ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষই প্রতিশোধমূলক পাল্টপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্রুত কতগুলো সিদ্ধান্ত জানায় দিল্লি। এই তালিকায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বন্ধ এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে।

জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানানো হয়েছে, ভারত আর পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এছাড়া ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।

ভারতের দিক থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের পরপরই অবশ্য পাকিস্তানের ভেতরে সিমলা চুক্তি স্থগিতের দাবি ওঠে।

সিমলা চুক্তি স্থগিতের দাবি

পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে লিখেছেন, পাকিস্তানে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত যদি বিশ্বব্যাংকের অধীন ‘সিন্ধু জলচুক্তি’কে বিদায় জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তবে পাকিস্তানেরও সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসা উচিত, যার মধ্যস্থতায় কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা অন্তর্ভুক্ত নেই।

পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের সাবেক ‘প্রধানমন্ত্রী’ রাজা মহম্মদ ফারুক হায়দার খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জবাবে সিমলা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বিশেষত, কাশ্মীরসংক্রান্ত বিষয়ে।

পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেশটির অনেক নাগরিক মনে করছেন, এতে তাঁরা উপকৃত হবেন।

এর পেছনে তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন, সিমলা চুক্তি পাকিস্তানকে কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকীকরণ থেকে বিরত রেখেছে। ওই চুক্তি স্থগিত হলে পাকিস্তান কোনো রকম কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াই আন্তর্জাতিক ফোরামে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করতে পারবে।

তবে সিমলা চুক্তির অধীন থাকা অবস্থাতেও অবশ্য পাকিস্তান তা করেছে। কিন্তু পাকিস্তানি বিশ্লেষকদের মতে, সিমলা চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যু ‘আরও জোরগলায়’ তুলে ধরতে পারবে পাকিস্তান।

সিমলা চুক্তি কী?

সিমলা চুক্তি এমন একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল যেটিকে দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতা’ অবসানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পর ১৯৭২ সালের জুলাইতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি।

তার মাস ছয়েক আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৫ হাজার সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনীসহ ৭৩ হাজার যুদ্ধবন্দি ভারতের কারাগারে ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমাইল এলাকাও ভারতের দখলে ছিল।

এই পটভূমিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমলায় বৈঠক করছিলেন। সেখানে যে সমঝোতা হয়, তার নাম সিমলা চুক্তি।

চুক্তির দলিল স্বাক্ষরের তারিখ রেকর্ড করা হয় ১৯৭২ সালের ২ জুলাই। তবে বাস্তবে ৩ জুলাই সকালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি।

দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতা’ অবসানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সিমলা চুক্তির বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল।

সিমলা চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করবে।

সিমলা চুক্তির অধীন দুই দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) গঠিত হয়। সেই সময় ভারত-পাকিস্তান দুই পক্ষই এই নিয়ন্ত্রণরেখাকে সম্মান জানাতে রাজি হয়। তারা এ বিষয়েও সম্মত হয়েছিল যে দুই পক্ষই কোনোরকম একতরফা সিদ্ধান্ত নেবে না।

নিয়ন্ত্রণরেখাকে স্কেল হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান।

কিন্তু দুই দেশই একে ওপরের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণরেখাকে ‘না মানার’ অভিযোগ তুলে এসেছে।

আরও পড়ুনসিমলা চুক্তির পথে১৪ ডিসেম্বর ২০২২

‘মৃত চুক্তি’

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সারিন পাকিস্তানবিষয়ক পর্যবেক্ষক। তাঁর মতে, সিমলা চুক্তি থেকে পাকিস্তানের বেরিয়ে যাওয়া মোটেও ভারতের জন্য কোনো ধাক্কা নয়।

সুশান্ত সারিন বলেন, ‘কাশ্মীর ইস্যুতে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বরং এটা ভারতকে সাহায্য করবে। মজার ব্যাপার হলো, পাকিস্তান অনেক আগেই সিমলা চুক্তি থেকে সরে এসেছে। পাকিস্তান কখনো এই চুক্তিতে অটল থাকেনি। পাকিস্তান যদি এই চুক্তি মেনে নিত, তাহলে তারা কারগিলের যুদ্ধ করত না। প্রতিদিন আমরা সীমান্তের ওপার থেকে গুলি চালাই না এবং সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ও দিই না। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যদি মৃত চুক্তির সৎকার করতে চায়, তাহলে তা করুক।’

কাশ্মীরি গবেষক ও আইনবিদ তথা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মির্জা সায়ব বেগ অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, সিমলা চুক্তি শুধু কার্যকর নয়, দুই স্বাক্ষরকারী দেশও তা বাস্তবায়ন করতেও বাধ্য। তিনি বলেন, ‘সিমলা চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ভারতকে জবাবদিহি করাতে বা এই নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো দাবি না তুলতে পারাটা পাকিস্তানের অযোগ্যতা। সিমলা চুক্তিতে একতরফা সিদ্ধান্তের কোনো ধারণা নেই।

মির্জা সায়ব বেগ বলেন, পাকিস্তান তাদের অধিকারের অধীন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত) ভারতের বিরুদ্ধে ওই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে মামলা করতে চেয়েছিল; কিন্তু পাকিস্তান কেন এমনটা করেনি সেটি তারাই জানে।

ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ত রণর খ এই চ ক ত হয় ছ ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৫

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরে ঝটিকা মিছিল করেছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে তাঁরা চৌমুহনী রেললাইন সড়ক থেকে মিছিল বের করেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল শিহাব নিজের ফেসবুকে ঝটিকা মিছিলটি লাইভ প্রচার করেন। পরে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ মিছিলে অংশগ্রহণকারী পাঁচজন নেতা-কর্মীকে আটক করে।

ফেসবুকে প্রচার করা ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেলে পৌনে চারটার দিকে উপজেলার চৌমুহনী রেলস্টেশন এলাকা থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি রেললাইনের পশ্চিম পাশের সড়ক দিয়ে রেলগেট হয়ে শহরের ব্যস্ততম ফেনী-চৌমুহনী মহাসড়কে ওঠে। মিছিলকারীদের হাতে ‘হটাও ইউনূস, বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ লেখা ব্যানার ছিল। ২৫ থেকে ৩০ জন কিশোর ও তরুণ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি মহাসড়কের প্রায় ২০০ গজ অতিক্রম করে শহরের হাসান সড়কের মাথায় গিয়ে শেষ হয়।

জানতে চাইলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান লিটন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মিছিলকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। তিনি নিজেই অভিযানে ব্যস্ত আছেন। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাতটা) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সবাই চিহ্নিত। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ