২৫ শতাংশের এই রোগটি আছে। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১২ কোটি হলে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের শর্করা নিয়ন্ত্রণে নেই। ফারুক পাঠান আরও বলেন, ডায়াবেটিসের কারণ বহু মানুষ কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন। মানুষের কর্মজীবন হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনে, দেশের অর্থনীতিতে।

ডায়াবেটিসে ওষুধ বা ইনসুলিনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি ও বারডেমের এন্ডোক্রাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারিয়া আফসানা। তিনি বলেন, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা কমাতে ভূমিকা রাখে ওষুধ ও ইনসুলিন। ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে শর্করা বেশি থাকা এবং ইনসুলিন কম থাকা ঝুঁকির। কোন ওষুধ কাকে দিতে হবে, কেন দিতে হবে, সেটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিবেচনার বিষয়। ওষুধ ও ইনসুলিন জীবন রক্ষা করে।

জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এবং ডায়াবেটিক রোগীর জীবন স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহজাদা সেলিম। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ঝুঁকি বাড়ে খাদ্যে শর্করা বেশি, আমিষ কম থাকলে। ঝুঁকি বাড়ে দিনে তিনবার, প্রতিবারে বেশি খেলে। খেতে হবে ছয়বার, প্রতিবার কম কম করে। একপর্যায়ে ওষুধ ছাড়াই ভালো থাকা সম্ভব হয় যদি আদর্শ খাবার তালিকা অনুসরণ করে খাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, চাপমুক্ত জীবন, আনন্দময় জীবন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুদ্দিন বলেন, শারীরিক গঠনের কারণে এশিয়ার মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। যাঁরা স্থূল, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্‌রোগ আছে, যাঁরা কায়িক শ্রম কম করেন, যাঁদের ঘাড় ও বগলের কাছে কালো রং আছে, তাঁদের ঝুঁকি আছে বলে ধরা যায়। যাঁদের ওজন কমছে, পানি পিপাসা বেশি থাকে তাঁদেরও ঝুঁকি বেশি। রক্তে শর্করা পরিমাপ করেও বলা যায় কার ঝুঁকি বেশি বা কে ডায়াবেটিক রোগী। তিনি বলেন, যাঁদের বয়স ২০ বছরের বেশি, তাঁদের প্রতিবছর একবার করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।

অন্য রোগের ঝুঁকি বাড়ে

গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, ডায়াবেটিস অন্য রোগের ঝাঁকি বাড়ায়, জটিলতাও বাড়ায়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ডায়াবেটিক রোগীদের হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি। ডায়াবেটিস শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতি করে, দুর্বল করে। ওষুধ রোগ নিবৃত্তিতে, নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ওষুধ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীর জীবন অর্ধেক। তিনি বলেন, ‘ডায়েট, ডিসিপ্লিন ও ড্রাগ গুরুত্বপূর্ণ।’

ডায়াবেটিস কীভাবে কিডনির ক্ষতি করে, কেন করে, তার বর্ণনা দেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, কিডনি রোগীদের ৪০ শতাংশের ইতিহাস ডায়াবেটিসের। কিডনি রোগীরা অনেক দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসেন। ৯০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার পর ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন দরকার হয়। ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ ৮০ শতাংশ রোগী বহন করতে পারে না।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সমস্যা ও ঝুঁকি নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এখন বেশি বয়সে অর্থাৎ ৩৫ বা ৪০ বা ৪৫ বছর বয়সে অনেকে মা হতে চাচ্ছেন। এ বয়সে ডায়াবেটিসের এমনিতেই ঝুঁকি থাকে, গর্ভধারণ সেই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভপাত, অপরিণত শিশু জন্ম, কম ওজনের শিশু জন্মের ঝুঁকি বাড়ে। প্রসবকালে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে অর্থাৎ মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

চোখের ক্ষতি করে ডায়াবেটিস। এ ব্যাপারে আলোচনায় অংশ নিয়ে ভিশন আই হসপিটালের কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ডায়াবেটিক রোগীদের চোখ পরীক্ষার কথা বলেন অনেকেই। বাস্তবে দরকার রেটিনা পরীক্ষার। তিনি চিকিৎসকদের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলেও মন্তব্য করেন।

হেলদি লিভিং ট্রাস্ট, কংগ্রেসিয়া ও বেশ কয়েকজন ডায়াবেটিস চিকিৎসক ২০১৯ সাল থেকে ডায়াবেটিস মেলার আয়োজন করে আসছে। মেলার প্রধান সমন্বয়ক ও হেলদি লিভিং ট্রাস্টের মহাসচিব মো. ফজলে রাব্বী বলেন, মানুষকে সচেতন করার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হলো প্রথম আলোয় গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে।

ডায়াবেটিস মেলার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, রোল মডেল বা আদর্শ ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। সচেতনতা বাড়াতে এমন আদর্শ ব্যক্তি পাওয়া কঠিন। এমন গণমাধ্যম পাওয়াও দুষ্কর। এই বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক তানজিনা হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ