ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। খবর আল জাজিরার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দিনভর হামলা চালিয়ে আরও ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে এবং লেবাননে আরও দুজনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে গাজার আল-মাওয়াসির তথাকথিত “নিরাপদ অঞ্চলেও” হামলা করেছে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২০১ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১৪৫ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল অবর দ ধ মন ত র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
“গণহত্যা সমর্থনকারী শিক্ষক থেকে আমরা শিক্ষা নিতে চাই না”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেছেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ৫-৭টি ব্যাচ চলমান থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন, যা শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এক্ষেত্রে শাহবাগকে প্রতিষ্ঠিত করে, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, গণহত্যা সমর্থনকারী শিক্ষক থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিতে চাই না। অবশ্যই যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।”
শনিবার (১৮ অক্টোবর) যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ’
‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’
মাহমুদুল হাসান বলেন, “ইবি শিক্ষার্থী সাজিদকে হত্যার ৯৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই নয়, ইন্টেরিম সরকারেরও ব্যর্থতা। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”
ছাত্র সংসদ নিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসন আইনের অজুহাত দেখিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করছে না। অথচ বেগম রোকেয়া ও জগন্নাথের মতো নবীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের আইন পাস করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ১৫ তারিখের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিলেও ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো রকম টালবাহানা করলে শিক্ষার্থীরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন হলগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, “২০১৮ সালে টেন্ডার হওয়া হলের নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালেও শেষ হয়নি, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকে তীব্রতর করছে। চলতি বছরের মধ্যেই সব হলের নির্মাণ কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর ও মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করতে হবে।”
মাহমুদুল হাসান বলেন, “একটি নির্দিষ্ট মহল আবারো আওয়ামী লীগের শাসনামলের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যেখানে প্রাধ্যক্ষরাও সহযোগিতা করছেন। কোনোভাবেই হলগুলোকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতে দেওয়া হবে না। যদি এমন কোনো চেষ্টা করা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে।”
সমাবেশে অনতিবিলম্বে সাজিদ হত্যার বিচার, ইকসুর নীতিমালা ও রোডম্যাপ প্রদান, ডিজিটাল পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ, এ বছরেই নির্মাণাধীন হলসমূহ চালু এবং মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় সংগঠনটি। এছাড়া সাতদিনের মধ্যে পেমেন্ট সিস্টেম ডিজিটালাইজেশনে পদক্ষেপে না নিলে প্রশাসন অচল করে দেওয়া হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটি।
এর আগে, দুপুর দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘সাজিদ মৃত্যুর তদন্ত, দ্রুত করো, করতে হবে’, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করো, শিক্ষার্থীদের রক্ষা করো’, ‘হলগুলো চালু করো, ভোগান্তি দূর করো’, ‘ইকসুর তারিখ ঘোষণা করো, ছাত্র সংসদ নিশ্চিত করো’, ‘বিশ্ব যখন আধুনিক, ইবি কেন যান্ত্রিক’, ‘ডিজিটাল পেমেন্ট চালু হোক, ভোগান্তি দূর হোক’, ‘নিয়োগ হবে স্বচ্ছ, শিক্ষক হবে দক্ষ’, ‘মেধা আর স্বচ্ছতা, নিয়োগে চাই ন্যায্যতা’, ‘আবু সাইদের বাংলায়, নিয়োগ বাণিজ্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে সংগঠনের শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী, অফিস সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাফি, অর্থ সম্পাদক শেখ আল আমিন, প্রচার সম্পাদক আবসার নবী হামজা, দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক হাসানুল বান্না অলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী